৯০০ নয়, ১৩৫ মরদেহ দাফন করেছেন মিল্টন
৯০০ মানুষ দাফনের যে তথ্য চাইল্ড অ্যান্ড এইজ কেয়ারের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার দিতেন তা ‘মিথ্যা’ ছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি জানান, সমাজের মানবিক মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে টাকা হাতাতেই এমন কথা বলতেন মিল্টন সমাদ্দার। বাস্তবে তিনি ১৩৫ জনকে দাফন করেছিলেন।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবির কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
হারুন অর রশীদ বলেন, মানবপাচার ও জালিয়াতিসহ মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। তাকে দুই মামলায় সাতদিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মিল্টনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বেশিরভাগই স্বীকার করেছেন। ভুয়া মৃত সনদ তৈরির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এর প্রমাণ তার চাইল্ড অ্যান্ড এইজ কেয়ারে পেয়েছি। অপারেশন থিয়েটারে চিকিৎসক না থাকার অভিযোগ স্বীকার করেন তিনি। এমনকি মাদক সেবন করে তিনি তার আশ্রমের অসুস্থদের নির্যাতন করতেন।
ডিবিপ্রধান বলেন, মিল্টন কাউকে পরোয়ানা না করার কারণ হলো, অনেক বিশেষ ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তার। অনেকে আবার মিল্টনের আশ্রমে অনাথ শিশু ও অসুস্থ মানুষ দিয়ে যেতেন। কিছুদিন পর যখন তারা খোঁজ নিতে যেতেন, তখন তিনি তাদের ধরে পেটাতেন। এর সবই স্বীকার করেছেন মিল্টন।
৯০০ মরদেহ দাফনের বিষয়ে রিমান্ডে মিল্টন বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও দিয়ে ও লাইভে টাকার লোভে এই তথ্য ছড়াতেন তিনি। ৯০০ মরদেহ কবর দেওয়ার মতো কোনো ঘটনা নেই। বরং তিনি ১৩৫টি মরদেহ দাফন করেছেন। তার আশ্রমে থাকা অনাথ শিশু ও অসুস্থ মানুষদের দেখিয়ে ভিডিও তৈরি করে মানুষের বিবেকে নাড়া দেওয়ার চেষ্টা করতেন তিনি। তার ভিডিও দেখে অনেক মানুষ তাকে টাকা পাঠাতেন।
রোগীদের অপারেশন মিল্টন নিজেই করতেন উল্লেখ করে ডিবিপ্রধান বলেন, তার আশ্রমে কোনো চিকিৎসক না রেখে মিল্টন নিজেই অপারেশন করতেন। অনেক সময় হাত-পা কেটে ফেলতেন। ফলে চিৎকার করতেন রোগীরা। আর এতেই মাদকাসক্ত মিল্টন পৈশাচিক আনন্দ পেতেন। ব্লেড ও ছুরি দিয়ে কাটা-ছেঁড়ার ফলে অনেকে যন্ত্রণায় মারাও গেছেন। কিন্তু তাতে মিল্টনের পাষণ্ড হৃদয় নাড়া দিতো না।
মানবতার ফেরিওয়ালা সেজে যারা প্রতারণা করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, আমরা তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। যে মানবতার ফেরিওয়ালা সেজে টাকা হাতিয়ে নিয়ে মানুষকে সেবা দিচ্ছে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারা তাকে সহায়তা করেছে, কারা তাকে ভিডিও বানানোর পরামর্শ দিয়েছে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
মিল্টনের স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, একবার তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
টিটি/জেডএইচ/জিকেএস