ব্যাপারীদের টাকা লুট করে কোরবানি দেন ডাকাত নেতারা
ঢাকায় কোরবানির পশু বিক্রি করে ফিরছিলেন গরুর ব্যাপারীরা। তাদের কাছে থাকা বিপুল পরিমাণ টাকা লুট করে গাড়ি থেকে রাস্তায় ফেলে দেন ডাকাত দলের সদস্যরা। ব্যাপারীদের কাছ থেকে টাকা লুট করে আবার সেই টাকায় কোরবানি দেন ডাকাত দলের নেতারা।
রোববার (২৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর বেইলি রোডে ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানান।
এর আগে শনিবার (২২ জুন) রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ রোডে ডাকাতি করা ওই চক্রের সক্রিয় ১০ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উত্তরা বিভাগ।
ডিবিপ্রধান জানান, রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন নাবিস্কো এলাকায় ও ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানাধীন চরপাড়া মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতাররা হলেন- মো.ফয়সাল আহাম্মেদ রিগান (৩০), মো. তারেক মিয়া (৩৫), তানভীর আহম্মেদ অন্তর (২৬), মো. মিলন (২২), মো. জাবেদ ইকবাল ওরফে বাদল (৩২), আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), মো. রতন মিয়া (৩৮), মো. সেলিম মিয়া (৩০), মো. রুবেল মিয়া (৩৪) ও মো. সুমন মিয়া (৩৫)।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে সাত লাখ ১৪ হাজার টাকা, ১৩টি মোবাইল ফোন, দুটি চাকু ও প্লাস্টিকের রশি উদ্ধার করা হয়।
হারুন অর রশীদ বলেন, গত ১৬ জুন রাজধানীতে গরু বিক্রি করে ব্যাপারীদের একটি দল জামালপুর যাওয়ার জন্য বিমানবন্দর এলাকা থেকে বাসে ওঠেন। বাসে ওঠার পর বাসের দরজা লক করে দেন হেলপার। আব্দুল্লাহপুর যাওয়ার আগে ব্যাপারীদের কাছ থেকে ভাড়া চান হেলপার। জামালপুরের রাস্তা অনেক দূরে সেজন্য ব্যাপারীরা পরে ভাড়া দিতে চান।
এরপরই ব্যাপারীদের শার্টের কলার ধরেন বাসের হেলপারসহ বাসে আগে থেকে অবস্থান করা ডাকাত দলের সদস্যরা। ডাকাতরা ব্যাপারীদের কিল-ঘুষি মেরে মুখ বেঁধে ফেলেন এবং হুমকি দিতে থাকেন। এ সময় ডাকাত দল ব্যাপারীদের টাকা-পয়সা দিয়ে দিতে বলে। গরু বিক্রির যে টাকা ছিল তা পুরোটা নিয়ে ব্যাপারীদের রাস্তায় ফেলে দেন ডাকাত দলের সদস্যরা।
ডিবিপ্রধান বলেন, পরে ঘটনার দিন বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা রুজু হয়। মামলা হওয়ার পর থেকে এ বিষয়ে ছায়া তদন্ত করে ডিবির উত্তরা বিভাগ। তদন্তের একপর্যায়ে ডিবি উত্তরা বিভাগ ডাকাতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১০ জনকে গ্রেফতার করে।
তিনি বলেন, গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও গাজীপুর এলাকায় একাধিক মামলা রয়েছে। এই ডাকাত দলের কাজই হচ্ছে বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে ডাকাতি করা। এছাড়া তারা বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থান করে প্রবাসীদের গাড়ি গতিরোধ করে সর্বস্ব লুটে নেয়।
গ্রেফতাররা জিজ্ঞাসাবাদে ডিবিকে জানান, তারা প্রায়ই ঢাকা ও গাজীপুর রোডে ডাকাতি করেন। এই ডাকাত দলের নেতৃত্বে রয়েছেন গ্রেফতার বাদল, তারেক ও লিটন নামে আরেক পলাতক ডাকাত।
ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে অস্থায়ী গরুর হাটগুলোতে ডাকাত দলের লোকজন থাকে। তারা গরুর ব্যাপারীদের অনুসরণ করে তাদের গাড়িতে তুলে ডাকাতি করে। এছাড়া ঈদকে কেন্দ্র করে ঘরমুখো মানুষ সঙ্গে করে টাকা-পয়সা নিয়ে যান, ডাকাতরা সেগুলো লুট করে। চক্রটি এখন পর্যন্ত ২০০ থেকে ২৫০টি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করেছে।
এবারের ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে তারা এখন পর্যন্ত ছয় থেকে সাতটি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। ঈদের আগে খিলক্ষেত এলাকায় চারজনকে গাড়িতে তুলে চক্রটি পাঁচ লাখ টাকা ও দুটি মোবাইল লুট করে। ঈদের ১০ দিন আগে বিমানবন্দর থেকে একজন প্রবাসীকে গাড়িতে তুলে তার রিয়াল-টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, লুট করা টাকার মধ্য থেকে দুই লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে ডাকাত দলের অন্যতম নেতা মো. জাবেদ ইকবাল ওরফে বাদল এবার ঈদে গরু কোরবানি দিয়েছেন। লুটের টাকার মধ্যে থেকে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে ডাকাত দলের আরেক নেতা মো. তারেক মিয়া একটি গরু কোরবানি দিয়েছেন।
ডাকাত দলের সদস্যরা জানিয়েছেন তারা ২০০ থেকে ২৫০টি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাহলে তারা গ্রেফতার হয়েছেন কয়বার এবং কতবার জামিন পেয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, মামলাগুলো বিভিন্ন থানায় হয়েছে। আদালত থেকে তারা কীভাবে জামিন পেয়ে বের হন সে তথ্য আমরা দিতে পারবো না।
টিটি/ইএ/জেআইএম