শেখ হাসিনাকে চিঠি ও উপহার বাবা হারানো জাপানি কন্যার

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত জাপানি নাগরিক হিরোশি তানাকার মেয়ে আতসুকো তানাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ‘ইকেবানা’ উপহার পাঠিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে এ উপহার গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপহার এবং আতসুকোর লেখা একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রীর হাতে পৌঁছে দেন।

‘ইকেবানা’ হলো ফুল, পাতা, শাখা-প্রশাখার নান্দনিক ও শৈল্পিক উপস্থাপন। সৌন্দর্যের পাশাপাশি জাপানিজ এ শিল্পকলার পেছনে লুকিয়ে থাকে দার্শনিক ভাবধারা।

গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে আতসুকো তানাকা লেখেন, এ উপহারটি (ইকেবানা) তার মা নিজের হাতে তৈরি করেছেন। এটি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তার কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসার প্রতীক।

উপহারের ফুল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য প্রশান্তি নিয়ে আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিসানে সন্ত্রাসী হামলায় ১৮ বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ৯ জন ইতালির, ৭ জন জাপানের, একজন ভারতীয় এবং ৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক ছিলেন। তিন বাংলাদেশির একজনের দ্বৈত নাগরিকত্ব ছিল। সন্ত্রাসীদের গুলিতে সেদিন দুই পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হয়েছিলেন।

• আরও পড়ুন
  জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রয়েছে ঝুঁকির শঙ্কা
  হলি আর্টিসানে হামলা বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে

জাপানি নাগরিকের মধ্যে ৬ জনই ছিলেন ঢাকার মেট্রোরেল প্রকল্পের পরামর্শক। আতসুকো তানাকার বাবা হিরোশি তানাকা তাদেরই একজন।

এছাড়া হলি আর্টিসানে জিম্মিদের উদ্ধারে পরিচালিত কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হন।

আতসুকো তানাকা তার চিঠির শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য কামনা করেন এবং চলতি বছরের শুরুতে টানা চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় আন্তরিক অভিনন্দন জানান।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার বিজয় প্রসঙ্গে আতসুকো বলেন, আপনার এ অর্জন আপনার নেতৃত্ব এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার ‘ভিশনের’ ওপর বাংলাদেশের জনগণের আস্থার প্রমাণ।

গত ৩ জুলাই ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় যোগ দিতে ঢাকায় এসেছিলেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন বাবা হারানো এই জাপানি কন্যা।

২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর টোকিও সফরের সময় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আতসুকো তানাকা। প্রধানমন্ত্রী তাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন বলেও চিঠিতে স্মরণ করেন তিনি।

আতসুকো বলেন, আপনি (শেখ হাসিনা) যে চিঠি পাঠিয়েছেন সে চিঠি আমার হৃদয়ের ক্ষত নিবারণের অনেক বড় উৎস। বলেন, আমার মা একজন পেশাদার শিল্পী এবং তিনি নিজের হাতে এটি (ইকেবানা) বানিয়েছেন।

ফুলের এ উপহারটি প্রধানমন্ত্রীর জন্য প্রশান্তি দেবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এ উপহারটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তার কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসার প্রতীক (টোকেন)। চিঠিতে বাংলাদেশের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি কামনা করেন তিনি।

• আরও পড়ুন
  দেশে এখন জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে: এসবি প্রধান
  স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে

আতসুকো বাংলাদেশে ‘শান্তির শিক্ষা’ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, জাইকার বাংলাদেশ অফিসে এক সভায় বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাংলাদেশ কিভাবে পাঠ্য কারিকুলামে ‘শান্তি শিক্ষা’ সংযুক্ত করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছে। কারিকুলামের এই শান্তি শিক্ষাকে সক্রিয়ভাবে প্রসারে মি. ইচিগুচি একটি শান্তি রচনা প্রতিযোগিতা আয়োজন করার পরামর্শ দেন বলে জানান আতসুকো।

চিঠিতে তিনি আরও বলেন, পুরস্কার বিজয়ী প্রবন্ধ ঢাকা মেট্রোতে প্রদর্শন করা হবে। এ উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের শান্তির বিষয়ে উৎসাহিত করার পাশাপাশি সমাজসেবায়ও উৎসাহিত করবে।

তানাকা আরও বলেন, ঢাকা মেট্রোতে প্রদর্শিত এ প্রবন্ধ তার বাবার মতো হোলি আর্টিজানে যারা নিহত হয়েছেন তাদের আত্মাকে প্রশান্তি দেবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সব চেষ্টায় সফলতা কামনা করে চিঠি শেষ করেন আতসুকো।

এসইউজে/এমকেআর/জেআইএম