রানা প্লাজার হতাহতদের কান্না
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ শিল্প বিপর্যয়ের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভারের রানা প্লাজা ধস। তিন বছর আগে আজকের দিনে সাভারের এই পোশাক তৈরি কারখানা ধসে প্রাণহানি ঘটেছিল ১১ শ’ শ্রমিকের। সেদিনের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো তাড়া করে কারখানার বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের।
৯ তলা ওই ভবন ধসে বেঁচে যাওয়া অনেক শ্রমিকই হারিয়েছেন তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। ২৪ এপ্রিলে এই ধ্বংসস্তুপে জড়ো হয়েছিলেন সেদিনের বেঁচে যাওয়া শ্রমিক ও নিহতদের স্বজনরা। ফুল ও চোখের পানিতে স্মরণ করেছেন নিহতদের। রানা প্লাজার ধ্বংসস্তুপে নিহতদের পরিবারের কান্না এখনো এতটুকু কমেনি। ঢাকার অদূরে ওই ধ্বংসস্তুপে চাপা পড়া অনেকের লাশের সন্ধান পাননি তাদের স্বজনরা। রোববার সকালে সেখানে জড়ো হয়ে অনেকেই কোরআন তিলাওয়াত ও নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করেছেন।
মানবাধিকার কর্মী ও হতাহতদের স্বজনরা ভবন ধসে নিহতদের ন্যায় বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক ডেইলি মেইলকে বলেন, ‘তিন বছর পার হয়ে গেলেও আমরা এখনো ন্যায় বিচার দেখতে পাইনি। ইতিহাসের ভয়াবহ মানব সৃষ্ট এই বিপর্যয়ে দায়ী এখনো কাউকে আটক করা হয়নি’।
এ ঘটনায় পুলিশ অন্য ৪০ জনের সঙ্গে ওই ভবনের মালিককে গ্রেফতার করেছে। কারখানার কর্মকর্তার সঙ্গে তার বিরুদ্ধে খুনের দায়ে অভিযোগও গঠন করেছে। সরকারি পরিদর্শকরা ওই ভবন নিরাপদ ছিল বলে প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছে। কিন্তু কাউকে এখন পর্যন্ত দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি। আর এ ঘটনা ঘটেছিল ভবনের খুটিতে একদিন আগে ফাঁটল দেখা যাওয়া সত্ত্বেও কয়েক হাজার পোশাক শ্রমিককে ওই ভবনে কাজ শুরু করতে বাধ্য করায়।
এদিকে, অভিযুক্তদের দ্রুত বিচারের দাবিতে একই দিনে ঢাকায় ও পরিচয়হীন শতাধিক শ্রমিকের কবরস্থানের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন শ্রমিকরা। এসময় তারা কারখানার মালিক সোহেল রানার ফাঁসি দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকেন। সোহেল রানা বাংলাদেশের প্রভাবশালী একজন রাজনীতিক।
এছাড়া, রানা প্লাজার স্থানে জড়ো হওয়া শ্রমিকরা বাংলাদেশের সাড়ে ৪ হাজার তৈরি পোশাক কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন। শ্রমিক নেতা তৌহিদুল ইসলাম ডেইলি মেইলকে বলেন, ‘আরেকটি রানা প্লাজা এড়াতে সরকারকে অবশ্যই ত্রুটিপূর্ণ কারখানা বন্ধ করতে হবে। এ ধরনের বিশাল ট্রাজেডি থাকা সত্ত্বেও এখনো অধিকাংশ কারখানা অনিরাপদ থাকাটা অত্যন্ত দুঃখজনক’।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ক্ষোভ দেখা যায়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্রান্ড তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও কর্ম পরিবেশ উন্নয়নে কারখানা মালিকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে।
গত বছর রানা প্লাজা ট্রাজেডির নির্মমতার শিকার নিহত ও আহতদের ৩ হাজার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে অনেকেই বলছেন, এই ক্ষতিপূরণ অত্যন্ত অপ্রতুল। রানা প্লাজার শ্রমিক স্বপ্না বিবি চারদিন ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি দুই বছর প্রতি মাসে মাত্র ২ হাজার করে টাকা পেয়েছি। কিন্তু এখন আর কিছুই পাই না, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার কারণে আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে’।
ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারীরা প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে অন্তত ২ হাজার আহত শ্রমিক উদ্ধার করেছিলেন। সেই সময়ের স্মৃতি স্মরণ করে ফায়ার সার্ভিস কর্মী মুনির হোসেন বলেন, ‘ধ্বংসস্তুপের নিচে যারা সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করেছিলেন সেই স্মৃতি এখনো আমাকে ও আরো অনেককেই তাড়া করে’।
এসআইএস/এবিএস