শিক্ষামন্ত্রী
ড. ইউনূস ইউনেস্কোর পুরস্কার পাননি, প্রতারণা করেছেন
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইউনেস্কোর ‘দ্য ট্রি অব পিস’ পুরস্কার পেয়েছেন বলে যে তথ্য প্রচারিত হয়েছে তা সঠিক নয়।
তিনি বলেন, ইসরায়েলি একজন ভাস্করের দেওয়া পুরস্কার ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতারণামূলকভাবে ইউনেস্কোর পুরস্কার বলে প্রচার চালিয়েছেন।
বুধবার (২৭ মার্চ) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কিছুক্ষণ আগে প্রকাশিত একটি সংবাদ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সেটি হলো ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কোর একটি পুরস্কার দিয়েছে বলে প্রচারিত হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে যখন ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে যোগাযোগ করেছি সেখান থেকে তারা নিশ্চিত করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এ ধরনের কোনো সম্মাননা দেননি।
তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে একটি সম্মেলনে গজনবি ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন নামক একটি সংস্থার আমন্ত্রণে সেখানে ইসরায়েলি ভাস্কর্য শিল্পী (নাম স্পষ্ট না) তাকে ‘ট্রি অব পিস' নামক একটি সম্মাননা স্মারক দিয়েছেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ইসরায়েলি ভাস্করও নিশ্চিত করেছেন এটি ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার নয়। এটি গজনবি ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে তিনি সেটা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা ইউনেস্কোর কাছে একটি ব্যাখ্যা পাঠাবো ইউনূস সেন্টার এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বরাত দিয়ে যে সংবাদটি প্রচারিত হয়েছে, সেটি প্রতারণামূলক এবং সর্বৈব মিথ্যা। সেটা সাধারণের মানুষের মধ্যে এক ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য। ইউনেস্কো কর্তৃক পুরস্কারের কথা বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চালানো হয়েছে এবং এখনো পর্যন্ত ইউনূস সেন্টারের ওয়েবসাইটে ইউনেস্কো প্রদত্ত পুরস্কার বলে সেখানে লেখা।
মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, যে কার্যক্রমগুলো ড. মুহাম্মদ ইউনূস করছেন সেগুলোর সঙ্গে বলা চলে একরকম... একই ধরনের প্রতারণামূলক এবং শঠতামূলক কার্যক্রম। একজন ইসরায়েলি ভাস্করের দেওয়া সম্মাননা তিনি ইউনেস্কো পুরস্কার হিসেবে প্রচার করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা ইউনেস্কোর একটি সদস্য রাষ্ট্র। বাংলাদেশ ইউনেস্কো কমিশনের পক্ষ থেকে একটি ব্যাখ্যা পাঠাবো এবং বিষয়টি অবগত করবো। ইউনেস্কোর নাম নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন যেটি অনৈতিক এবং অপরাধমূলক। যেটি আমাদের দেশের জন্য একটি মানহানিকার।
তিনি আরও বলেন, একজন ইসরায়েলে বাস করে দেওয়া পুরস্কার তিনি ইউনেস্কো পুরস্কার হিসেবে প্রচারণা চালিয়েছেন এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং অপমানজনকও বটে। এটি আমরা ইউনেস্কোকে অবগত করবো এবং এটিও অবগতি করবো ইতোমধ্যে শ্রম আইন লঙ্ঘনের জন্য তিনি দণ্ডিত হয়েছেন।
আরও পড়ুন
ইউনেস্কোর কাছে কী ধরনের সুপারিশ করা হবে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মুহাম্মদ ইউনূস একজন বেশ বিতর্কিত ব্যক্তি এবং দণ্ডিত ব্যক্তি। দণ্ড বহাল থাকা অবস্থায় তাকে কোনো ধরনের স্বীকৃতি দিলে সেটা আইনের শাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। ইউনেস্কাকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা আজকে জানাবো।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা ইউনূস সেন্টারকে অনুরোধ জানাবো এই ধরনের ভয়াবহ মিথ্যা প্রচারণা থেকে তারা যেন বিরত থাকে। তা না হলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
গত ২১ মার্চ ইউনূস সেন্টার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আজারবাইজানের বাকুতে ১৪-১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত একাদশ বিশ্ব বাকু ফোরামের শেষ দিনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘দ্য ট্রি অব পিস’ পুরস্কারে ভূষিত করে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো।
এদিকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন ঢাকার শ্রম আদালত-৩ এর বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা।
রায়ে তাদের শ্রম আইনের ৩০৩ (ঙ) ধারায় সর্বোচ্চ ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১০ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপরদিকে ৩০৭ ধারায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেন আদালত।
এমএএস/বিএ/এএসএম