ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ভারতের পণ্য বয়কটে লোকসান হবে বাংলাদেশের

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০১:৫৭ পিএম, ২৯ মার্চ ২০২৪

# ভারতের পণ্য বর্জন করলে তো চীন-রাশিয়ার পণ্যও বর্জন করতে হবে
# বাংলাদেশকে ‘দ্বিতীয় পাকিস্তান’ বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে
# ইন্ডিয়া বয়কটের রাজনীতি খুবই নোংরা-দেশবিরোধী
# দেশে জিহাদি উন্মাদনা তৈরি করতে চায় বিএনপি-জামায়াত

দেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের যে দাবি উঠেছে, তা বিএনপি-জামায়াতের ভারতবিরোধী বিশেষ আন্দোলন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে জিহাদি উন্মাদনা তৈরির চেষ্টা চলানো হচ্ছে। এমন মন্তব্য করেছেন লেখক, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

তার মতে, বিএনপি-জামায়াত মূলত বাংলাদেশকে দ্বিতীয় পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্র করছে। সম্প্রতি ভারতীয় পণ্য বর্জন নিয়ে দেশের রাজনীতিতে যে কথা চালাচালি চলছে, তার নানান দিক ও প্রসঙ্গ নিয়ে জাগো নিউজের কাছে মতামত ব্যক্ত করেন শাহরিয়ার কবির।

তিনি বলেন, ‘ইন্ডিয়া বয়কট’র রাজনীতি নতুন প্রজন্মের কাছে অসাধারণ ঘটনা মনে হতেই পারে। কিন্তু আমরা ইন্ডিয়া বয়কটের রাজনীতি পাকিস্তান আমল থেকেই দেখে আসছি। ১৯৬৫ সালের দিকে এমন আন্দোলন হয়েছে।

 

যারা এখন ইন্ডিয়া বয়কটের রাজনীতি করছেন তাদের চেনার তো বাকি নেই। তারা মূলত বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করছে। জামায়াত-বিএনপির এজেন্ডাই হচ্ছে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানো। পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করা না গেলেও ‘দ্বিতীয় পাকিস্তান’ বানানোর ষড়যন্ত্র চলছেই। আর এর অন্যতম অভিব্যক্তি হচ্ছে ভারত বিরোধিতা

 

‘যারা এখন ইন্ডিয়া বয়কটের রাজনীতি করছেন তাদের চেনার তো বাকি নেই। তারা মূলত বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করছে। জামায়াত-বিএনপির এজেন্ডাই হচ্ছে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানো’- বলেন এ লেখক-গবেষক।

তিনি বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করা না গেলেও ‘দ্বিতীয় পাকিস্তান’ বানানোর ষড়যন্ত্র চলছেই। আর এর অন্যতম অভিব্যক্তি হচ্ছে ভারত বিরোধিতা। যার একটি রূপ হচ্ছে ভারতীয় পণ্য বজর্নের ঘোষণা। ইন্ডিয়া বয়কটের রাজনীতি খুবই নোংরা। এর সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ইন্ডিয়া বয়কটের রাজনীতি দেশবিরোধী। এছাড়া ভারতের পণ্য বয়কট করলে সেটি বাংলাদেশেরই লোকসান হবে।

আরও পড়ুন

‘ভারত থেকে যেসব পণ্য আসছে তা আমাদের প্রয়োজনে। প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেছেন। ভারতের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের সাড়ে ৩ শতাংশ বাংলাদেশের সঙ্গে। এই সাড়ে ৩ শতাংশ বাণিজ্য বাংলাদেশের সঙ্গে না করলে ভারতের বিশেষ কোনো ক্ষতি হবে না। তারা অন্য দেশের সঙ্গে এটি করবে। কারণ, তাদের অর্থনীতির আকার বিশাল। কিন্তু তখন আমাদের দেশের মানুষ না খেয়ে মারা যাবে।’

ভারতের পণ্য বয়কটভারতীয় পণ্য আমদানির অন্যতম প্রবেশদ্বার বেনাপোল স্থলবন্দর

শাহরিয়ার কবিরের ভাষ্য, জরুরি সময়ে পেঁয়াজ, আলু, চাল, ডাল এমনকি ডিম, কাঁচামরিচও আনতে হয় ভারত থেকে। চীন থেকে আনতে গেলে আমাদের খরচ বেশি হবে। আমেরিকা, ইউরোপ থেকে আলু আনতে গেলে তো দাম পড়বে এক হাজার টাকা কেজি। বাংলাদেশের প্রয়োজনে একবার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ভারত আমাদের কাছে পেঁয়াজ রপ্তানি করেছিল। আমরা একটি অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে পরিচিত হতে চাই না।

‘মুক্তিযুদ্ধের কথা বাদই দিলাম। ভারত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দেয় আমাদের প্রয়োজনে। বিএনপি নেতারা এক হাজার টাকা কেজি দামে আলু কিনে খেতে পারবেন। কিন্তু আমাদের দেশের গরিব মানুষ তো পারবে না। তারা তো না খেয়ে মরবে।’

 

পেঁয়াজ, আলু, চাল, ডাল এমনকি ডিম, কাঁচামরিচও আনতে হয় ভারত থেকে। চীন থেকে আনতে গেলে আমাদের খরচ বেশি হবে। আমেরিকা, ইউরোপ থেকে আলু আনতে গেলে তো দাম পড়বে এক হাজার টাকা কেজি। বাংলাদেশের প্রয়োজনে একবার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ভারত আমাদের কাছে পেঁয়াজ রপ্তানি করেছিল। আমরা একটি অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে পরিচিত হতে চাই না

 

