ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

এভারেস্ট জয়ী বাবর আলীর যত অর্জন

আবু আজাদ | প্রকাশিত: ১১:৪৫ এএম, ১৯ মে ২০২৪

পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টে এবার বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন বাবর আলী। দীর্ঘবিরতি, প্রায় ১১ বছর পর সফল হলেন এই বাংলাদেশি। রোববার (১৯ মে) বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছান তিনি।

বেসক্যাম্প টিমের বরাত দিয়ে অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ফরহান জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আমাদের স্বপ্নসারথি বাবর আলী আজ সকালে স্থানীয় সময় সাড়ে ৮টা এবং বাংলাদেশ সময় ৮টা ৪৫ মিনিটে এভারেস্টের উচ্চতম চূড়া ছুঁয়েছেন।

এর আগে ২০১০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে চার বছরে পাঁচ বাংলাদেশি ছয়বার মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন। কিন্তু এরপরই এভারেস্ট অভিযানে নেমে আসে খরা। দীর্ঘ সময় কোনো বাংলাদেশির সফল অভিযান হয়নি। ১১ বছরের সেই খরা কাটিয়ে আজ ভোরে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় লাল-সবুজ পতাকা হাতে বাবর আলী।

বাংলাদেশ থেকে বাবর আলী নেপালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন ১ এপ্রিল। প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে তিনদিন পরই (৪ এপ্রিল) কাঠমান্ডু থেকে উড়ে যান পৃথিবীর অন্যতম বিপজ্জনক বিমানবন্দর লুকলায়। সেই লুকলা থেকে পথচলা শুরু করেন শত কিংবদন্তি পর্বতারোহীদের চলা পথে। ১০ এপ্রিল বাবর পৌঁছে যান এভারেস্ট বেসক্যাম্পে। এভারেস্ট অভিযানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো একাধিকবার উচ্চতায় ওঠানামা করে উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া। কিন্তু কয়েকদিন অপেক্ষার পরও নেপালের দায়িত্বরত দল পথ তৈরি করতে পারেনি। তাই বাবর বিকল্প পথ বেছে নেন, ১৬ এপ্রিল স্পর্শ করেন ২০ হাজার ৭৫ ফুট উচ্চতার লবুচে ইস্ট পর্বত।

অবশেষে ১৮ মে মাঝরাতে আবারও শুরু হয় বাবরের যাত্রা এবং ভোরের প্রথম কিরণে ২৯ হাজার ৩১ ফুট উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্ট পৌঁছান তিনি।

তবে অভিযান কিন্তু এখনো শেষ নয়! বাবরের আসল লক্ষ্য শুধু এভারেস্ট নয়, সঙ্গে লাগোয়া পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ পর্বত লোৎসেও। আজ ক্যাম্প-৪ এ নেমে মাঝরাতে আবারও শুরু করবেন দ্বিতীয় লক্ষ্যের পথে যাত্রা এবং পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে ভোরে পৌঁছে যাবেন এতে।

লোৎসেতে আগে কোনো বাংলাদেশি পৌঁছাতে পারেননি। তাই লক্ষ্য পূরণ হলে বাবর আলী বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবেন।

নেপালের স্নোয়ি হরাইজন নামক প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত অভিযানে এই সামিটে বাবরের সঙ্গে ছিলেন তার দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং পর্বতারোহণ গাইড বীরে তামাং।

বাবরের ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের পক্ষ হতে প্রধান অভিযান সমন্বয়ক ফরহান জামান সাংবাদিকদের বলেন, বাবর আলীর এই সাফল্য শুধু তার ব্যক্তিগত অর্জন নয় বরং এটি পুরো বাংলাদেশের জন্য এক গর্বের বিষয়। এটি আমাদের দেশের তরুণদের আরও বড় স্বপ্ন দেখার এবং সেগুলো পূরণ করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে। এই অভিযানের পেছনে ছিল অসংখ্য মানুষের অবদান এবং স্বপ্ন। আমরা তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

আরও পড়ুন

কাগজে-কলমে বাবর আলীর এই অভিযান আজ থেকে দেড় মাস আগে শুরু হলেও তার কঠিন অধ্যাবসায় শুরু হয়েছিল ১০ বছর আগে। ২০১৪ সালে পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স প্রতিষ্ঠার পর থেকে ক্লাব সতীর্থদের নিয়ে নেপাল এবং ভারতের বহু পর্বতে যান তিনি। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি স্পর্শ করেছেন নেপালের আমা দাবলাম পর্বত। পর্বতারোহণ তার নেশা হলেও সাইক্লিং, ম্যারাথন, স্কুবা ডাইভিংয়ের মতো অ্যাডভেঞ্চারেও নিয়মিত জড়িত ছিলেন। পায়ে হেঁটে ঘুরেছেন দেশের ৬৪ জেলা, সাইকেলে পাড়ি দিয়েছেন ভারতের কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীর পথ। বান্দরবান থেকে হিমালয়, সুন্দরবন থেকে দক্ষিণ ভারত, যে জনপদেই তিনি গেছেন, সাক্ষী হয়েছেন অভূতপূর্ব কিছু মুহূর্তের। প্রকৃতির প্রতি তার এই ভালোবাসা এবং বিস্ময় প্রতিনিয়তই মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সেই সূত্র ধরেই অবশেষে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া থেকে পৃথিবী দেখার স্বপ্নও সার্থক করেছেন এই তরুণ পর্বতারোহী।

