খাবার মান নিশ্চিত
আবাসিক ভবনের রেস্তোরাঁয় আলাদা অভিযান চালানো যাবে না
আবাসিক ভবনে থাকা রেস্তোরাঁগুলোর খাবারের মান নিশ্চিত করতে আর খেয়াল-খুশিমতো অভিযান চালাতে পারবে না নিয়ন্ত্রক দপ্তর ও সংস্থাগুলো। সরকারের পক্ষ থেকে সমন্বিতভাবে এসব অভিযান পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
তিনি জানিয়েছেন, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা সমন্বয় করবে। তবে ভবন অনুমোদন ও অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতে আলাদা সংস্থা অভিযান চালাতে পারবে।
রোববার (৩১ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার টিসিবি ভবনে আয়োজিত ‘আবাসিক ভবনে রেস্তোরাঁ ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অভিযান পরিচালনাকারী দপ্তর/সংস্থা কর্তৃক পৃথকভাবে অভিযান পরিচালনা না করে সম্মিলিতভাবে অভিযান পরিচালনা’ করার লক্ষ্যে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে সফিকুজ্জামান বলেন, বেইলি রোডে একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণহানির পর সরকরি বিভিন্ন তদারকি সংস্থা মাঠে কাজ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় আবাসিক ভবনে রেস্তোরাঁ ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অভিযান পরিচালনাকারী দপ্তর বা সংস্থা কর্তৃক পৃথকভাবে অভিযান পরিচালনা না করে সম্মিলিতভাবে অভিযান পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত কার্যকরে পরবর্তীতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সভা করে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হয়।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, রেস্তোরাঁ কীভাবে লাইসেন্স পাবে, সেটার ভবন অবকাঠামো ও অগ্নিনিরাপত্তা, পরিবেশের নিয়মকানুন ঠিক আছে কি না, সেটা একটা অংশ। আমরা রেস্তোরাঁ মনিটরিংটা দেখছি। যারা মনিটরিং করে তাদের অংশটুকু আমি সমন্বয় করবো। যেসব কর্তৃপক্ষ অভিযান বা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তাদের মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার, শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বিএসটিআই, শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে কলকারখানা অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার থেকে জেলা প্রশাসক, সিটি করপোরেশন, রাজউক করে। পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে পরিবেশ অধিদপ্তর করে, অর্থমন্ত্রণালয় থেকে কর অঞ্চলগুলো করে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সিভিল সার্জন হেলথ সেফটি দেখে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে র্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস দেখে।
তিনি আরও বলেন, রেস্তোরাঁর জন্য ডিসির কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। ডিসির কাছ থেকে নিবন্ধন ও লাইসেন্স ও নিতে হয়। কলকারখানা, সিভিল ডিফেন্স, বিএসটিআই, পরিবেশ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড ও প্রিমিসেস লাইসেন্স নিতে হয়। আর সিভিল সার্জনের কাছ থেকে কর্মচারী সনদ নিতে হয়। তবে ফুড সেফটি নিয়ে ঢাকার রেস্তোরাঁয় যে অভিযানগুলো হয় সেগুলো আমরা সমন্বয় করবো।
রোববারের সভায় জানানো হয়, গত ২১ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সব সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে মোবাইল কোর্ট সমন্বিতভাবে করার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রত্যেক দপ্তর/সংস্থার অভিযানের পর অভিযানের স্থান, তারিখ ও ফলাফল হোয়াটসঅ্যাপ আপলোড করবে। অভিযান পরিচালনাকারী দপ্তর/সংস্থার ফোকাল পয়েন্টদের নিয়ে এ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলতে হবে। উপপরিচালকের নিচে নয় এমন কর্মকর্তা ফোকাল পয়েন্ট দায়িত্ব পালন করবেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তর/সংস্থা ফোকাল পয়েন্টের নাম মহাপরিচালক, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে প্রেরণ করবে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিন হবেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর বা সংস্থার মহাপরিচালক বা প্রধানকে গুপে সংযুক্ত করা হবে। এছাড়া অভিযান পরিচালনাকারী দপ্তর বা সংস্থা নিজেদের অভিযান পরিচালনা কার্যক্রমের একটি চেকলিস্ট তৈরি করে নিজেদের মধ্যে শেয়ার করবেন এবং নিজ নিজ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবেন।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা এবং রেস্তোরাঁ মালিকদের সঙ্গে সময়ে সময়ে সভা করে কমপ্লায়েন্স বিষয়ে রেস্তোরাঁ মালিকদের ধারণা দেবেন। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে রেস্তোরাঁর তালিকা সরবরাহ করবে
খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং ট্রেড লাইসেন্সের তালিকা সরবরাহ করবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। অভিযানে শিক্ষামূলক এবং অনুপ্রেরণামূলক লিফলেট বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। রেস্তোরাঁয় অভিযান পরিচালনা সমন্বয়ের জন্য দুই মাস পরপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিব পর্যায়ে সভা করতে হবে।
আরও পড়ুন
সফিকুজ্জামান বলেন, ধরপাকড় করা বা পুলিশিং করা আমাদের কাজ না। সমস্যা চিহ্নিত করা, ভোক্তাবান্ধব ও আইনের প্রকৃত প্রয়োগ করতে হবে।
সভায় বিএসটিআইয়ের উপ-পরিচালক রিয়াজুল হক বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান মূলত ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে কাজ করে। কাউকে হ্যারাজমেন্ট (হয়রানি) করা আমাদের উদ্দেশ্য না। কোনো ব্যবসায়ী যাতে অহেতুক হ্যারাজমেন্টের শিকার না হন সেই বিষয়টা আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখবো। তবে কেউ যদি খাদ্যপণ্যে ভেজাল দেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবো। প্রসেসড ফুট যেমন রুটি, দই এসব পণ্যের বিএসটিআই সনদ আমরা দেখি। উৎপাদন তারিখ, মেয়াদ এসব আমরা দেখি।
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হোসেন বলেন, মোবাইল কোর্টটা যেভাবে পরিচালনা করা হয় এটা সম্পূর্ণ অপমানজনক। আসলে এটা আমাদের মালিক সমিতির জন্য অপমানজনক না, এটা সম্পূর্ণ দেশের জন্য অপমানজনক। আমি মনে করি অভিযানে অবশ্যই ফুড এক্সপার্ট রাখা প্রয়োজন।
ডিসি অফিসের সহকারী কমিশনার আখি বেগম বলেন, রেস্তোরাঁগুলোর অনুমোদন দেওয়াত ক্ষেত্রে সরেজমিনে তদন্তে যাবেন ম্যাজিস্ট্রেটরা।
এ সময় সভায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগ) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. আবু ইউসুফ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুব হাসান, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মো. নিয়াজ আলী চিশতি, ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার আঁখি শেখ, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক মো. আব্দুস সোবহান, বিএসটিআইয়ের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজুল হক, কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিনিধি ড. মঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার উপস্থিত ছিলেন।
এসএম/ইএ/জেআইএম
সর্বশেষ - জাতীয়
- ১ ১৮ বছর পর দেশে ফিরলেন রবিউল, বাবাকে ছুঁয়ে দেখলো তিন সন্তান
- ২ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও প্রতিষ্ঠায় তরুণদের এগিয়ে আসা জরুরি
- ৩ সাবেক মুখ্যসচিব তোফাজ্জলের দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে
- ৪ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে আন্তর্জাতিক ট্যুরিস্ট স্পটে রূপ দিতে চাই
- ৫ সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র: জাতীয় নাগরিক কমিটি