বিশ্ব উষ্ণায়নের পরিণতি বোঝার সেরা জায়গা হিমালয়: বাবর আলী
এভারেস্টজয়ী ডা. বাবর আলী বলেছেন, ‘কেউ যদি গ্লোবাল ওয়ার্মিং (বিশ্ব উষ্ণায়ন) সম্পর্কে বুঝতে চায়, তার জন্য সবচেয়ে সেরা জায়গা হিমালয়। হিমালয়ে তুষারপাত কমে গেছে। এ কারণে হিমালয়ে অনেকগুলো গ্রাম উঠে যেতে বাধ্য হচ্ছে।’
বুধবার (২৯ মে) দুপুরে চট্টগ্রামের আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিজের অভিজ্ঞতা এভাবেই তুলে ধরেন দেশের এভারেস্ট ও লোৎসে জয়ী ডা. বাবর আলী। গতকাল মঙ্গলবার রাতে দেশে ফিরেই আজ সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন তিনি।
ডা. বাবর আলী বলেন, ‘লোকে বলে হিমালয় কেন যায়? এভারেস্টে যাওয়া যে শুধু মাত্র অ্যাথলেটিক পারফরমেন্স তা নয়, যদি দেখার চোখ থাকে অনেক কিছু দেখার আছে। আড়াই হাজার মিটার উচ্চতায় যে লম্বা গাছ আছে, সে একই জুনিপার গাছ চার হাজার মিটারে গিয়ে ঝোপ হয়ে যাচ্ছে। যাতে গাছটি তাপমাত্রা কম হারায়, তাই সে নিজের আয়তন ছোট রাখছে। কিন্তু শেকড়টা অনেক বড়।’
হিমালয়ে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি যাওয়ার সময় যেসব এলাকা বরফে ঢাকা দেখেছি, আসার সময় দেখলাম সেখানে বরফ গলে অনেকগুলো লেকের সৃষ্টি হয়েছে। তুষারপাত কমে যাওয়ায় অনেকগুলো গ্রাম হিমালয়ের আরও উপরে উঠে যেতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ তাদের সবকিছু তুষারপাতের ওপর নির্ভরশীল।’
‘একইভাবে সিকিমের বন্যার কথা নিশ্চয় আমাদের মনে আছে। মূলত হিমালয়ের পাদদেশে থাকা গ্লাসিয়ল লেক উপচে পরে এই বন্য হয়েছিল। এ সবই গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে হচ্ছে।’
এভারেস্ট ও লোৎসে জয়ের মধ্যে লোৎসে অভিযান চ্যালেঞ্জের ছিল জানিয়ে ডা. বাবর আলী বলেন, ‘সবাই আমাকে এভারেস্ট বিজয়ী বলছেন। কিন্তু এভারেস্ট ও লোৎসের মধ্যে আমি লোৎসেকে এগিয়ে রাখবো। এটা একন নয় যে আমি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে লোৎসে দাঁড়িয়েছি, সে জন্য নয়। আমি যেহেতু ক্লাইম্ব করতে পছন্দ করি, আমাকে লোৎসের ক্লাইম্বটা বেশি আনন্দ দিয়েছে। কারণ এটার চ্যালেঞ্জটা বেশি ছিল। লোৎসেতে আমার কুলোয়া (পর্বত আরোহনের একটি পদ্ধতি) ধরে ক্লাইম্ব করার সুযোগ হয়েছে।’
এভারেস্টে চূড়ায় থাকার অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এভারেস্টের চূড়ায় এক ঘণ্টা ১০ মিনিট ছিলাম। এ সময় আমি শুধু চারপাশটা এনজয় করেছি। ভাবছিলাম আরতো আসা হবে না। এভারেস্টে তিব্বতের দিকটা খুব সুন্দর। এটি মহান একটি অভিজ্ঞতা।’
আরও পড়ুন
এভারেস্টে নিজের ভয়াল অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বাবর বলেন, ‘আমি যেদিন সামিট করেছি তার কয়েকদিন আগে দুইজন মঙ্গোলিয়ান মারা গেছেন। তাদের মরদেহগুলো সেখানে ছিল। তখন আমার মনে হচ্ছিল, এসব মানুষ সবচেয়ে মোটিভেটেড পারসন, যারা চারদিন আগেও ছিলেন। তারা খুব শক্ত-সামর্থ্যবান ছিলেন, কিন্তু আমার মনে হয়েছে তারা ওয়েদারটাকে আমলে নেননি। পর্বতে আবহাওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, আমি এটি খুব আমলে নিয়েছি।’
‘আমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল রোটেশন শেষ করে এসে ফাইনাল সামিট করার আগের সময়টা। এ সময়টা আমার কাটছিল না। কখন উপরে যাবো। উত্তেজনায় টগবগ করছিলাম। কিন্তু আমি শক্ত ছিলাম যে আবহাওয়াকে ডাইভার্ট করে কিছু করা যাবে না।’
নিরাপদে দেশে ফিরে আসায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বাবর আলী বলেন, ‘আমি যে নিরাপদে দেশে ফিরে এসেছি এটি আমাকে আনন্দিত করেছে। এতবড় জার্নিতে আমার কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। লোকজন আমাকে শুধু জিজ্ঞেস করছে, ঠিকঠাক আছি কি না। আমি মাত্র আড়াই দিনে লুকলা নেমেছি। আমি কাঠমান্ডুর রাস্তায় আট দশমিক দুই কিলোমিটার দৌড়ে সেলিব্রেশন করেছি। চার কেজি ওজন কমেছে, তারপরও আমি ভালো আছি।’
পর্বত আরোহণে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ পৃষ্ঠপোষকতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এভারেস্ট জয় করার চেয়ে কঠিন এর জন্য তহবিল জোগাড় করা। পৃষ্ঠপোষক পাওয়া। আমি এবার স্পন্সরের কাছে গেছি। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি মনে করি, পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাংলাদেশের অনেক তরুণ এভারেস্ট জয় করতে পারবে।’
মঙ্গলবার (১৮ মে) রাত সোয়া ৯টায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে ডা. বাবর আলীকে বহনকারী বিমান। এর পরপরই শোভাযাত্রা সহকারে তাকে হাটহাজারীর নিজ বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এভারেস্ট ও লোৎসে পর্বতশৃঙ্গে আহরণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে বাবর আলী নেপালের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন গত ১ এপ্রিল। ১৯ মে ভোরে ২৯ হাজার ৩১ ফুট উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে ওড়ান বাংলাদেশের পতাকা।
পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণের দুই দিন পর লোৎসে পর্বতের শীর্ষ (৮ হাজার ৫১৬ মিটার) ওঠেন ৩৩ বছর বয়সী বাবর আলী। ২১ মে নেপাল সময় সকাল ৫টা ৫০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ৬টা ৫ মিনিট) বাবর লোৎসে পর্বতচূড়ায় পা রাখেন।
এএজেড/কেএসআর/এএসএম