শহর থেকে হারিয়েছে পান্তা-ইলিশ
নানা আয়োজন সারাদেশে উদযাপিত হচ্ছে বাংলা বছরের প্রথম দিন, পহেলা বৈশাখ। বৈশাখের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ মেলা, মঙ্গল শোভাযাত্রা, গান, আবৃত্তি, মাটির পুতুল, কাঠের তৈজসপত্র ইত্যাদি থাকলেও হারিয়ে গেছে পান্তা-ইলিশ।
রোববার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে শাহবাগ, টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নানান শ্রেণিপেশার মানুষকে প্রাণের উৎসবে শামিল হতে দেখা গেছে। এসব এলাকায় ফুচকা, বিরিয়ানি, জুস, বাতাসা বিক্রির দেখা মিললেও, পান্তা-ইলিশ ছিল অনুপস্থিত।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন শাহবাগে রয়েছে বেশ কয়েকটি ভাতের হোটেল। ওইসব হোটেলেও বিক্রি হচ্ছিল সাদা ভাত, রুই, তেলাপিয়া মাছ, গরু ও মুরগীর মাংস। আছে পোলাউ, বিরিয়ানির ব্যবস্থা। অন্য সময়ে ইলিশ বিক্রি করলেও পহেলা বৈশাখের দিনে নেই সুস্বাদু মাছটি।
মৌলি রেস্তোরাঁর ম্যানেজার ইখলাস খান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা পান্তা-ইলিশ বিক্রি করি না। কেউ খেতে চায় না, আবার ইলিশের দামও বেশি। এইখানের কোনো রেস্তোরাঁ বিক্রি করে না পান্তা-ইলিশ, কিছু চাইনিজ রেস্তোরাঁ বিক্রি করে শুনেছি।
আরও পড়ুন
জানা যায়, আশির দশক থেকে বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়। আবহমানকাল ধরে পান্তা ছিল বাঙালির দৈনন্দিন খাবার। তবে পান্তা-ইলিশ পহেলা বৈশাখের কোনো খাবার ছিল না। নববর্ষের প্রথম দিনে বাংলার ঘরে ঘরে সাধ্যমতো ভালো খাবার পরিবেশনের চল ছিল। ছিল হালখাতা ও দই-মিষ্টির প্রচলন।
জানা যায়, আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় রমনার বর্ষবরণ অনুষ্ঠান জনপ্রিয় হয়। সেই সময় ছায়ানটের বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের পাশেই বিক্রি শুরু হয় পান্তা ইলিশের। পরে মাটির সানকিতে করে পান্তা ইলিশের সঙ্গে যোগ হয় নানা পদের ভর্তাও। সেই সময়ে কিছু বাড়তি উপার্জনের আশায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ও হকাররা রমনা বটমূল এবং টিএসসিতে পান্তা-ইলিশ বিক্রি শুরু করলে তা রীতিমতো তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। অনেকের মতে তখন পান্তা ইলিশ হয়ে দাঁড়ায় বাঙালিয়ানার অন্যতম অনুষঙ্গ। প্রথম পর্যায়ে ইলিশ মাছ দুর্লভ না হওয়ায় পান্তা ইলিশ অনেকেরই সাধ্যের মধ্যেই ছিল। একুশ শতকের মাঝামাঝি ইলিশ হয়ে উঠে বহু আরাধ্যের বস্তু।
সংশ্লিষ্টরা জানান, একসময় কেবল ঢাকা কিংবা বিভাগীয় শহরগুলোই নয়, জেলা শহরের অলিগলিতেও নববর্ষের দিনে পান্তা-ইলিশের বিক্রি হতো। একপর্যায়ে বেড়ে যায় ইলিশের দাম। পাশাপাশি শুরু হয়ে জাটকা নিধন কর্মসূচি।
বর্তমানে ছোট ইলিশ মাছকে বেড়ে ওঠার সুযোগ দিতে পদ্মা ও মেঘনা, কালাবদর, তেঁতুলিয়া নদীসহ দক্ষিণাঞ্চলে মাছের পাঁচ অভয়াশ্রমে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে। এসবের কারণে শহরে কমছে পান্তা-ইলিশ সংস্কৃতি।
টিএসসিতে কথা হয় পেশাজীবী লিয়াকত আবেদিনের সঙ্গে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বিভাগের সাবেক ছাত্র।
জাগো নিউজকে তিনি বলেন, এক দশক আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রমনায় পান্তা-ইলিশ বিক্রি হতো। কালের পরিক্রময়ায় সেটা হোটেল রেস্তোরাঁ থেকে হারিয়েছে। কারণ ইলিশের চড়া মূল্য। এক কেজি একটা ইলিশের দাম ২০০০-২৫০০ টাকা। এই ইলিশ পিস করে বিক্রি করলে সাধারণ ক্রেতা কিনতে পারবেন না।
তিনি বলেন, পান্তা-ইলিশ এখন মধ্য ও উচ্চবিত্তের মানুষের রান্না ঘরে প্রবেশ করেছে। রেস্তোরাঁয় কম দামে অনেক খাবার আছে।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ইলিশ তো পাওয়া যায় না। তার ওপর উচ্চমূল্য। মানুষের কিনে খাওয়ার উপায় নেই।
ফেসবুকে হাতে গোনা কয়েকটি হোটেলের পান্তা-ইলিশ বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখা যায়। জিগাতলার রুফটফিয়া রেস্তোরাঁয় ৩-৪ পদের ভর্তাসহ পান্তা-ইলিশ বিক্রি করছে ৩০০ টাকায়।
রেস্তোরাঁটির ম্যানেজার অলিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ভালো কাস্টমার পাচ্ছি। ৩০০ টাকায় পান্তা-ইলিশের সঙ্গে কয়েকপদের ভর্তা রয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য খাবার আছে।
বনানীর চা বাগান তিন পদের ভর্তা, সালাদ, বেগুন,ডাল দিয়ে পান্তা-ইলিশ বিক্রি করছে ৭৫০ টাকায়।
রেস্তোরাঁটির ম্যানেজার ইমরান বলেন, আমাদের এখানে পান্তা ভাতের পাশাপাশি সাদা ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। আমাদের বিক্রি ভালোই।
এসএম/এসআইটি/এমএস