ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

গাবতলী বাস টার্মিনাল

সাহায্যের নামে তৃতীয় লিঙ্গের ‘চাঁদাবাজি’, নাজেহাল যাত্রী-পথচারী

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১১:৫৬ এএম, ১২ জুন ২০২৪

রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর মানুষেরা পথচারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকেন। আবার রাজধানীর গণপরিবহনগুলোতেও যাত্রীদের কাছ থেকে সাহায্য তুলে থাকেন তারা। তাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে অনেকেই সাধ্যমতো বা ১০ টাকা, পাঁচ টাকা করে দেন খুশি হয়ে। অনেকে আবার সাহায্য করেন না। ‘টাকা নেই’, ‘হচ্ছে না’ বা ‘অন্য কোথাও দেখেন’ বলে এড়িয়ে যান অনেকে।

যাত্রী বা পথচারীদের এমন জবাবে সাহায্যপ্রার্থী তৃতীয় লিঙ্গের কেউ কেউ বার বার আবদার করেন, টাকা দিলে নেন, না দিলে চলে যান অপরজনের কাছে। তাদের কেউ কেউ আবার টাকা না দিলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন, অনেকে আবার জোরজবরদস্তি করে টাকা আদায় করেন।

তবে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জোরজবরদস্তির মাত্রা সীমা ছাড়িয়ে গেছে গাবতলী বাস টার্মিনাল ও এর আশপাশের এলাকায়। এসব এলাকায় পথচারী ও ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া যাত্রীদের কাছ থেকে জোরজবরদস্তিসহ জিম্মি করে ‘চাঁদাবাজির’ মতো করে টাকা আদায় করতে দেখা গেছে। জোর করে মানিব্যাগে হাত দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। আবার কেউ টাকা না দিলে শুনতে হচ্ছে গালিগালাজ।

বুধবার (১২ জুন) সকালে ওই সব এলাকায় এমন চিত্র দেখা যায়।

সাহায্যের নামে তৃতীয় লিঙ্গের ‘চাঁদাবাজি’, নাজেহাল যাত্রী-পথচারী

গাবতলী পর্বত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এদিন গাবতলী ব্রিজ-পর্বত এলাকায় তৃতীয় লিঙ্গের তিনজনকে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা তুলতে দেখা যায়। বাসের অপেক্ষায় থাকা ঘরমুখো যাত্রীদের কেউ টাকা না দিলেই নানান কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যসহ গালিগালাজ করা হচ্ছে। আর কোনো নারী যাত্রীর সঙ্গে পুরুষ যাত্রী থাকলে তাদের বলা হচ্ছে ‘টাকা না দিলে পোশাক খুলে দাঁড়িয়ে যাবো’। এতে লোকলজ্জার ভয়ে অনেকেই টাকা দিয়ে দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন

শামীমা ও তার স্বামী পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ি যাচ্ছেন। অপেক্ষা করছিলেন লোকাল বাসের জন্য। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তৃতীয় লিঙ্গের তিনজন এসে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে যান। বলতে থাকে ‘দুলাভাই আছে, এক কেজি মিষ্টি কিনে দাও, অথবা ৫০০ টাকা দাও’। শামীমা টাকা দেবেন না বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। এর মধ্যেই তাদের একজন বলেন, ‘টাকা না দিলে পোশাক খুলে বসে পড়বো’। পরে বাধ্য হয়ে ৫০ টাকা দিয়ে দেন শামীমা।

শামীমার স্বামী রিফায়েত জাগো নিউজকে বলেন, ‘কে তাদের রুখবে? সবার কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। টাকা না দিলে অশ্লীল কথা বলছেন। সবাই বাধ্য হচ্ছেন টাকা দিতে। আর টাকা যে দেবো, তারা তো প্রকৃত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নন, সবাই পুরুষ। তারা মারমুখী আচরণ করেন। এ কারণে টাকা দিয়ে বিদায় করলাম।’

সাহায্যের নামে তৃতীয় লিঙ্গের ‘চাঁদাবাজি’, নাজেহাল যাত্রী-পথচারী

আরও পড়ুন

রবিউল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ক্যাম্পাসে পরীক্ষা শেষ হলেও টিউশনি থাকায় আজ গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া যাচ্ছি। ছাত্র মানুষ, লোকাল বাসে গেলে কিছু টাকা সেভ (সাশ্রয়) হবে। কিন্তু এখানে (গাবতলী) এসেই হিজড়া (তৃতীয় লিঙ্গ) সিন্ডিকেটের কবলে পড়তে হলো। কাছে টাকা নেই বলায় মা-বাবা তুলে গালি দিচ্ছে ওরা। তবে খুচরা টাকা না থাকায় টাকা তাদের দেইনি।’

বখতিয়ার নামে অপর এক যাত্রী অভিযোগ করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘‘ফল নিয়ে রাজশাহী থেকে মিরপুর শাহআলী বাজারে এসেছিলাম। বিক্রি শেষ করেছি, এখন লোকাল বাসে করে বাড়ি ফিরবো। সাতসকালে হিজড়া (তৃতীয় লিঙ্গ) এসে লুঙ্গি ধরে টান দিয়ে বলে ‘দুলাভাই টাকা দাও নাস্তা করবো’। টাকা নেই বলাতে অশ্লীল কথা শোনায় তারা। পরে ২০ টাকার নোট দিয়ে ১০ টাকা ফেরত চাইলাম। ফেরত না দিয়ে পুরোটাই নিয়ে যায়।’’

এ বিষয়ে তৃতীয় লিঙ্গের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা বলেন, ‘দারুসসালামে আমাদের ‘গুরুমা’ আছে, সেখানে কথা বলে আসেন। আমাদের কথা বলা নিষেধ আছে গুরুমার।’ তবে তাদের কাছ থেকে তাদের ‘গুরুমার’ নাম কিংবা বিস্তারিত পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। আবার তিনজনকে দেখেও বোঝা যায়নি তারা প্রকৃত তৃতীয় লিঙ্গের কি না। তাদের তিনজনেরই দাড়ি কামানো ছিল।

ইএআর/ইএ/এমএস