ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে

তৌহিদুজ্জামান তন্ময় | প্রকাশিত: ১০:৪০ এএম, ০১ জুলাই ২০২৪

রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার আট বছর আজ। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ নিহত হন মোট ২২ জন। এর মধ্যে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা।

জঙ্গিবাদ দমনে অগ্রণী ভূমিকা রাখা বাংলাদেশ পুলিশের দক্ষ ও সাহসী কর্মকর্তাদের একজন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় নৃশংস জঙ্গি হামলার পর দেশজুড়ে পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বিসিএস ১৮ ব্যাচের এই পুলিশ কর্মকর্তা।

হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার আট বছরপূর্তি উপলক্ষে দেশে বর্তমানে জঙ্গিবাদ, সিটিটিসির সক্ষমতার বিষয়ে কথা বলতে সম্প্রতি জাগো নিউজের মুখোমুখি হন মো. আসাদুজ্জামান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তৌহিদুজ্জামান তন্ময়

জাগো নিউজ: হলি আর্টিসানে হামলাকারী ‘নব্য জেএমবি’ সদস্যদের পরবর্তী হামলার সক্ষমতা আছে কি না?

মো. আসাদুজ্জামান: নব্য জেএমবির সদস্যরা হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলা চালিয়েছিল। জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে এটাই ছিল সবচেয়ে বড় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। এই জঙ্গি সংগঠন অনেক জায়গায় হামলা চালায়। সিটিটিসি তাদের নেটওয়ার্ক বিধ্বস্ত করে দিতে সক্ষম হয়েছে। তাদের আস্তানা শনাক্ত, অভিযান পরিচালনা সবই আমরা করেছি। এই সংগঠনটির (নব্য জেএমবি) সবশেষ আমির মাহাদী হাসান জন গত বছর তুরস্কে গ্রেফতার হন। যার তথ্য দিয়েছিল সিটিটিসি।

বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে নব্য জেএমবি। তারপরেও তারা থেমে নেই। যারা গ্রেফতার হয়নি বা বাইরে ছিল তারা সংগঠনটিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে। মাহাদী হাসান জনের পর আবার যিনি সংগঠনকে সক্রিয় করার চেষ্টা করেছিল তাকেও আমরা গ্রেফতার করি। এর বাইরে আনসার আল ইসলাম সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা রিক্রুটমেন্ট করার চেষ্টা করছে।

ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তরুণ-যুবকদের বিপথে আনা হয়। এ কারণে আমরা প্রথমে ইসলামিক স্কলার্স দিয়ে একটি টিম করেছি। তারা ধর্মের প্রকৃত ব্যাখা দিচ্ছেন। জঙ্গিরা একসময় ভুল বুঝতে পারেন।

নেত্রকোনায় তাদের যে আস্তানা পাওয়া গেছে সেখানে অভিযানকালে মনে হয়েছে তারা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। তবে সংগঠিত হওয়ার আগেই আমরা তাদের শনাক্ত করেছি। এই মুহূর্তে জঙ্গিবাদের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।

জাগো নিউজ: সাইবার স্পেসে জঙ্গিদের সামর্থ্য কতটুকু?

মো. আসাদুজ্জামান: ২০২১ সালের পরে বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেনি, যা আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত। জঙ্গিদের নতুন করে হামলা বা সংগঠিত হওয়ার সক্ষমতা এখন নেই। তবে তাদের বেশি সক্রিয়তা ‘সাইবার স্পেসে’। তাদের রিক্রুটমেন্ট, ট্রেনিং সবই অনলাইনে হচ্ছে। এটাকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। আমাদের অনলাইন সার্ভিলেন্স আছে- সেখান থেকে তথ্য নিয়ে তাদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হচ্ছি। বর্তমান যে নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি তাতে মনে করি জঙ্গিবাদ আরও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

আরও পড়ুন

জাগো নিউজ: জঙ্গিবাদে যারা জড়িয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আনা সম্ভব?

মো. আসাদুজ্জামান: প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ পুলিশকে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন। বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। যার অন্যতম উদ্দেশ্য দেশব্যাপী জনসচেতনা কার্যক্রম তৈরি করা। আরেকটি হলো- ডি-রেডিকালাইজেশন। এরই মধ্যে আমরা এই দুটি কাজ শুরু করেছি। ৫৪ জনকে ডি-রেডিকালাইজেশনের আওতায় আনা হয়েছে। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া।

স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে

যারা জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে, প্রাথমিক তথ্য মিলছে তাদের এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আনা হচ্ছে। এছাড়া যারা আটক হয়েছে তারা জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় অতীতের আদর্শে অথবা সাজা খেটে বের হচ্ছে তাদের ডি-রেডিকালাইজেশনের আওতায় আনা হয়। জেলখানায় দুটি ব্যাচকে ডি-রেডিকালাইজেশন করা হয়েছে। কাশিমপুর কারাগারে আটজন আটজন করে ১৬ জনকে এই প্রোগ্রামের আওতায় এনেছি। যারা জামিন পাবেন বা সাজার মেয়াদ শেষ হতে আরও দুই-একবছর লাগবে তাদের নিয়ে এ প্রোগ্রাম করেছি।

জাগো নিউজ: জঙ্গিবাদে জড়িতদের কাউন্সেলিংয়ের বিষয়ে কী বলবেন?

