ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিটে যুক্ত হচ্ছে এস আলম

ইকবাল হোসেন | প্রকাশিত: ০৯:৪৪ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

• জ্বালানিতে বেসরকারিখাতের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ
• প্রস্তাবিত সমঝোতা স্মারক পর্যালোচনায় ৭ সদস্যের কমিটি
• কমিটিকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা
• ৮ বছর পর প্রকল্পে আশার আলো

অর্থ সংকটসহ নানান জটিলতায় অবশেষে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের দ্বিতীয় ইউনিট (ইআরএল-২) নির্মাণে নিজস্ব অর্থায়ন থেকে সরে এসেছে সরকার। বেসরকারি অংশীদারত্বে (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) প্রকল্পটিতে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে চট্টগ্রামভিত্তিক দেশের প্রতিষ্ঠিত শিল্পগ্রুপ এস আলম গ্রুপ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিপিপিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জ্বালানি সেক্টরে এটি হবে বেসরকারিখাতের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ।

এরই মধ্যে জ্বালানি বিভাগের নির্দেশনার ওপর ভিত্তি করে এস আলম গ্রুপের প্রস্তাবিত সমঝোতা স্মারক পর্যালোচনার জন্য সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিপিসি। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত সমঝোতা স্মারকে নতুন করে ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টন সক্ষমতার রিফাইনারি নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে গ্রুপটি।

সূত্রে জানা গেছে, ইস্টার্ন রিফাইনারি বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন পেট্রোলিয়াম রিফাইনারি। ১৯৬৬ সালে নগরীর গুপ্তখাল এলাকায় ইস্টার্ন রিফাইনারি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৮ সালের ৭ মে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে এই রিফাইনারি। ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান টেকনিপ এই প্ল্যান্ট নির্মাণ করে। পরে জ্বালানি সক্ষমতা ও নিরাপত্তা বাড়াতে ইস্টার্ন রিফাইনারির বর্তমান স্থাপনার মধ্যে ৩০ লাখ মেট্রিক টন সক্ষমতার ‘ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২’ প্রকল্পটি হাতে নেয় বিপিসি। ২০১২ সালে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। শুরুর দিকে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরা হলেও পরে সংশোধিত হয়ে ১৬ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পের ফিড কন্ট্রাক্টর হিসেবে ফ্রান্সের টেকনিপকে নিয়োগ দেওয়া হয়। টেকনিপ প্রকল্পটির (ইআরএল-২) ডিজাইন সম্পন্ন করে।

আরও পড়ুন
আলোর মুখ দেখছে ইস্টার্ন রিফাইনারির ২য় ইউনিট, খরচ ২৩ হাজার কোটি
‘আমদানিনির্ভরতায় গ্যাস সংকট আরও প্রকট হতে পারে’

অন্যদিকে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট (পিএমসি) হিসেবে নিয়োগ পায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইআইএল)। ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল ভারতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করে বিপিসি। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর উপস্থিতিতে চুক্তি সই অনুষ্ঠিত হয়।

ওইদিন মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘পরবর্তী বছরের মধ্যেই ইআরএল-২ প্রকল্পের ভৌত কাজ শুরু হবে।’ কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৮ বছরেও প্রকল্পের মূল কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে সময় গড়ানোর কারণে প্রকল্প ব্যয়ও বেড়ে যায়। পরে আবারও সংশোধন করে সর্বশেষ প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৩ হাজার ৫৮ কোটি ৯৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা। প্রকল্প ব্যয়ের ৭০ শতাংশ জিওবি এবং ৩০ শতাংশ বিপিসির নিজস্ব অর্থে ব্যয় করার প্রস্তাব করা হয়। জিওবি খাত থেকে ১৬ হাজার ১৪২ কোটি ৯৯ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে সংস্থান হওয়ায় অবশিষ্ট ৬ হাজার ৯১৬ কোটি ৯২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা বিপিসির নিজস্ব অর্থায়ন থেকে প্রকল্প ব্যয় মেটাতে হবে।

২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাজেট-১৫ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব ফয়সল জহুর স্বাক্ষরিত পত্রে উল্লেখ করা হয়, বিপিসির অধীন ইআরএল কর্তৃক বাস্তবায়িতব্য ‘ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইইনিট-২’ প্রকল্পে জিওবি অংশের প্রাক্কলিত ১৬ হাজার ১৪২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ‘১০০ শতাংশ উন্নয়ন ঋণ’ হিসেবে অর্থায়নে অর্থবিভাগ সম্মতি প্রদান করছে। পত্রে ঋণের শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়, জিওবি ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার ৫ শতাংশ, ঋণ পরিশোধে সময়সীমা পাঁচ বছর (গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছর, ত্রৈ-মাসিক কিস্তিতে), প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে অর্থ বিভাগের সঙ্গে একটি ঋণচুক্তি সম্পাদন করতে হবে এবং ঋণের লেভি নিয়মিত পরিশোধ করতে হবে।

