বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
অনেক হীরার টুকরা ছড়িয়ে আছে, কুড়িয়ে নিতে হবে
বর্তমান শিক্ষার্থীদের মেধা ও জ্ঞানে মুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এত জ্ঞান তো আমাদেরও নেই। এত সুন্দর করে হয়তো আমরাও বক্তৃতা দিতে পারি না। এই মেধাবীরাই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযুক্ত দক্ষ কারিগর হবে। স্মার্ট সিটিজেন হয়ে উঠবে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে পরিচালনা করবে।
সোমবার (২৪ জুন) রাজধানীর ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে ‘মাধ্যমিক থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রম’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বৃত্তিপ্রাপ্তদের অনুভূতি শোনেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে যে মেধা রয়েছে, এতক্ষণ যাদের বক্তব্য শুনলাম; আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়ে গেছি। এত জ্ঞান তো আমাদেরও নেই, সত্যি কথা বলতে গেলে! এত সুন্দর করে আমরাও বোধহয় বক্তৃতা দিতে পারি না। এত সুন্দরভাবে অনুভূতি ব্যক্ত করে, প্রত্যেকটা দিক তুলে ধরা। প্রত্যেকের বক্তব্যে ভিন্ন ভিন্ন দিক উঠে এসেছে। আমি কথাগুলো শোনার পরে, সত্যি কথা বলতে কি, আমি খুব স্বস্তি অনুভব করছি এই কারণে যে, আগামী দিনে এই বাংলাদেশ এগিয়ে চলার বাংলাদেশ। বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ নিয়ে আর আমাদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই।’
তিনি বলেন, এখন আমাদের ছোট্ট সোনামণিরাই নিয়ে যাবে এই বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ করে। ভবিষ্যতে পরিচালনাও তারা করবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযুক্ত দক্ষ কারিগর অর্থাৎ স্মার্ট সিটিজেন হিসেবে গড়ে উঠবে আমাদের এই আজকের ছেলেমেয়েরা, এটাই আমি বিশ্বাস করি।
‘অনেক হীরার টুকরা ছড়িয়ে আছে, কুড়িয়ে নিতে হবে’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘অনেক হীরার টুকরা ছড়িয়ে আছে, সেগুলো কুড়িয়ে আনা; সেটাই আমাদের মূল্য উদ্দেশ্য। মেধাবী ছাত্রছাত্রী বা মেধাবী শক্তিটা যেন আমাদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগে, আমরা সেটাই চাই। সেজন্য এই বঙ্গবন্ধু শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে সাহায্য দিয়ে যাচ্ছি।
তাছাড়া আমাদের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রকল্প শেষ হলে একটা অসহায়ত্ব দেখা যায়। সেটা যাতে না হয়, সেজন্য এই ট্রাস্ট ফান্ড বড় করে সব বৃত্তি এর মাধ্যমে দিতে পারলে এটা স্থায়ী বন্দোবস্ত হয়ে যাবে। তখন আর কেউ এটা নষ্ট করতে পারবে না। আমরা ধীরে ধীরে সেই ব্যবস্থাটাই নেবো।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বৃত্তিগুলো চলমান থাকুক সেটাই চান প্রধানমন্ত্রী।
‘দারিদ্র্য যেন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে না পারে’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দারিদ্র্য যেন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে না পারে। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আমাদের। তাদের বাবা-মা পড়াতে পারেন না। এজন্য শিক্ষা সহায়তা ফান্ড করে বৃত্তি দিচ্ছি। দরিদ্র্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও গবেষণায় সহায়তার জন্যই আমাদের এ উদ্যোগ।’
