ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

নগরের দরিদ্রদের নবায়নযোগ্য জ্বালানির আওতায় আনার সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৪:৪০ এএম, ০৩ জুন ২০২৪

নগরে থাকা দরিদ্রদের নবায়নযোগ্য জ্বালানির আওতায় এনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার সুপারিশ করেছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি নবায়নযোগ্য শক্তিকে জনসাধারণের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেন তারা।

রোববার (২ জুন) বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজিনাস নলেজ (বারসিক) এবং কোয়ালিশন ফর দ্য আরবান পুওর (কাপ) আয়োজিত সংলাপে এ সুপারিশ উঠে আসে। ‘নগর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জ্বালানি ব্যবহার এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি গ্রহণে চ্যালেঞ্জ: প্রেক্ষিত ঢাকা মহানগরী’ শীর্ষক এ সংলাপ হয়।

সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নগর গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, বস্তিবাসীদের অধিকার সুরক্ষার বিষয়টি প্রথমে বঙ্গবন্ধুই করেছিলেন। নগর দরিদ্রদের জন্য রাজউকের কোনো পরিকল্পনা নেই। গবেষণার ফলাফল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের কাছে পৌঁছাতে হবে। নগর নীতিমালা তৈরি হয়েছে কিন্তু সেটির কোনো বাস্তবায়ন নেই। নগর নীতিমালাতে নগর দরিদ্রদের জ্বালানিসহ অন্যান্য অধিকার বিষয় বলা হয়েছে। তাই এটিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ক্যাপস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার বায়ুমান এবং জ্বালানি উন্নয়ন উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জ্বালানির চাহিদা পূরণে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি বায়ুমানের ব্যাপক অবনতির কারণ হতে পারে। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার বৃদ্ধি এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য এক কার্যকর সমাধান হতে পারে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ (আইএবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, আমরা যখন কোনো প্ল্যান করি তখন বস্তিবাসীদের বাদ দিয়েই প্ল্যান করি। নগরের এই জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে আমরা কখনোই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না। নবায়নযোগ্য জ্বালানি গ্রহণের যে চ্যালেঞ্জ সেটি আমাদের এই বস্তিবাসীদের নিয়েই মোকাবিলা করতে হবে।

স্টেট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. নওজিয়া ইয়াসমিন বলেন, আমরা যত জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করছি তত আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে এবং বস্তিবাসীদের আলাদা করে না দেখে তাদের নিয়েই জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এসব নবায়নযোগ্য জ্বালানি কীভাবে সংরক্ষিত হবে সেটিও ভাবতে হবে।

বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এনার্জি, ইনভেস্টমেন্ট গ্রান্টস এবং ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্সের অ্যাটাচি প্রোগ্রাম ম্যানেজার কিয়ারা ভিদুসি বলেন, আমরা জানি নবায়নযোগ্য শক্তিই ভবিষ্যৎ। তাই আমাদের নবায়নযোগ্য শক্তিকে জনসাধারণের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।

জাতীয় সংলাপের মূল বক্তব্যে বারসিকের প্রকল্প পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ঢাকা মহানগীর ৬৪ শতাংশ পরিবার নগর দরিদ্র পরিবার। রান্না ও বিদ্যুৎ বাবদ গড়ে একটি পরিবার ২ হাজার ৩৮৯ টাকা খরচ করে। অর্থাৎ মোট আয়ের ১৫ শতাংশ চলে যায় জ্বালানি খরচে।

গবেষণায় আরও বলা হয়, বিগত দুই বছরের মধ্যে ৮ শতাংশ পরিবারে দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার ৫৪ শতাংশ রান্নার লাকড়ি চুলা থেকে। রান্নার ধোঁয়ার কারণে গত ছয় মাসের মধ্যে ২২ শতাংশ পরিবারের সদস্যদের গুরুতর কাশির সমস্যা হয়েছে। গবেষণায় মাত্র ১০ শতাংশ উত্তরদাতা নবায়নযোগ্য জ্বালানি শব্দের সঙ্গে পরিচিত।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, বস্তিবাসীদের ফরমাল হাউজিং নিয়ে আসতে হবে। কারণ ইনফরমাল হাউজিংয়ে তাদের এনার্জি সমস্যা সমাধান করা যাবে না। ফরমাল অ্যাকসেস দিতে হবে সোলার ও গ্যাস সংযোগে।

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর খসরু মোহাম্মদ সেলিম বলেন, বস্তি এলাকায় বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে আমরা বস্তিবাসীদের জ্বালানি চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ করতে পারি। এছাড়াও সাশ্রয়ী ও টেকসই সোলার প্যানেল উদ্ভাবনের মাধ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে আমাদের সমন্বিত হয়ে কাজ করতে হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান টাউন প্ল্যানার মাকসুদ হাশেম বলেন, দেশের অর্থনীতিতে বস্তিবাসীদের অবদান গুরুত্ব দিয়ে গবেষণা করতে হবে। কারণ অর্থনীতিতে তাদের কোনো ভূমিকা না থাকলে তারা টিকে থাকতে পারবে না।

টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জ্বালানি দক্ষতা ও সংরক্ষণ বিষয়ক উপ-পরিচালক ও সিনিয়র সহকারী সচিব মুহাম্মদ হাসনাত মোর্শেদ ভূঁইয়া বলেন, আমরা সর্বত্র বলছি কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নের দিকে এগোতে হবে। কিন্তু কার্যত আমরা বস্তিবাসীদের পেছনে ফেলেই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি, যেটা কখনোই সম্ভব নয়।

সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের (এসএসিসিজেএফ) এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট কেরামত উল্লাহ বিপ্লব বলেন, আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই উন্নত দেশগুলোর সহযোগী হয়ে। ভবিষ্যৎ প্রজম্মের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আমাদেরকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।

ক্যাপসের সায়েন্টিফিক অফিসার ইঞ্জিনিয়ার নাছির আহম্মেদ পাটোয়ারী বলেন, নগর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে যারা জ্বালানি ব্যবহার করে তাদের স্বাস্থ্য সংকট রয়েছে। সেটা হলো বায়োমাসের ফলে তারা বায়ু দূষণের শিকার হচ্ছে। যদি আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করি তাহলে বায়ু দূষণও কমবে। আমরা শিক্ষা-কার্যক্রমে যদি নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিষয় যুক্ত করি তাহলে এই বিষয়টি তাহলে তারা মেধা-মননে ধারণ করবে এবং পরবর্তীতে বাস্তবায়ন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবে।

জাতীয় সংলাপে বিভিন্ন বস্তি কমিউনিটির নারীরা তাদের সমস্যা তুলে ধরেন।

এনএস/কেএসআর