বাংলাদেশে ভারতবিরোধী রাজনীতি গুরুত্ব পাচ্ছে কেন, এ প্রশ্নের বিশ্লেষণে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় ভারত আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে এবং ভারতের কারণেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছে বলে যুক্তি দেয় বিএনপি-জামায়াত। যদি তা-ই হয়, তবে তো একই যুক্তিতে চীনের পণ্যও বর্জনের দাবি তোলা দরকার। কারণ, চীনও তো নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে।

‘আমেরিকা বিরুদ্ধে ছিল। চীনের রাষ্ট্রদূত বারবার বিবৃতি দিয়েছেন নির্বাচনে আমেরিকার হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে। রাশিয়াও তো নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে। তাহলে তো রাশিয়ার পণ্যও বর্জন করা দরকার’- এ বিশ্লেষণ দেন তিনি।

ভারতের পণ্য বয়কটেলেখক, সাংবাদিক ও গবেষক শাহরিয়ার কবির

‘মূলত ভারতবিরোধী স্লোগান তুলে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এক ধরনের উন্মাদনা তৈরি করার চেষ্টা চলছে। আর সেটি জিহাদি উন্মাদনা। এতে গ্রামে হিন্দুদের ওপর হামলা শুরু হবে। পাকিস্তান আমলেও ভারতবিরোধিতার মূল টার্গেটে ছিল হিন্দুরা। ‘তোরা হিন্দু, তোরা এদেশে থাকতে পারবি না’- এটিই তো হয়ে আসছে।’

‘মুক্তবাজার অর্থনীতিতে পণ্য বয়কটের রাজনীতি কোনো সমাধান হতে পারে না। কেউ এটি পারবে না। আমি না চাইলেও অন্যজন পণ্য আনবে। সরকার তো আর পণ্য আনে না। ব্যবসায়ীরাই আনেন। জরুরি হলে সরকার উদ্যোগ নিয়ে থাকে।’

মালদ্বীপ সরকারের ভারতবিরোধী অবস্থানের প্রসঙ্গ টেনে শাহরিয়ার কবির বলেন, মালদ্বীপ একটি গরিব দেশ। অশিক্ষিত। মালদ্বীপ তো আমার রোল মডেল হতে পারে না। বিএনপি এখন যা করছে, পাকিস্তান আমলে মুসলিম লীগও তা-ই করেছে। পাকিস্তানের শাসকদের রাজনীতি ছিল ভারতের অন্ধ বিরোধিতা।

আরও পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াত কী ফল পেতে পারে, জানতে চাইলে এ লেখক-গবেষক বলেন, মানুষের মধ্যে এক ধরনের জিহাদি উন্মাদনা তৈরি করা বিএনপি-জামায়াতের কাজ। সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা। তারা বোঝাতে চায়- আমরা মুসলমান। ভারতে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এদেশের হিন্দুরা ভারতে চলে যাক। পাকিস্তানি এজেন্ডাই কোনো না কোনোভাবে বাস্তবায়ন করতে চাইছে বিএনপি-জামায়াত।

ভারতের পণ্য বয়কটেবুড়িমারী স্থলবন্দরে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি

তিনি বলেন, আমরা তো পাকিস্তান আমল দেখেছি। ষাটের দশকে ইন্ডিয়া বয়কটের রাজনীতি ছিল ছয় দফা আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য। আইয়ুব খানের আমলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বানচাল করার জন্য। আমরা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সুতরাং এটি বাংলাদেশের জন্য নতুন জিনিস নয়।

‘বিএনপি মহাসচিব (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) তো পাবলিকলি ঘোষণা দিয়ে বলেছেন- ‘পাকিস্তান আমলে আমরা ভালো ছিলাম’। যারা পাকিস্তান আমল দেখেনি তাদের বুঝতে হবে বিএনপি-জামায়াত আসলে কী চাইছে। পাকিস্তানেও এখন এমন ইন্ডিয়াবিরোধী প্রোপাগান্ডা নেই।’

 

ভারত আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে এবং ভারতের কারণেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছে বলে যুক্তি দেয় বিএনপি-জামায়াত। যদি তা-ই হয়, তবে তো একই যুক্তিতে চীনের পণ্যও বর্জনের দাবি তোলা দরকার। কারণ, চীনও তো নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে। রাশিয়াও নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে। তাহলে তো রাশিয়ার পণ্যও বর্জন করা দরকার

 

‘আমরা এখানে (বাংলাদেশের সিনেমা হলগুলোতে) হিন্দি সিনেমা দেখি না। পাকিস্তানের ৯০ শতাংশ সিনেমা হলে ইন্ডিয়ার সিনেমা চলে। বিএনপি-জামায়াত মূলত দেশের লাভের জন্য ভারতের বিরোধিতা করছে না। করছে বাংলাদেশের অর্থনীতি অচল করার জন্য। পণ্যের দাম বাড়লে সরকার টালমাটাল হবে। বিরোধীদের তখন সুবিধা হবে’- যোগ করেন তিনি।

‘তরুণরা না বুঝে এ আন্দোলনে শামিল হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াতের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে যদি ভারতীয় পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে কে লাভবান হবে? ভারতের এখানে কিছুই যায় আসে না। লোকসান হবে আমাদের, বাংলাদেশের।’

‘ভারত থেকে আমরা প্রচুর মসলা আমদানি করি। এ মসলা ভারত না দিলে আমাদের কেনিয়া, স্পেন বা ইন্দোনেশিয়া থেকে আনতে হবে। সেটা অনেক ব্যয়বহুল হবে। তাতে অনেক সময়ও লাগবে। ভোগান্তি পোহাতে হবে গোটা জাতিকে’- বলেন শাহরিয়ার কবির।

এএসএস/এমকেআর/জিকেএস