সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে উদীচীর বর্ষবরণ, যা বলছে ডিএমপি
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উদীচীর প্রতিবাদ সমাবেশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার বিষয়টি অত্যন্ত অনভিপ্রেত ও বিব্রতকর বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) কে এন রায় নিয়তি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলা নববর্ষ উদযাপনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার যে নির্দেশনা জারি করেছে সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অনুষ্ঠান করার বিষয়টি ডিএমপির দৃষ্টিগোচর হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান সমাপ্ত করা সংক্রান্ত সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার বিষয়টি অত্যন্ত অনভিপ্রেত ও বিব্রতকর।
আরও পড়ুন
নির্দেশনা উপেক্ষা করে উদীচীর অনুষ্ঠান-নেতিবাচক বিবৃতি দুঃখজনক
এবার ঈদ ও নববর্ষে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি
এতে বলা হয়, খুব স্বাভাবিকভাবেই নববর্ষ উদযাপনে নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের কর্তব্য। পুলিশের এই নিরাপত্তা কার্যক্রমে সব জনগণ সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবেন এটাই কাম্য। যেন আনন্দের এই অনুষ্ঠান বিষাদে পরিণত না হয়ে যায়। নিরাপত্তা বিধানে প্রদত্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশনা না মেনে তার বিরোধিতা করে অনুষ্ঠান করা খুবই দুঃখজনক এবং উদীচীর মতো প্রগতিশীল একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের কাছ থেকে যা কখনো কাম্য নয়।
ডিএমপি আরও বলেছে, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কর্তৃক সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অনুষ্ঠান আয়োজন ও সেখানে প্রদত্ত বক্তব্য খুবই হতাশাজনক। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে তাদের এহেন কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। অতীতেও উদীচীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে উগ্রবাদী হামলার ইতিহাস রয়েছে বিধায় উদীচী তাদের নিজেদের ও জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে ভবিষ্যতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে বলে প্রত্যাশা।
পহেলা বৈশাখ বাংলা ও বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসব। সব ধর্মের মানুষের কাছে এটি একটি সর্বজনীন উৎসব। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবারই উৎসব উদযাপনে থাকে বিশেষ প্রস্তুতি। বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক যেন এই দিনটি। বিশেষত দিনটি রঙিন হয়ে ওঠে বাঙালি পোশাকে, আয়োজনে এবং আপ্যায়নে। কিন্তু এর আগে বিভিন্ন সময়ে বাঙালি সংস্কৃতির ধারক এই পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ওপর উগ্রবাদী আঘাত এসেছে। বারবার চেষ্টা করা হয়েছে সংস্কৃতি যাত্রাকে ব্যাহত করার। উগ্রবাদের এই ভয়াল থাবা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে বিভিন্ন সময়ে আক্রমণ করেছে, আঘাত করেছে সৃজনশীল ও সংস্কৃতমনা মানুষদের।
আরও পড়ুন
পহেলা বৈশাখে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নেই: ডিএমপি কমিশনার
ডিএমপির বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, উগ্রবাদীদের এই নৃশংসতায় প্রাণ দিয়েছেন অনেক কবি, সাহিত্যিক, অধ্যাপক, ব্লগারসহ মুক্তমনা এবং রুচিশীল ব্যক্তিত্ব। সর্বোপরি জঙ্গি সংগঠনগুলোর টার্গেট হলো বাঙালি সংস্কৃতির অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করে দেশের মধ্যে একটি অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা যা তাদের কার্যক্রমে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়। এদেশে প্রথম জঙ্গি হামলা হয়েছিল ১৯৯৯ সালে, যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে। পরবর্তীকালে ২০০১ সালে রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা, যাত্রা প্যান্ডেলে বোমা হামলা, সিনেমা হলে বোমা হামলা, ১৭ আগস্টের সিরিজ বোমা হামলার পর বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলা হয় গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয়। এসকল হামলায় অনেক মানুষের মূল্যবান জীবনহানি হয়েছে এবং অনেকে পঙ্গু হয়েছেন। হামলা প্রতিরোধ করতে ও জনগণের জীবন বাঁচাতে গিয়ে পুলিশের অনেক সদস্য জীবন দিয়েছেন, আহত হয়েছেন বহুজন।
এর আগে নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে গত কয়েক বছরের মতো এবারও বর্ষবরণের আয়োজন সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছিল সরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছিল, ক্যাম্পাসে সব আয়োজন বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে। কিন্তু উদীচী সে নির্দেশনা মানবে না বলে ঘোষণা দেয়। তারা পহেলা বৈশাখে সন্ধ্যা ৬টা থেকে শাহবাগে ‘বর্ষবরণ মানে না শৃঙ্খল' শিরোনামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে।
টিটি/এমকেআর/জেআইএম