মো. আসাদুজ্জামান: ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তরুণ-যুবকদের বিপথে আনা হয়। এ কারণে আমরা প্রথমে ইসলামিক স্কলার্স দিয়ে একটি টিম করেছি। তারা ধর্মের প্রকৃত ব্যাখা দিচ্ছেন। জঙ্গিরা একসময় ভুল বুঝতে পারেন। সবার ক্ষেত্রে আমরা যে শতভাগ সফল হয়েছি তাও না। জঙ্গিদের যারা ধর্মীয় উগ্রবাদে বিশ্বাস করে তাদের প্রধান সমস্যা দেশের সংস্কৃতি। জঙ্গিরা মনে করে সংস্কৃতি যদি ধ্বংস করা যায় তাহলে তাদের উদ্দেশ্য দ্রুত সফল হবে।

একজন জঙ্গিকে এই সমাজ ভালোভাবে মেনে নেয় না। তাদের যদি সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে পারি তাহলে বর্তমানে জঙ্গিবাদ যে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সেই ধারা অব্যাহত থাকবে।

যদি জঙ্গিদের হামলার ইতিহাস পর্যালোচনা করা যায় তাহলে দেখা যায়, দেশের প্রথম জঙ্গি হামলা হয়েছিল উদীচীর অনুষ্ঠানে। এছাড়া পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান, যাত্রাপালা এবং সিনেমা হলে হামলা হয়েছিল। এক্ষেত্রে আমরা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের নিয়ে জঙ্গিদের কাউন্সেলিং করি। জঙ্গিরা দেশের প্রচলিত আইনকে মানতে নারাজ; চ্যালেঞ্জ করে। তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হলো নিজেদের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠিত করা। তাই কারাগারে শিক্ষা, আইনি বিষয়েও কাউন্সেলিং করা হচ্ছে, যাতে আইনের বাস্তবতা তুলে ধরা হয়।

জঙ্গিদের সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। জঙ্গিরা নিজেদের মধ্যে একটা বিশ্বাস ধারণ করেছে। যে কোনো চিন্তা বাস্তবায়ন করতে ঝুঁকি নিতে তারা প্রস্তুত। আত্মহুতি দিতে পিছপা হয় না। এ কারণে সাইকোলজিস্ট নিয়োগ করে কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। এসব ধাপ পার হওয়ার পর কাউন্সিলররা সিদ্ধান্ত নেন একজন জঙ্গি ডি-রেডিকালাইজড হয়েছে না আগের মতাদর্শ ধারণ করছে। যারা ডি-রেডিকালাইজড হয়েছে তাদের পুনর্বাসনের জন্য ৫৪ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

তাদের মধ্যে গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, দর্জি হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। জীবিকা নির্বাহের জন্য গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশা, ইজিবাইক বা কম্পিউটার সেন্টার করে দেওয়া হবে। একজন জঙ্গিকে এই সমাজ ভালোভাবে মেনে নেয় না। তাদের যদি সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে পারি তাহলে বর্তমানে জঙ্গিবাদ যে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সেই ধারা অব্যাহত থাকবে।

জাগো নিউজ: বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করছে জঙ্গিরা। সিটিটিসি তাদের শনাক্ত করার মতো সক্ষমতা রাখে?

মো. আসাদুজ্জামান: এটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। নিত্যনতুন অ্যাপস তৈরি হচ্ছে। তারপরেও তো আমরা কাজ করছি।

জাগো নিউজ: আদালত চত্বর থেকে ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গির সবশেষ অবস্থা কী?

মো. আসাদুজ্জামান: তাদের অবস্থান শনাক্ত ও ধরতে কাজ চলছে। এরই মধ্যে জঙ্গিদের দু-একটি আস্তানা শনাক্ত করেছি। দুর্ভাগ্য অভিযানের আগেই তারা স্থান ত্যাগ করেছে। তবে তারা দেশেই আছে, ধরাও পড়বে।

জাগো নিউজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

মো. আসাদুজ্জামান: আপনাকে ও জাগো নিউজ পরিবারকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

টিটি/এএসএ/এমএস