দেশকে এগিয়ে নিতে অর্থনীতিবিদদের সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী
দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র, যুদ্ধ-সংঘাত, মহামারিসহ সব বাধা ডিঙিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে অর্থনীতিবিদদের সহযোগিতাও প্রত্যাশা করেন তিনি।
শুক্রবার (১৭ মে) রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, মিলনায়তনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২২তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন।
যুদ্ধ, মহামারি ও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, উত্থান-পতন, চড়াই-উৎরাই থাকবেই। কেউ হতাশ হবেন না। আমি অনেক বাধা অতিক্রম করে এসেছি। গুলি, বোমা সব কিছু হজম করেছি। আমার লক্ষ্য এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। যত বাধাই আসুক, সে বাধা, বাধা নয়। আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। জাতির পিতা বলেছেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। আসলেই কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, পারবেও না।
‘বিদেশিদের থেকে শিখবো, কাজ করবো দেশের প্রয়োজনে’
অর্থনীতিবিদদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে আপনাদের পরিকল্পনা/নীতিমালা করুন। কেউ এসে পরামর্শ দিয়ে যাবে, সেটা শুনতে হবে, তা নয়। হ্যাঁ বাইরে থেকে (বিদেশিদের থেকে) আমরা শিখবো। তবে কাজ করার সময় আমাদের দেশের মানুষের প্রয়োজন দেখবো। আমাদের যতটুকু সম্পদ আছে, সেটা দিয়েই কাজ করবো। জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করাই আমার লক্ষ্য, সেখানে আপনাদের (অর্থনীতিবিদ) সহযোগিতা চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ক্ষমতা দখল করেছিল তাদের সময় দেশের মাথাপিছু আয় বাড়েনি, কারণ গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক ধারা ছাড়া দেশ এগোতে পারে না। রাজনীতিবিদদের জনগণের কাছে ওয়াদা থাকে। ক্ষমতা যারা দখল করে তাদের জনগণের কাছে ওয়াদা থাকে না। সে সময় দেশে একের পর এক ক্যু হয়েছে। যে কারণে দেশ স্থিতিশীল হতে পারেনি।
দেশকে আরও এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব ব্যবসায়ীদের
ব্যবসায়ীদের দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকার সবসময় তাদের পাশে আছে। দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করুন। আমরা সব সময় আপনাদের (ব্যবসায়ীদের) পাশে আছি। ব্যবসায়ীদের উদ্ভাবনী ধারণা কাজে লাগিয়ে রপ্তানি বাড়াতে নতুন বাজার ও পণ্য খুঁজে বের করতে হবে। এ জন্য সরকার সর্বদা তাদের পাশে থাকবে।
আওয়ামী লীগ কখনো কোনো ব্যবসায়ীকে তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা দেখে বিচার করে না। ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা সব সময় দেশের মানুষের কল্যাণের কথা ভাবি। আজকের বাংলাদেশ একটি পরিবর্তিত বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশকে আরও টেনে নিয়ে যেতে হবে এবং এ দায়িত্ব আপনাদের (ব্যবসায়ীদের) নিতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটলে মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো হবে। এ লক্ষ্যে সরকার এরই মধ্যে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে এবং বাকি প্রতিবন্ধকতাগুলোও শিগগির সমাধান করা হবে। অন্তত আমি বলতে পারি যে আমি ‘হাওয়া ভবন’-এর মতো কোনো ‘খাওয়া ভবন’ করিনি যা ব্যবসার জন্য অসুবিধা তৈরি করবে। সরকার ব্যবসায়ীদের সব সময় সহযোগিতা করবে। আমরা চাই, ব্যবসায়ীরা ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এগিয়ে আসুক।
সরকারপ্রধান বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। গ্রাম-গঞ্জ পর্যন্ত প্রযুক্তিগত যোগাযোগ তৈরি করা হয়েছে। সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগাতে হবে। বাজার তৈরি করতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে, কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। তরুণদের নিজে উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর রক্ত নিয়েও বাসন্তীদের পরিবর্তন হয়নি
তিনি বলেন, ৭৪ এ দুর্ভিক্ষের চিত্র তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকে দেশে বিদেশে হেয় করা হয়েছে। দেশে ফেরার পর দেখেছি দিনের পর দিন দুর্ভিক্ষ। মানসিক ভারসাম্যহীন যে বাসন্তির ছবি দেখিয়ে এতো বড় ক্ষতি করা হলো, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেই বাসন্তির কোনো খবর নেয়নি ক্ষমতা দখলকারিরা। বঙ্গবন্ধুর রক্ত নিয়েও বাসন্তিদের কোনো পরিববর্তন আসেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বৈরশাসকরা শুধু ক্ষমতা ভোগ করা বুঝতো। কে কোন ব্র্যান্ডের জিনিস পড়বে, সেসব নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। আসলে স্বৈরশাসকরা যখন ক্ষমতায় আসে তখন দুর্নীতিই নীতি হয়ে যায়। জিয়াউর রহমানের সময়ই খেলাপি ঋণের কালচার শুরু হয়। জিয়াউর রহমান দেশে খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি ও এলিট শ্রেণি তৈরি করে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে দেশের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেয়।
৬ জুন বাজেট দেবো, বাস্তবায়নও করবো
সরকারপ্রধান বলেন, আমরা ৬ (জুন) তারিখে বাজেট দেবো। বাজেট আমরা ঠিক মতো দিতে পারবো, বাস্তবায়নও করবো। দেশি-বিদেশি নানা কারণে জিডিপি কিছুটা হয়তো কমবে, সেটা পরবর্তীতে উত্তরণ করতে পারবো, সে আত্মবিশ্বাসও আছে।
তিনি বলেন, গ্রামের অর্থনীতি পাল্টে গেছে। যারা একবেলা ভাত খেতে পারতো না, চারবেলা খায়। হাট বারের বাইরে কিছু পাওয়া যেত না, এখন সুপার মার্কেট হয়েছে। আমাদের গ্রামের বাজার পাটগাতি থেকে ঈদের আগে ২০০ ফ্রিজ বিক্রি হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতি যত বেশি মজবুত হচ্ছে, শিল্প কলকারখানা বাড়ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আজকে অর্থনীতি সমিতির প্রোগ্রামে আসছি। এখানে অনেকের অনেক বড় বড় ডিগ্রি আছে। আমার কিন্তু তা নেই। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাশ করেছি। অর্থনীতির সুক্ষ্ন ও জটিল বিষয়াদি আপনাদের মতো আমি বুঝি না। এতটুকু বুঝি কীভাবে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হয়। কীভাবে মানুষের উপকার হবে। আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকেই আমি এটা শেখেছি। তিনি তো বেশিরভাগ সময়ই জেলে থাকতেন। যতক্ষণ বাইরে থাকতেন। আমাদের সঙ্গে গল্প করতেন, কীভাবে তিনি দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চান, কীভাবে গ্রামগুলোকে সাজাবেন।
অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক আইনুল ইসলাম ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ড. জামাল উদ্দিন আহমদ।
এসইউজে/এসএনআর/এমএস