ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

বৃষ্টি হলেও গরম কমছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৪:৪৩ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

বৈশাখের শুরুর দিনই তাপমাত্রার পারদ ওঠে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার (১৫ এপ্রিল) দ্বিতীয় দিনে তা আরও বেড়ে ঠেকেছে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রিতে। পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, যা ওই উপজেলায় ৪৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

শুধু খেপুপাড়া নয়, তীব্র গরমে রাজধানী ঢাকার জনজীবনও অতিষ্ঠ। অসহনীয় গরমে হাঁসফাঁস নগরজীবন। ঢাকায় সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি রেকর্ড করা হলেও অনুভূতি যেন আরও বেশি। তাপপ্রবাহের কারণে গণপরিবহনের যাত্রী ও পথচারীরা ভীষণ কষ্টে চলাচল করছেন। ফুটপাতের খোলা দোকান ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের জীবনযাপন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। এরমধ্যে মঙ্গলবার বিকেলের দিকে বৃষ্টি হয় রাজধানীতে। কিন্তু এতে কমেনি গরম।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, চলতি এপ্রিল মাসের বাকি সময়জুড়ে দেশে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।

আরও পড়ুন: 

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় দমকাসহ ঝড়ো হওয়া বয়ে যেতে পারে। তবে খুব বেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বর্তমানে দেশের সাত বিভাগে তাপপ্রবাহ বইছে। আগামী আরও কয়েকদিন এ তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।

প্রচণ্ড গরমে বেশি বিপাকে পড়েছেন রিকশাচালকরা। গুলশান-১ থেকে বনানী এলাকায় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন আশরাফ হোসেন। গ্রামের বাড়ি জামালপুরে। থাকেন কড়াইল বস্তিতে। মঙ্গলবার দুপুরে গুলশান-১ নম্বর চত্বর থেকে কিছুটা সামনে এগিয়ে গলির রাস্তায় তার সঙ্গে কথা হয়।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার তো পায়ে চালানো রিকশা। দুই প্যাডেল মারলেই গলাডা শুকিয়ে আসে। এত গরম যে মাথার মধ্যে ঘুরিয়ে উঠছে। কিন্তু ভাড়া না মারলে তো সংসার চলবে না। কবে বৃষ্টি হইবো, দুনিয়াডা একটু ঠান্ডা হইবো?’

বৃষ্টি হলেও গরম কমছে না

দুপুর আড়াইটার দিকে ভ্যানভর্তি সবজি নিয়ে গোদারাঘাটে আসতে দেখা যায় ফুটপাতের সবজি বিক্রেতা আজম আলীকে। তিনি বলেন, ‘মাত্রই ভ্যানটা নিয়ে আইলাম। গরমে ঘেমে-নেয়ে শ্যাষ। এ গরমে মানুষও বের হইতেছে না। বেচাবিক্রি নেই। তারপরও দোকান তো খুলতেই হইবো। এমন গরম আর কয়েকদিন পড়লে বাইরে বের হওয়া কঠিন হইয়া পড়বো।’

আরও পড়ুন: 

ভাটারা থানার সামনে ফুটওভার ব্রিজের পাশে বড় ছাতা টাঙিয়ে চা বিক্রি করেন মধ্যবয়সী হারুন। প্রচণ্ড গরমে ঠাঁই দাঁড়িয়ে দোকান চালাচ্ছেন। পেছনে ছোট একটি টেবিল ফ্যান চালু করে রেখেছেন। তবে তা শরীরে লাগছে না বলে জানালেন হারুন। তিনি বলেন, ‘য্যাই গরমের ঠেলা, এ ফ্যানে কিচ্ছু হইবো না। বাতাস গায়ে লাগলেও টের পাইতেছি না। ফ্যান চালাইতো হইবো, তাই চালাইতেছি। মনের বুঝ দেওয়া ছাড়া আর কিছুই না।’

এদিকে, গরমে গণপরিবহনে চলাচল করা যাত্রীরাও নিদারুণ কষ্টে যাতায়াত করছেন। ছুটি শেষে অফিস চালু হওয়ায় অনেক রুটে মঙ্গলবার যানজট দেখা গেছে। কোনো কোনো রুটে ধীরগতিতে চলছে গাড়ি। রাস্তায় গণপরিবহন সংকটে কিছু রুটে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের।

ভিক্টর ক্লাসিক, রাইদা, রাজধানীসহ বেশ কিছু পরিবহনের যাত্রীদের দাঁড়িয়ে যেতে দেখা গেছে। এসব পরিবহনের অনেক বাসে ফ্যানও ঠিকমতো চলছে না। গরমে গাদাগাদি করেই চলাচল করছেন যাত্রীরা।

নতুনবাজার থেকে ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের একটি বাসে উঠেছেন সজীব হোসেন। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। দোকানের জন্য মালামাল কিনতে যাবেন গুলিস্তানে।

সজীব বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে গাড়িতে উঠলাম। ভিড় দেখে কয়েকটা বাস ছেড়ে দেওয়ার পর বাধ্য হয়ে এটাতে উঠতে হলো। এখন দাঁড়িয়ে যাচ্ছি। চাপাচাপিতে দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম।’

বৃষ্টি হলেও গরম কমছে না

অন্যদিকে তীব্র গরমে রাজধানীর ছোট ছোট বিভিন্ন মার্কেটের বিক্রেতারাও কষ্টে রয়েছেন। দিনভর ফ্যানের নিচে থাকলেও স্বস্তি মিলছে না। আবার মাঝে-মধ্যেই লোডশেডিং হচ্ছে। সেসময় মার্কেটের ভেতরে বসে থাকা দায় হয়ে পড়ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

মধ্যবাড্ডা পোস্ট অফিস গলির বিপরীত দিকের কাপড়ের মার্কেটের দোকানি আনসার উদ্দিন। দোকান থেকে বেরিয়ে পায়চারি করে বেড়াতে দেখা যায় তাকে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘গরমে মার্কেটের ভেতরটা একেবারে দোজখে পরিণত হয়েছে। বইসা থাকা যায় না। ক্রেতা তো নেই-ই। দোকানডা পাহারা তো দিতে হইবো। সেজন্যই আশপাশে হাঁটাহাঁটি করতেছি।’

ঢাকায় বৃষ্টি হলেও কমেনি গরম

এদিকে, সকাল থেকে প্রচণ্ড রোদ থাকলেও বিকেল সোয়া ৩টার দিকে হঠাৎ ঢাকার আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখা যায়। এতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর কিছু এলাকায় বৃষ্টিও হয়।

তবে এতে গরম কমার তেমন সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, চলতি এপ্রিল মাসের বাকি সময়জুড়ে দেশে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। কোথাও কোথাও হয়তো তাপমাত্রা ওঠানামা করতে পারে। মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

এএএইচ/জেডএইচ/এমএস