চট্টগ্রামে লাখ টাকার নিচে মিলছে না গরু
আর মাত্র দুদিন পর ঈদুল আজহা। এরই মধ্যে সারাদেশে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর কেনাবেচা। চট্টগ্রামেও জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। হাটে পর্যাপ্ত গরু-ছাগল পাওয়া গেলেও দাম নিয়ে সন্তুষ্ট নন ক্রেতারা।
কথা হয় ব্যাংক কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের সঙ্গে। অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গেই জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘একটুখানি একটা গরু, দাম চাইছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। আমি ৮০ হাজার বললাম, এতে বিক্রেতার মন ভরে না। দুই বছর আগেও ছোট আকারের এসব গরু ৫০-৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে কোরবানিতে।’
শুধু নজরুল ইসলাম নন, চট্টগ্রামের সাগরিকা বাজারে গরু কিনতে আসা অধিকাংশ ক্রেতা এমন অভিযোগ করছেন। তাদের অভিযোগ, আকাশচুম্বী দাম চাচ্ছেন ব্যাপারীরা।
শুক্রবার (১৪ জুন) সরেজমিনে দেখা যায়, সাগরিকা বাজারে দুই মণের বেশি ওজনের গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে এক লাখ ১০ হাজার থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। এছাড়া পাঁচ থেকে ছয় মণের বেশি ওজনের গরুর দাম চাচ্ছে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, পশুখাদ্যের দাম বাড়ার কারণে গত বছরের তুলনায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেশি পড়েছে গরুর দাম। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খাইন ভাড়া (গরুর খুঁটি) ও পরিবহনের মতো বাড়তি খরচ।
আরও পড়ুন
হালিশহরের সবুজবাগ আবাসিক এলাকা থেকে গরু কিনতে আসেন পোশাক কারখানার কর্মকর্তা জাফর সাদেক। আড়াই মণের কাছাকাছি ওজনের একটি গরু কেনেন এক লাখ ৪০ হাজার টাকায়। জাফর সাদেক বলেন, ‘বাজার অনুযায়ী সস্তা পেয়েছি।’
আজ ছুটির দিন হওয়ায় অন্যদিনের তুলনায় সকাল থেকেই সাগরিকা বাজারে ক্রেতারা আসতে থাকেন। কিন্তু মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে নেই বাজার। ব্যাপারীরা ছোট গরুর দামই চাইছেন লাখ টাকার উপরে।
দেওয়ানহাট এলাকার তিনটি পরিবার যৌথভাবে (ভাগে) কোরবানির জন্য একটি গরু কিনতে চাইছিলেন ৮০ হাজার টাকার মধ্যে। কিন্তু প্রায় চার ঘণ্টা ঘোরাঘুরি করেও তারা এ দামে গরু পাননি। তাদের একজন আবিদ হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘শরিকদের সঙ্গে গরু কিনতে এসেছিলাম। এখন সত্যি বলতে লজ্জায় পড়ে গেছি। আমাদের বাজেটের গরু বাজারে নেই।’
ঝিনাইদহ থেকে দেশি জাতের ২০টি গরু নিয়ে এসেছেন মো. রুবেল। তিন দিনে একটিও গরু বিক্রি হয়নি তার। রুবেলের কাছে থাকা গরুর মধ্যে সর্বনিম্ন দাম এক লাখ ৩০ হাজার টাকা, যার ওজন প্রায় দুই মণ। আর সর্বোচ্চ দাম আড়াই থেকে তিন লাখের গরুর ওজন পাঁচ থেকে ছয় মণ হতে পারে বলে জানান রুবেল।
সাগরিকা বাজারে সবচেয়ে বড় গরু তুলেছেন যে কজন বিক্রেতা তাদের একজন চট্টগ্রামের শাহাদাত হোসেন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘সর্বনিম্ন আড়াই লাখ টাকা থেকে আট লাখ টাকা দামের গরু এনেছি বাজারে। কিন্তু ক্রেতারা আড়াই লাখ টাকার গরু কিনতে চায় দেড় লাখ টাকায়, আট লাখের গরুর দাম বলে পাঁচ লাখ টাকা।’
শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, ‘এবার লাখের নিচে গরু নেই বললেই চলে। সবাই ছোট গরু খোঁজে, ৭০-৮০ হাজার টাকার মধ্যে। ওই দামে গরু বাজারে নেই। তবে ক্রেতারা এবার বড় গরু কিনলে লাভবান হবেন।’
সাগরিকা বাজারের হাসিল ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আনোয়ার বলেন, ‘সকাল থেকে যেসব গরু বিক্রি হয়েছে, এর কোনোটার দামই লাখ টাকার নিচে নেই। দুপুর পর্যন্ত যেসব গরু বিক্রি হয়েছে সেগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ দাম ছিল সাড়ে তিন লাখ টাকা।’
এএজেড/কেএসআর/এএসএম