ঈদের ছুটিতে চট্টগ্রামে সড়কে ঝরলো ১৩ প্রাণ
ঈদের ছুটিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় এক বিদেশি শিক্ষার্থীসহ প্রাণ হারিয়েছেন ১৩ জন। চট্টগ্রাম নগর, ফটিকছড়ি, বোয়ালখালী, মীরসরাই, সীতাকুণ্ড, চন্দনাইশ ও আনোয়ারা উপজেলায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) ) দিনগত রাত পৌনে ১টার দিকে নগরের পতেঙ্গায় বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে গাড়ি উল্টে জায়দালা (২৪) নামে লাওসের এক নাগরিক নিহত হন। তিনি চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) এর শিক্ষার্থী ছিলেন।
এর আগে রোববার বিকেলে আনোয়ারায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নুর মিয়া (৩৮) নামে এক নসিমনচালকের মৃত্যু হয়। নিহত নুর মিয়া উপজেলার বটতলী ইউনিয়নের ওয়াপদারপাড়া গ্রামের লেদু মিয়ার ছেলে।
এলাকাবাসী জানান, বটতলী রুস্তমহাট থেকে নসিমনে মালবোঝাই করে জুঁইদন্ডী যাওয়ার সময় দ্রুতগতির কারণে আমিনার ঘাটা এলাকায় গিয়ে চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে গাড়িসহ উল্টে পড়ে যায়। এতে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গুরুতর আহত হন নুর। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঈদের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার (১২ এপ্রিল) ফটিকছড়িতে বাসের ধাক্কায় মো. আব্দুল্লাহ (১৭) ও মো. মোস্তাকিন (১৩) নামে দুইজনের মৃত্যু হয়। চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের নাজিরহাট পৌরসভার মধ্য দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নাজিরহাট হাইওয়ের থানার সেকেন্ড অফিসার আনিসুর রহমান জানার, দুই কিশোরের মৃত্যুর ঘটনায় বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ফটিকছড়ি থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
একইদিন (শুক্রবার) চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের পটিয়া উপজেলার মনসারটেক এলাকায় বাসের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই চাচাতো ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন উপজেলার পশ্চিম গোমদন্ডী এলাকার মো. ওসমানের ছেলে মো. হৃদয় (২২) ও ফোরকান বাদশার ছেলে মো. ইমরান।
পটিয়ার হাইওয়ে থানা পুলিশ জানিয়েছে, মোটরসাইকেল আরোহী হৃদয় ও ইমরান শান্তির হাট এলাকা থেকে বোয়ালখালীর দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় পটিয়া থেকে ছেড়ে যাওয়া চট্টগ্রামমুখী একটি যাত্রীবাহী লোকাল বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বাইক আরোহী দুজন ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। ঘাতক বাসটি জব্দ করেছে পুলিশ।
এদিন মীরসরাইয়ে সড়ক পার হওয়ার সময় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নিহত হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জানে আলম চৌধুরী (৭০)। শুক্রবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী অংশের সুফিয়ারোড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত জানে আলম চৌধুরী মীরসরাই সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নওশা মিয়া চেয়ারম্যান বাড়ির বাসিন্দা।
মীরসরাই সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসুল আলম দিদার বলেন, শুক্রবার সকালে সুফিয়ারোড এলাকায় নুর জাহান ক্লাবের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি দ্রুত গতির মোটরসাইকেল ধাক্কা দিলে গুরুতর আহত হন জানে আলম চৌধুরী। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শুক্রবার মাগরিবের নামাজের পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এদিকে শুক্রবার (১২ এপ্রিল) রাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশে দ্রুতগতির কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় জাহাঙ্গীর আলম (৪০) নামে এক অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত জাহাঙ্গীর সাতকানিয়া নতুন চর খাগরিয়া এলাকার মৃত বকসু মিয়ার ছেলে।
এছাড়া সীতাকুণ্ডে ঈদের ছুটিতে পৃথক তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় অন্তত ১৭ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার শীতলপুর আবুল খায়ের কারখানার গেট সংলগ্ন এলাকায় ও শনিবার রাতে বারআউলিয়া এবং ভাটিয়ারী বানুর বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বারআউলিয়া হাইওয়ে থানার ওসি খোকন চন্দ্র ঘোষ।
পৃথক তিনটি দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার বাসিন্দা মো. নুরের নবী শিমুল (২৪), কুমিল্লা চান্দিনার বাসিন্দা গৌতম নাথ (৫০), চট্টগ্রামের পতেঙ্গার বাসিন্দা উম্মে নুরাইয়া মেহজাবীন (১৩), সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ফুলতলা এলাকার বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন রাফসান (১৩) ও মানসিক ভারসাম্যহীন অজ্ঞাতপরিচয় (৩২) এক নারী।
এএজেড/বিএ/এমএস