নানাবিধ দুঃসাহসী কর্মকাণ্ডের কারণে মূলত পরিচিতি হলেও বাবর পেশায় একজন চিকিৎসক। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বুড়িশ্চর এলাকার লেয়াকত আলী এবং লুৎফুন্নাহার বেগমের দ্বিতীয় সন্তান বাবর। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫১তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন তিনি। কিছুদিন জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করলেও আগের অভিযানের সময় ছুটি না মেলায় ত্যাগ করেন চাকরির মোহ।

এই অভিযানে মোট খরচ হচ্ছে ৪৫ লাখ টাকা। এতে মূল পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছেন ভিজ্যুয়াল নিটওয়্যার লিমিটেড। এছাড়া সহ-পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ঢাকা ডাইভার্স ক্লাব, বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ব্লু জে, চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনী, গিরি, ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স। এছাড়াও অভিযানের জন্য গণতহবিল সংগ্রহে অংশ নিয়েছেন দেশে-বিদেশে নানা সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠন এবং অগণিত শুভাকাঙ্ক্ষী। অভিযানের সার্বিক সমন্বয় করেছে বাবর আলীর নিজের ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স।

সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত

এভারেস্ট জয়ী বাবর আলীর যত অর্জন

* ২০১৭ সালে ভারতের উত্তর কাশীতে অবস্থিত ‘নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং’ হতে বেসিক মাউন্টেনিয়ারিং কোর্স সম্পন্ন করেন।

* ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের অন্যতম শীর্ষ পর্বতারোহণ ক্লাব ‘ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স’ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি।

সাইকেলে বাবর আলী

* ২০২৩ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সম্পন্ন করেছেন ভারতের দীর্ঘতম হাইওয়ে কাশ্মীর-কন্যাকুমারী (৪০০০ কিমি) সাইক্লিং।

আরও পড়ুন

* ২০২২ সালে ‘ভোমড়া-তামাবিল’, ২০২১ সালে ‘হালুয়াঘাট-কুয়াকাটা’, ২০১৭ সালে ‘টেকনাফ-তেঁতুলিয়া’ এবং ‘আখাউড়া-মুজিবনগর’ এই চারটি ক্রস-কান্ট্রি সাইক্লিং সম্পন্ন করেন।

পদভ্রজে বাবর আলী

* ২০১৯ সালে একটানা ৬৪ দিন হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন বাংলাদেশের ৬৪ জেলা এবং প্রচার করেছেন সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার বর্জনের বার্তা।

* দৌড়েছেন বহু ম্যারাথন ইভেন্টে।

জলে বাবর আলী

* ২০২১ সালে সম্পন্ন করেছেন ‘DIWA সার্টিফাইড স্কুবা ডাইভিং’ কোর্স।

* ২০১৯ সালে করেছেন কাপ্তাই-রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই এবং ২০১৭ সালে কাপ্তাই-বিলাইছড়ি-কাপ্তাই কায়াকিং।

কলম হাতে বাবর আলী

* লিখেছেন দুইটি মৌলিক গ্রন্থ ‘পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা’ (চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনী) এবং ‘সাইকেলের সওয়ারি’ (চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনী)।

* অনুবাদ করেছেন একটি গ্রন্থ ‘ম্যালরি ও এভারেস্ট’ (অদ্রি প্রকাশনী)।

* এছাড়াও তিনি নিয়মিত দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য পত্রিকা ও লিটল ম্যাগাজিনের জন্য অভিযানের গল্প লিখেন।

এভারেস্ট জয়ী বাবর আলীর যত অর্জন

এভারেস্ট জয়ী বাবর আলীর যত অর্জন

* মো. খালেদ হোসাইন (প্রকাশ সজল খালেদ) সামিট শেষে নেমে আসার পথে মৃত্যুবরণ করেন।

* আমাতুন নূর মৃদুলা ২০১৭ সালে এভারেস্ট অভিযান করেন। অভিযানে তিনি দ্বিতীয় ক্যাম্প হতে ফিরে আসেন।

* লোৎসেতে এর আগে কোনো বাংলাদেশি অভিযানে যাননি।

এএজেড/ এসএনআর/এমএস