আরও পড়ুন
‘বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে ব্যয় হচ্ছে তা অর্ধেকে করা সম্ভব ছিল’
‘সরকার বেশি লাভ করতে গিয়ে জ্বালানিখাতের সর্বনাশ করেছে’

ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান জানান, সর্বশেষ গত বছরের অক্টোবর মাসে প্রকল্প প্রস্তাবনাটি আবারও সংশোধন করে ২৩ হাজার ৭৩৬ কোটি ১০ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ হিসেবে জিওবি ফান্ড থেকে ১৬ হাজার ৬৩৫ কোটি ২৬ লাখ ৭৯ হাজার টাকা এবং বিপিসির নিজস্ব তহবিল থেকে ৩০ শতাংশ হিসেবে ৭ হাজার ১০০ কোটি ৮৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা অর্থায়নের একটি প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নতুন রিফাইনারি প্রতিষ্ঠার জন্য ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেয় এস আলম গ্রুপ। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ জানুয়ারি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব বরাবর সমঝোতা স্মারকের একটি প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হয়। সমঝেতা স্মারক প্রস্তাবনায় ৩-৫ মিলিয়ন টন সক্ষমতার নতুন রিফাইনারি নির্মাণের আগ্রহের কথা উল্লেখ করা হয়। নতুন প্রস্তাবনায় ওই প্রকল্পে এস আলম গ্রুপ এবং ইস্টার্ন রিফাইনারির মধ্যে ৮০:২০ ইক্যুইটি শেয়ার থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এরপর গত ৫ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে বিপিসির আওতাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারির বাস্তবায়িতব্য ইআরএল-২ প্রকল্পটি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড এবং এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি যৌথ চুক্তির (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করার বিষয়ে বিপিসিকে সিদ্ধান্তের কথা জানায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

আরও পড়ুন
বিকল্প জ্বালানিতে না গেলে ডলার সংকট আরও বাড়বে: সিপিডি
জ্বালানি সম্ভার এখনো অনাবিষ্কৃত, আশা জাগাচ্ছে শিপিং

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ওই চিঠিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত সমঝোতা স্মারক পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক চূড়ান্তকরণের জন্য একটি কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। পাশাপাশি ইস্টার্ন রিফাইনারি এবং এস আলম গ্রুপ সমঝোতা হলে একটি স্পেশাল পারপাস ভেহিক্যাল (এসপিভি) কোম্পানি গঠন কিংবা অন্য কোনো সম্মত পদ্ধতিতে প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠির পর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রকৌশলী মো. আমীর মাসুদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বিপিসির পরিচালক (অপারেশন্স ও পরিকল্পনা) ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব খালিদ আহম্মেদকে আহ্বায়ক করা হয়। কমিটিতে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) মহাব্যবস্থাপক (অপারেশান অ্যান্ড প্ল্যানিং) রায়হান আহমাদকে সদস্য সচিব করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও পরিচালন) মুস্তফা কুদরুত-ই ইলাহী, মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রকৌশলী মো. আমীর মাসুদ, পদ্মা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. মাসুদুর রহমান, ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. লোকমান এবং মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভিসেস) মো. শরীফ হাসনাত। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে বিপিসি বরাবর প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ওই কমিটিকে প্রয়োজনে আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে যে কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন
কাজে লাগবে না, তবুও ‘জ্ঞান নিতে’ বিদেশ যাচ্ছেন কর্মকর্তারা
তৃতীয় এলএনজি টার্মিনাল: দৈনিক রিগ্যাস চার্জ দিতে হবে ৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা

এ বিষয়ে ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. লোকমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইআরএল-২ প্রকল্পে পিপিপিতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে এস আলম গ্রুপ। তারা মন্ত্রণালয়ে একটি সমঝোতা স্মারক প্রস্তাবনা দিয়েছে। সেটি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি করেছে বিপিসি। কমিটিতে আমাকেও রাখা হয়েছে।’

প্রকল্পটির বিষয়ে এস আলম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত ভৌমিক বলেন, ‘ইআরএল ইউনিট-২ প্রকল্পে পিপিপিতে বিনিয়োগের জন্য এস আলম গ্রুপ আগ্রহ দেখিয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্পটি পিপিপিতে বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় সম্মত হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে মেমোরেন্ডাম অব আন্ডার্স্ট্যান্ডিংয়ের (এমওইউ) একটি ড্রাফট জ্বালানি বিভাগকে দেওয়া হয়েছে। তারা সেটি যাচাই-বাছাই করছে।’

ইকবাল হোসেন/ইএ/এএসএম