ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

বর্জ্য অপসারণ

আলটিমেটাম দিয়ে ‘ব্যর্থ’ ডিএসসিসি, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ নগরবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৪:৫৬ পিএম, ১৯ জুন ২০২৪

• যুক্তরাষ্ট্র থেকে বর্জ্য অপসারণ পর্যবেক্ষণ করেন মেয়র তাপস
• ৬ ঘণ্টায় বর্জ্য অপসারণ করেছে ডিএনসিসি

কোরবানির পশুর বর্জ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের ঘোষণা দিয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। কিন্তু এমন ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টা পরও এ সিটির বিভিন্ন সড়ক-গলিতে কোরবানির পশুর বর্জ্য স্তূপ হয়ে পড়ে রয়েছে। বিশেষ করে পুরান ঢাকার অলি-গলিতে এ বর্জ্যের পরিমাণ বেশি। এখন বর্জ্য পচে দুর্গন্ধ বাতাসে মিশে পরিবেশ মারাত্মক বায়ুদূষণ করছে।

তবে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য, মেয়রের ঘোষণা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের আগেই তারা ঈদের দিনে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছে। পুরান ঢাকায় অনেকে ঈদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনে পশু কোরবানি করেন। এমন দু-একটি জায়গায় বর্জ্য জমেছে। বুধবার (১৯ জুন) রাতের মধ্যেই সেগুলো অপসারণ করবে ডিএসসিসি।

আলটিমেটাম দিয়ে ‘ব্যর্থ’ ডিএসসিসি, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ নগরবাসী

গত ১৭ জুন দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন হয়েছে। এর আগে ১২ জুন জাতীয় ঈদগাহ মাঠ পরিদর্শনে গিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছিলেন ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তবে ঈদের আগেই তিনি সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্র চলে যান। সেখান থেকেই অনলাইনে যুক্ত হয়ে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন।

আরও পড়ুন

ডিএসসিসির ৭৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। এর মধ্যে আগা সাদেক রোড, বংশাল রোড, আব্দুল হাদী লেন, চাঁনখারপুল লেন, শিক্কাটুলী লেন, আবুল হাসনাত রোড এলাকা নিয়ে ডিএসসিসির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। বুধবার (১৯ জুন) দুপুর ১টায় সরেজমিনে দেখা যায়, আগা সাদেক রোডে কোরবানির পশুর বর্জ্য স্তূপ হয়ে আছে। বৃষ্টির পানিতে বর্জ্য গড়িয়ে সড়কে ছড়িয়ে গেছে। বর্জ্য পচে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সড়কে চলার পথে নাক চেপে দুর্গন্ধ এলাকা পাড় হচ্ছেন নাগরিকরা। কিন্তু এ বর্জ্য অপসারণে ডিএসসিসির তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। একইভাবে শিক্কাটুলী লেনে কোরবানির পশুর বার্জ্য পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

আগা সাদেক রোডের বাসিন্দা মোস্তফা কামাল বলেন, সিটি করপোরেশনের মেয়রের ঘোষণা অনুযায়ী পুরান ঢাকার অধিকাংশ এলাকার কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ হয়নি। আগা সাদেক রোডের এ বর্জ্য ঈদের প্রথম দিনের। এখন বর্জ্যের দুর্গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। আশপাশের ভবনের বাসিন্দারা দরজা-জানালা খুলতে পারছেন না।

তবে ডিএসসিসির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আউয়াল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, তার ওয়ার্ডে কোরবানির প্রথম দিনই সব বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। কিন্তু অনেকেই কশাই না পেয়ে দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনে পশু কোরবানি দিচ্ছেন। যদিও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আমরা বলেছি, দ্বিতীয় দিনের মধ্যে কোরবানির কার্যক্রম শেষ করতে। আজ যদি কোথাও কোরবানির বর্জ্য পড়ে থাকে, বিকেলের মধ্যেই সেগুলো অপসারণ করা হবে।

আলটিমেটাম দিয়ে ‘ব্যর্থ’ ডিএসসিসি, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ নগরবাসী

সিদ্দিকবাজার, হাজী ওসমান গনি রোড, নাজিরাবাজার লেন, কাজী আব্দুল হামিদ লেন, কাজী আলা উদ্দীন রোড, ফুলবাড়িয়া পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন এলাকা নিয়ে ডিএসসিসির ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডের কাজী আলা উদ্দীন রোড ও সিদ্দিকবাজারে কোরবানির পশুর বর্জ্য স্তূপ হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এ বর্জ্যের অনেকাংশ গড়িয়ে আশপাশের বাসাবাড়ি ও দোকানপাটের সামনেও চলে গেছে।

কাজি আলা উদ্দীন রোডের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, কাজী আলা উদ্দীন রোডের ৩৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের সামনে সারা বছর ধরেই বর্জ্য ফেলা হয়। এখন এ জায়গায় কোরবানির পশুর বর্জ্যের স্তূপ হয়ে আছে। অথচ এ জায়গা থেকে সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের দূরত্ব ২০০ মিটারের কম। একইভাবে সিদ্দিকবাজারে সড়কের ওপর একইভাবে বর্জ্য স্তুপ হয়ে আছে। অথচ সিদ্দিক বাজারের সীমানা ঘেষেই নগর ভবনের অবস্থান।

