ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

পরীমণির সঙ্গে সাকলায়েনের ‘অবৈধ সম্পর্ক’, তদন্তে যা পেলো পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৬:৫০ পিএম, ২৫ জুন ২০২৪

ডিবির গুলশান বিভাগে যখন ছিলেন, তখন নায়িকা পরীমণির সঙ্গে দেখা হয় গোলাম সাকলায়েনের। দেখা থেকে শুরু হয় যোগাযোগ। এরপর ধীরে ধীরে সাকলায়েনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় পরীমণির। একপর্যায়ে পরীমণির বাসায় নিয়মিত রাতযাপন করতে শুরু করেন সাকলায়েন। এমনকি রাজারবাগ মধুমতী পুলিশ অফিসার্স কোয়ার্টার্সে সাকলায়েনের বাসায়ও যান নায়িকা। সেখানে প্রায় ১৭ ঘণ্টা অবস্থান করে রাত দেড়টায় পরীমণি বাসা থেকে বেরিয়ে আসেন।

পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। সেখানে বলা হয়েছে সাকলায়েনের সঙ্গে পরীমণির অবৈধ সম্পর্ক ছিল। সেই জেরে চাকরি হারাচ্ছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিসি) গোলাম সাকলায়েন। তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতামত চেয়েছে তারা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পিএসসিকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, তদন্তে উঠে এসেছে যে, পরীমণির সঙ্গে সাকলায়েনের বিবাহবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। সাকলায়েন পরীমণির বাসায় গিয়ে থাকতেন। আর সাকলায়েনের স্ত্রী তার সরকারি বাসায় না থাকায় পরীমণি গিয়ে সেখানে রাতে থাকতেন।

আরও পড়ুন:

চিঠিতে আরও বলা হয়, সাকলায়েন ডিবির গুলশান বিভাগে থাকার সময় পরীমণির সঙ্গে ঘটনাক্রমে দেখা হয় তার। এরপর শুরু হয় যোগাযোগ। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নায়িকা পরীমণির বাসায় নিয়মিত রাতযাপন করতে শুরু করেন।

পুলিশ অধিদপ্তরের এলআইসি শাখা (বৈধ আড়িপাতার দায়িত্বে থাকা) থেকে পাওয়া সাকলায়েনের মোবাইলের সিডিআর (বিস্তারিত কল রেকর্ড প্রতিবেদন) বিশ্লেষণ করে তদন্তকারীরা দেখেছেন, ২০২১ সালের ৪ জুলাই থেকে পরের এক মাসে সাকলায়েন বিভিন্ন সময়ে (দিন-রাতে) নায়িকা পরীমণির বাসায় অবস্থান করেন।

নায়িকা পরীমণির মোবাইলের ফরেনসিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় তদন্তকারীরা দেখেছেন, পরীমণির সঙ্গে সাকলায়েনের কথোপকথন চলতো। তা সাধারণ পরিচিতি বা পেশাগত প্রয়োজনে স্থাপিত কোনো সম্পর্কের নয়, বরং অনৈতিক প্রেমের সম্পর্ক।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, রাজারবাগ মধুমতী পুলিশ অফিসার্স কোয়ার্টার্সে পরীমণির যাতায়াতের সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। এর ফরেনসিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে ও সাক্ষীদের জবানবন্দি অনুযায়ী প্রতীয়মান হয় যে, সাকলায়েনের পূর্বপরিকল্পনা ও সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে তার স্ত্রী না থাকা অবস্থায় পরীমণি তার (সাকলায়েন) রাজারবাগের সরকারি বাসায় যান। সেখানে প্রায় ১৭ ঘণ্টা অবস্থান করে ২০২১ সালের ২ আগস্ট রাত দেড়টায় বাসা ত্যাগ করেন পরীমণি।

সাকলায়েন পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে সরকারি দায়িত্বের বাইরে নায়িকা পরীমণির সঙ্গে অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন বলে উল্লেখ করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে।

এতে বলা হয়, সাকলায়েন বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক। এরপরও পরীমণির সঙ্গে তার বিয়েবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, পরীমণির সঙ্গে জন্মদিন উদযাপন এবং নিজের সরকারি বাসভবনে নিজ স্ত্রীর অবর্তমানে সময় কাটানোর মতো ঘটনা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এ ঘটনায় সাকলায়েনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। তাকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ থেকে অব্যাহতির দাবি করেছিলেন। তবে জবাব সন্তোষজনক হয়নি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে ১৩ জুন পিএসসিকে এই চিঠি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ অনুযায়ী ‘অসদাচরণের’ কারণে সাকলায়েনকে ‘গুরুদণ্ড’ হিসেবে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে গোলাম সাকলায়েনের বক্তব্য জানতে চেয়ে তাকে ফোন করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

২০২১ সালের ৯ জুন রাতে সাভার থানার ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ১৪ জুন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন পরীমণি। সেই মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ছিলেন সাকলায়েন। পরীমণির সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগ ওঠার পর তাকে বদলি করা হয়েছিল এবং তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল।

পরীমণির বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৮ জুলাই নাসির উদ্দিন মাহমুদ হত্যাচেষ্টা, মারধর, ভাঙচুর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে আদালতে মামলা করেন। ২০২১ সালের ৪ আগস্ট পরীমণির বনানীর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। পরে তাকে বিদেশি মদসহ গ্রেফতার দেখানো হয়। এ মামলায় তিন দফায় মোট সাতদিন তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গ্রেফতারের ২৭ দিন পর ১ সেপ্টেম্বর পরীমণি কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন।

টিটি/জেডএইচ/জেআইএম