চালের দাম বাড়লে মানুষ হইচই করে, কমলে কৃষক হইচই করে: খাদ্যমন্ত্রী
নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। মানুষের মধ্যে নিরাপদ খাদ্য পৌঁছে দিতে দেশের ৭ বিভাগে সাতটি ভ্রাম্যমাণ ল্যাবরেটরি চালু করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
চালের দামের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশে একসময় মঙ্গা ছিল, তখন মানুষ খাবার পেতো না। চালের দাম বেড়ে গেলে মানুষ হইচই করে, আবার কমে গেলে কৃষকেরা হইচই করে। দেশে এখন আর খাদ্যের অভাব নেই। এটা সরকারের একটি বিরাট অর্জন।’
বুধবার (৮ মে) রাজধানীর শাহবাগে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে আয়োজিত ‘ভ্রাম্যমাণ নিরাপদ খাদ্য পরীক্ষাগার’ উদ্বোধন ও হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেণ মন্ত্রী।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘শুধু ভ্রাম্যমাণ ল্যাবরেটরির মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা কঠিন। তাই ভোক্তা, খাদ্য সরবরাহকারী এবং উৎপাদনকারীদের সবার মনের ল্যাবরেটরি পরিষ্কার করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যতই মোবাইল ল্যাবরেটরি দেই না কেন, যারা ভোক্তা, যারা সরবরাহকারী, যারা উৎপাদনকারী তাদের মনের ল্যাবরেটরি পরিষ্কার করতে হবে। তা না হলে যতই ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করি না কেন, আমার মনে হয় কোনো কাজ হবে না।’
এ সময় সবাইকে নিরাপদ খাদ্য গ্রহণের নির্দেশনা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সবাই মিলে সচেতনতা বৃদ্ধি করি, নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করি, অনিরাপদ খাদ্য বর্জন করি এবং যারা খাদ্য অনিরাপদ করবে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো।’
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য আবু নূর মো. শামসুজ্জামান। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্যসচিব মো. ইসমাইল হোসেন এনডিসি।
সচিব বলেন, ‘খাদ্যের মান বুঝতে পারার সবচেয়ে বড় উপায় হলো খাদ্যপরীক্ষা। পরীক্ষা করতে না পারলে নিরাপদ বা অনিরাপদ কি না বুঝতে পারবো না। জাতীয় পর্যায়ে দেশে ল্যাব সক্ষমতা খুবই সীমাবদ্ধ। ভ্রাম্যমাণ পদ্ধতিতে জেলা বা বিভাগে পরীক্ষা করা ছিল অকল্পনীয়। তাই আজকের দিন বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দিন।’
এসময় তিনি ভ্রাম্যমাণ মোবাইল ল্যাব সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগসহ অন্যদের সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া। তিনি দিনটিকে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের জন্য একটি স্মরণীয় পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেন।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় বিভাগীয় পর্যায়ে খাদ্যের নমুনা পরীক্ষা সহজ করার লক্ষে চীন থেকে সাতটি মোবাইল ল্যাব কেনা হয়েছে।
মোবাইল ল্যাবে যেসব খাদ্য পরীক্ষা করা যাবে
দুধে ডিটারজেন্ট, স্টার্চ, ইউরিয়ার উপস্থিতি, ঘি-তে বনস্পতি/হাইড্রোজিনেটেড এডিবল ফ্যাটের উপস্থিতি, হলুদের গুঁড়ায় লেড ক্রোমেটের উপস্থিতি, মরিচের গুঁড়ায় ইটের গুঁড়ার উপস্থিতি শনাক্ত করা যাবে। গোল মরিচে পেঁপের বীজ মেশানো, নারিকেল তেলে ভেজাল, শাকসবজি-ফলমূলে রং দেওয়া, শাকসবজি-ফলমূলে বালাইনাশকের মাত্রা নির্ণয়, মধুতে চিনির মিশ্রণ, পাউরুটিতে ক্ষতিকর পটাশিয়াম ব্রোমেটের উপস্থিতি, খাদ্যে অননুমোদিত কৃত্রিম রঙের উপস্থিতি, খাদ্যে ক্ষতিকর ভারী ধাতুর উপস্থিতিসহ আরও অনেক পরীক্ষা স্বল্প সময়ে করা যাবে এই মোবাইল ল্যাবরেটরির মাধ্যমে।
অনুষ্ঠানে খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, বরিশাল জেলার নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তাদের কাছে মোবাইল ভ্যানের চাবি হস্তান্তর করা হয়।
এনএইচ/কেএসআর/জিকেএস