যা থাকছে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে
বাংলাদেশ-চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল স্বাধীনতারও আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৫২ সালে ঐতিহাসিক চীন সফরের মাধ্যমে। যে সময় চীনের তৎকালীন নেতা মাও সে-তুংয়ের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর দেখা হয়েছিল। চীন ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, যার ধারাবাহিকতায় দুই দেশ পারস্পরিক সহযোগিতা করে আসছে।
চীনের প্রিমিয়ার অব দ্য স্টেট কাউন্সিল লি ছিয়াংয়ের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৮ থেকে ১১ জুলাই চীন সফরে যাচ্ছেন। টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর চীনে তার প্রথম সফরটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এ সফরে দুদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাত, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল ইকোনমি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহায়তা, ষষ্ঠ ও নবম বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ নির্মাণ, বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পিপল টু পিপল কানেকটিভিটি প্রভৃতি বিষয়সহ ২০ থেকে ২২টি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরকালে অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব, অন্য সচিবরাসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা সফরসঙ্গী হবেন।
আরও পড়ুন
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, আর্থিক সহায়তা এবং বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ চীনের সহায়তা কামনা করবে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ চীনের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ চীনে রপ্তানি করে ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আর আমদানি করে ১৩ বিলিয়ন ডলারের। এ বাণিজ্য ঘাটতি দূর করতে সফরে উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ঘাটতি মেটাতে আরও বেশি করে যেন বাংলাদেশের কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য পণ্য চীনে রপ্তানি করার ক্ষেত্রে নন-ট্যারিফ বাধাগুলো তুলে নেওয়া হয় এবং তাদের আমদানিকারকদের যেন উৎসাহিত করা হয় সেটি নিয়ে আলোচনা হবে। চীন সফরে যাওয়া বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল যেন সেখানকার আমদানিকারকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারে সেটি গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হবে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী সোমবার (৮ জুলাই) বেলা ১১টায় বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন এবং একই দিন চীনের স্থানীয় সময় বিকেল ৬টায় বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে এবং অভ্যর্থনা জানানো হবে।
আগামী ৯ জুলাই সকালে প্রধানমন্ত্রী এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিন লিকুনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। একই দিন প্রধানমন্ত্রী সাং-গ্রি-লা সার্কেলে অনুষ্ঠেয় ‘সামিট অন ট্রেড, বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ বিটউইন বাংলাদেশ অ্যান্ড চায়না’ শীর্ষক সম্মেলনে অংশ নেবেন। সম্মেলনটিতে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ থেকে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল চীন সফর করবেন।
আরও পড়ুন
ওইদিন দুপুরে প্রধানমন্ত্রী চায়নিজ পিপল'স পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্স-এর ১৪ তম জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াং হানিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী ঐতিহ্যবাহী তিয়েনআমেন স্কয়ারে শ্রদ্ধা জানাবেন। রাতে তিনি বেইজিংস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেবেন।
সফরের তৃতীয় দিন ১০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল অব দ্য পিপল-এ চীনের প্রিমিয়ার অব দ্য স্টেট কাউন্সিল লি ছিয়াংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সাক্ষাতের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। একই স্থানে প্রধানমন্ত্রী এবং চীনের প্রিমিয়ার অব দ্য স্টেট কাউন্সিল দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলসহ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
এরপর দুই দেশের সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে প্রায় ২০টির মতো সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে এবং কিছু প্রকল্প উদ্বোধনের ঘোষণা দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত ব্যাংকুয়েটের (ভোজের) মাধ্যমে গ্রেট হলে সাক্ষাতের আনুষ্ঠিকতা সম্পন্ন হবে।
বিকেলে প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল অব দ্য পিপল-এ চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রীর এ সফর উপলক্ষে বাংলাদেশ ও চীন একটি যৌথ বিবৃতি দেবে। সফর শেষে ১১ জুলাই বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রী চীন থেকে দেশে ফিরবেন।
আরও পড়ুন
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ২০১৬ সালে শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ‘কৌশলগত সহযোগিতার অংশীদারত্বে’ উন্নীত হয়। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীকে চীনের পক্ষ হতে সরকারি সফরের জন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হয়। চীন বাংলাদেশের অবকাঠামোগত এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একজন গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
তিনি বলেন, ৮ থেকে ১১ জুলাই সফরকালে প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্ট, প্রিমিয়ার অব দ্য স্টেট কাউন্সিল, সিপিপিসিসির জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। পাশাপাশি ২০ থেকে ২২টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হবে।
আইএইচআর/এমকেআর