ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

এসেছে প্রাণের উৎসব ‘নববর্ষ’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৬:৩৯ এএম, ১৪ এপ্রিল ২০২৪

‘নিশি অবসান প্রায়/ওই পুরাতন বর্ষ হয় গত!/আমি আজি ধূলিতলে এ জীর্ণ জীবন/করিলাম নত/বন্ধু হও শত্রু হও/যেখানে যে কেহ রও/ক্ষমা করো আজিকার মতো/পুরাতন বর্ষের সাথে পুরাতন অপরাধ যত।’

নানা ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাতে বিদায় নিয়েছে ‘১৪৩০’। রোববার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ, বাংলা সন ১৪৩১-এর প্রথম দিন। শুভ নববর্ষ।

বাংলা নববর্ষ বাঙালিদের ঐতিহ্যের নিজস্বতায় ধর্ম, বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠা একমাত্র সর্বজনীন উৎসব। গ্রামীণ কৃষ্টি ও সংস্কৃতির পহেলা বৈশাখ এখন শহরের আঙিনায় আলোকিত প্রাণের উৎসব। গ্রাম থেকে শহরে আনন্দমুখর পরিবেশ ও নানান অনুষ্ঠানে বরণ করে নেওয়া হবে নতুন বছর।

উৎসব হিসেবে পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশিদের আবেগের তীব্রতায় জাতি সত্তার প্রতীক হয়ে উঠেছে। আমিত্বের খোঁজ পাওয়া একমাত্র উৎসব যেন এই নববর্ষ।

নববর্ষকে স্বাগত জানাতে রোববার তরুণীরা লালপেড়ে সাদা শাড়ি, হাতে চুড়ি, খোপায় ফুল, গলায় ফুলের মালা এবং কপালে টিপ পরবেন। ছেলেরা পরবেন পাজামা ও পাঞ্জাবি। নগরের পথে পথে দেখা মিলবে এ তরুণ-তরুণীদের।

অনেক নগরবাসীই দূর-দূরান্তে থাকা প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে গেছেন। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়ছে। তবে এবার ঈদের ছুটির সঙ্গে নববর্ষ মিশে যাওয়ায় রাজধানীর অনেক মানুষ এখনও ফেরেননি। তাই এবার নববর্ষ উদযাপনে নগরে লোকসমাগমে ভাঁটা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গ্রামগুলো থাকবে সরগরম।

দেশে বর্ষবরণের মূল অনুষ্ঠান হবে রাজধানীর রমনার বটমূলে। পহেলা বৈশাখ সকালে ছায়ানটের উদ্যোগে বটমূলে রবীন্দ্রনাথের ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’-এর মাধ্যমে নতুন বর্ষকে বরণ করে নেওয়া হবে। পহেলা বৈশাখ রাজধানীর সব পথ যেন গিয়ে মিশবে রমনার বটমূলের বর্ষবরণের অনুষ্ঠান স্থলে। নানা অনুষঙ্গে উৎসব মুখরতা ছড়িয়ে পড়বে পুরো দেশময়।

তবে এখানেই ২০০১ সালে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হন।

এখন বাংলা নববর্ষের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালে জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে হওয়া এ শোভাযাত্রা। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য- ‘আমরা তো তিমিরবিনাশী’।

শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের প্রতীকী উপস্থাপনের নানা বিষয় স্থান পেয়ে থাকে।

পহেলা বৈশাখ সরকারি ছুটির দিনে ভালো রান্না হবে ঘরে ঘরে। একে অপরকে মিষ্টি মুখ করাবেন। শিশুরা লাল-সাদার মিশেলে বৈশাখী পোশাকে ঘুরে বেড়াবে। একদিন আগে শুরু হলেও নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়ে চলবে রোববার সারাদিন। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো এখন নববর্ষের উৎসবের রঙ্গে রঙিন।

শহরের নববর্ষের সকালবেলা পান্তা-ইলিশ খাওয়া একটি রীতিতে পরিণত হয়েছে। এটাকে ঘিরে অনৈতিক ব্যবসাও পাখা মেলেছে। নববর্ষের আগে ইলিশ হয়ে হয়ে যায় যেন ‘সোনার হরিণ’। কয়েকগুণ বেশি দামে কিনতে হয় ইলিশ।

অন্যান্য বছরের মতো এবারের বর্ষবরণে উৎসব নিয়েও সতর্ক অবস্থানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের মূল ভেন্যু রমনা বটমূল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি এবং চারুকলাসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছে, সন্ধ্যার পর খোলা স্থানে বর্ষবরণের কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না। মঙ্গল শোভাযাত্রায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে ভুভুজেলা। রাজধানীতে বিভিন্ন সড়কে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল।

অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। গ্রামে-গঞ্জে-নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষে পুরানো হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে হিসাবের নতুন খাতা খুলতেন। এজন্য নতুন-পুরাতন ক্রেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করতেন, পুরনো হিসাব চুকিয়ে নিতেন। আগের মতো না হলেও এখনও আছে হালখাতা। যেমন গ্রামে, তেমন শহরে। পুরনো ঢাকার ব্যবসায়ীরা এখনও নববর্ষে হালখাতা করে থাকেন।

নববর্ষের উৎসব মুখরতায় ভিন্ন মাত্রা নিয়ে আসে বৈশাখী মেলা। এখনও গ্রামে-গঞ্জে বৈশাখী মেলা বসে। অন্যান্য বছর নববর্ষ উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে, কিন্তু এবার ঈদের ছুটির কারণে সেই উদ্যোগ খুব একটা নেই।

ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কনসার্ট হবে। অভিজাত রেঁস্তোরাগুলোতে নববর্ষে পান্তা-ইলিশসহ বিভিন্ন খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা জি এম কাদের। এছাড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশবাসীকে।

আরএমএম/এমআরএম