তিনি বলেন, কোরবানির বর্জ্য অপসারণে সিটি করপোরেশনের এমন গাফলতি দেখে মহল্লার মানুষ খুবই ক্ষুব্ধ। নগর কর্তৃপক্ষের এমন অব্যবস্থাপনা দূর করতে হবে।

একইভাবে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী জিয়া উদ্দীন রোড, সামসাবাদা লেন, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী জিয়া উদ্দীন রোড, জিন্দাবাহার, মৌলভী বাজার, বেগম বাজার, আর্মেনীয়াম স্ট্রিট, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের অরফানেজ রোড, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের পুষ্পরাজ সাহা রোড, জগন্নাথ সাহা রোড, ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের শনিরআখড়ায় সড়কে কোরবানির বর্জ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাছিম আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকা দক্ষিণের মধ্যে পুরান ঢাকায় কোরবানি অনেকটা ব্যতিক্রম। এখানে তিন দিন পর্যন্ত কোরবানির পশু জবাই দেওয়া হয়। বুধবার (১৯ জুন) অনেক এলাকায় পশু কোরবানি হয়েছে। এসব পশুর বর্জ্য বিকেলের মধ্যেই অপসারণ করা হবে। আর ঈদের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের সব বর্জ্য আগেই অপসারণ করা হয়েছে।

ডিএসসিসির জনসংযোগ বিভাগ সূত্র জানায়, এবার কোরবানির হাট ও কোরবানির জবাই করা পশুর বর্জ্য অপসারণে ১০ হাজার ২৪৭ জন জনবল কাজ করেছে। আর কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে ২৪ ঘণ্টার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হলেও প্রথম দিনে তা ১০ ঘন্টা ১৫ মিনিটে সম্পন্ন করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় দিনে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময়ে ৭৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৯টি ওয়ার্ডের বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। সব মিলে মঙ্গলবার (১৮ জুন) বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৫৫টি ট্রিপের মাধ্যমে ১৭ হাজার ৬৯২ মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।

আলটিমেটাম দিয়ে ‘ব্যর্থ’ ডিএসসিসি, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ নগরবাসী

মঙ্গলবার (১৮ জুন) বিকেলে ডিএসসিসির নগর ভবনের শীতলক্ষ্যা হলে স্থাপিত কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত হয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন শেখ ফজলে নূর তাপস। এ সংবাদ সম্মেলনে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপনে উৎপন্ন বা সৃষ্ট বর্জ্য অপসারণে সামষ্টিক কার্যক্রম নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

এসময় নগরের বেশ কয়েকটি জায়গায় বর্জ্য পড়ে থাকা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তাপস বলেন, কোরবানির পশু জবাই বিভিন্ন সময়ে হয়ে থাকে। একেকজন একেক সময়ে তা করে থাকে। সুতরাং আমরা পরিষ্কার করে আসার পরে অনেকেই জবাইকৃত সেসব পশুর বর্জ্য বিভিন্ন জায়গায় ফেলে রাখেন। এ ধরনের বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা থাকে। এছাড়াও অনেকেই কোরবানির পশুর বর্জ্যের সাথে হাটের বর্জ্য মিলিয়ে ফেলেন। এছাড়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনেও অনেকেই কোরবানি থাকে। কিন্তু শতভাগ পরিষ্কার হওয়ার পরেই আমরা তা ঘোষণা দেই এবং প্রথম দিনের বর্জ্য বেশ কয়েকটি জায়গায় পড়ে ও তা অপসারণ করা হয়নি, সে বিষয়টি সঠিক নয়।'

বর্জ্য অপসারণে এগিয়ে উত্তর সিটি
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকার চারটি ওয়ার্ড (১৯, ২০, ২৪, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড) ঘুরে কোথাও কোরবানির বর্জ্য দেখা যায়নি। সংস্থাটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানায়, মেয়র আতিকুল ইসলামের নির্দেশে ঈদের দিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে (৬ ঘণ্টায়) সব ওয়ার্ডে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছে ডিএনসিসি। একইভাবে ঈদের দ্বিতীয় দিনের বর্জ্যও অপসারণ করা হয়েছে। বুধবার (১৯ জুন) ঈদের তৃতীয় দিনে তেমন কেউ পশু কোরবানি দেয়নি।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) রাতে ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন জানান, ঈদের দিন দুপুর ২টা থেকে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু করে রাত ৮টায় নির্ধারিত ৬ ঘণ্টায় সবগুলো ওয়ার্ডের শতভাগ বর্জ্য অপসারণ সম্পন্ন করে ডিএনসিসি। একইভাবে ঈদের দ্বিতীয় দিনে দেওয়া কোরবানির বর্জ্য শতভাগ অপসারণ করেছে সংস্থাটি।

এমএমএ/এমআইএইচএস/জিকেএস