তিনি বলেন, আমাদের দেশে যারা বিত্তবান, তারা যদি এই ট্রাস্ট ফান্ডে অনুদান দেন, আমরা আরও বেশি ব্যবহার করতে পারবো। তবে আমি আমাদের বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে অন্তত দুই কোটি টাকা অনুদান দেবো। এটা আমি কথা দিচ্ছি। এটা আমার বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা করতে হবে। ছোট বোন রেহানার সঙ্গে আলোচনা করে এটা আমি দিয়ে দেবো। আমরা নিজেরাও বৃত্তি দিচ্ছি। কিন্তু আমি মনে করি, এখানে দিতে পারলে সেটা আমাদের আত্মতৃপ্তি হবে। এই ট্রাস্টটা তো আমাদের বাবার নামেই করেছি।
‘সমালোচনায় ভয় নয়, দেশের জন্য ভালোটা করতে হবে’
সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ যার যা খুশি লিখে। আমরা বাঙালি পরচর্চায় পছন্দ করি। পরচর্চা ছাড়া তো আসলেই জমে না। যে যা মনে করে লিখে দেয়। এজন্য আমি শিক্ষামন্ত্রীকে বলেছি, এটা লিখলো, ওটা লিখলো শোনবা না। নিজের মনের আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। নিজের ওপর বিশ্বাস থাকতে হবে। আর দেশের দায়িত্ব যখন নেবে, দেশের জন্য কোনটা ভালো সেটা নিজের চিন্তা থেকে আসতে হবে। কেউ একটু সমালোচনা করলেই ওটার জন্য ভীতু হয়ে যেতে হবে, আমি এটা বিশ্বাস করি না।
শিক্ষার্থীদের তিনি বলেন, আত্মমর্যাদাবোধ, আত্মবিশ্বাস এটাই মানুষকে শক্তি জোগায়। কে কি বললো, ওটা নিয়ে চোখের পানি ফেলবা, নিজের মুখ লুকাবা, তা নয়। নিজের বিশ্বাস থেকে চলা শিখতে হবে। তাহলে এদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। আমরা যে পরিকল্পনা নিয়েছি, কর্মসূচি নিচ্ছি, এটা বছরের পর বছর প্রজন্মের পর প্রজন্ম যারা আসবে তাদেরই করতে হবে। তোমাদেরই করতে হবে। পারবে না, তোমরা? পারবে? বলো।
এসময় শিক্ষার্থীরা সমস্বরে ‘জি পারবো’ বলে ওঠে। জবাবে ফের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। আমার এটাই সব থেকে আনন্দের বিষয়।
শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষাকে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই। এবারের বাজেটেও ৯৪ হাজার ৭১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। শিক্ষাখাতে বাজেট বৃদ্ধির কারণে সমাজে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ শিক্ষাটা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি যখন সরকার গঠন করি, আমাদের সাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ৪৫ শতাংশ। এখন সেটা ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামছুন্নাহারসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের পদস্থ কর্মকর্তারা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাবৃত্তি অনলাইনে প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থীদের বলবো আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর, আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা, পাঠ্যপুস্তক, পাঠ্যপুস্তকের শিক্ষাক্রম সব কিছু আমরা আধুনিক করি।
তিনি বলেন, মেধা অন্বেষণ, মেধার মাধ্যমে শিক্ষা আরও আপন করে নেওয়া, শিক্ষা একটা আনন্দমুখর পরিবেশে করা- সেই পদ্ধতিতে আমরা আসতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন যদি সারাক্ষণ কেউ বলে পড় পড় পড়, এটা কি ভালো লাগে বলো। মোটেই ভালো লাগে না। যাও একটা পড়ার ইচ্ছে থাকে তাও নষ্ট হয়ে যায়, এটা কিন্তু বাস্তব কথা। সেজন্য এমনভাবে শিক্ষাব্যবস্থাটা করা যে আগ্রহ নিয়েই ছেলেমেয়েরা পড়বে, পড় পড় করতে হবে না বা ধরে পেটাতে হবে না। নিজেরাই পড়বে, নিজেদের মধ্যেই সেই আকাঙ্ক্ষাটা থাকবে। আমরা সেই সিস্টেমটাই তৈরি করতে চাই।
এসইউজে/এসএনআর/জিকেএস/এএসএম