ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

‘আমদানিনির্ভরতায় গ্যাস সংকট আরও প্রকট হতে পারে’

মো. নাহিদ হাসান | প্রকাশিত: ১১:৪৬ এএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

বাংলাদেশে গ্যাসের উৎপাদন কমে যাওয়া ও দেশীয় গ্যাস উৎপাদনের পরিকল্পনা ছাড়া আমদানিনির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় গ্যাস সংকটের সমস্যা ভবিষ্যতে আরও প্রকট হতে পারে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম তামিম। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ফ্যাকাল্টি অব কেমিক্যাল অ্যান্ড ম্যাটারিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন ও পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই অধ্যাপক জ্বালানি খাতের বিভিন্ন দিক নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথমটি।

অধ্যাপক ড. ম তামিম বলেন, বাংলাদেশের পুরো অর্থনীতিটাই বলতে গেলে গ্যাসভিত্তিক। বাসাবাড়িতে আমরা যে গ্যাস ব্যবহার করছি সেগুলোর অন্তত অল্টারনেটিভ আছে। যেমন, আমরা এলপিজি ব্যবহার করতে পারি। কিন্তু শিল্প-কারখানা বা সার কারখানায় গ্যাস ছাড়া অন্য কোনো জ্বালানি এই মুহূর্তে ব্যবহার করার সুযোগ নেই। এই মুহূর্তে জ্বালানি সরবরাহে বড় ধরনের ঘাটতি আছে। গ্যাসের নিজস্ব যে উৎপাদন সেটি কমে এসেছে।

এটি প্রায় ২১শ ঘনফুট মিলিয়নে নেমে এসেছে। আমরা যে দুটো ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটের (এফএসআরইউ) মাধ্যমে এলএনজি আমদানি করতাম তার একটি রুটিন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গেছে, আরেকটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নষ্ট। ফলে আমরা আমদানি করা এলএনজি সরবরাহ করতে পরিনি। এ কারণে কিছু সময় শর্টেজ ছিল। মাত্র ২২শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমরা সরবরাহ করতে পারছিলাম, যেখানে মিনিমাম চাহিদা তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। যদিও আসল চাহিদা প্রায় চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস হলে আমরা বড় ধরনের বিপর্যয় ছাড়া চলতে পারি।

আরও পড়ুন
‘বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে ব্যয় হচ্ছে তা অর্ধেকে করা সম্ভব ছিল’
‘সরকার বেশি লাভ করতে গিয়ে জ্বালানিখাতের সর্বনাশ করেছে’

সংকট সমাধানে করণীয় বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন করণীয় একটাই- যে দুটি এফএসআরইউ আছে সেই দুটি পূর্ণ দমে চালু করে আমদানির মাধ্যমেই চাহিদা পূরণ করতে হবে। আমদানির বিকল্প হিসেবে এই মুহূর্তে অন্য কোনো উপায় নেই। কারণ আমাদের নিজস্ব গ্যাসক্ষেত্র যেগুলো আছে সেগুলো থেকে দ্রুত উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ হবে না। উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পেট্রোবাংলাও নানা ধরনের চেষ্টা করছে। তবে অর্থের অভাবে ও অন্য কারণে তারা সেভাবে এগোতে পারছে না। নিজস্ব গ্যাসক্ষেত্রের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আমদানির ওপর এই মুহূর্তে নির্ভর করতে হবে।

পরিকল্পনা ছিল বর্তমান গ্যাসক্ষেত্র থেকে অতিরিক্ত গ্যাস তুলে এ ঘাটতি তারা পূরণ করবে। পরে এ ঘাটতি পূরণের জন্য এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় পেট্রোবাংলা। ২০১১-১২ সাল থেকেই পেট্রোবাংলার ফোকাস নিজস্ব উৎপাদন না বাড়িয়ে এলএনজি আমদানির দিকে।

দেশে গ্যাসের উৎপাদন দিন দিন কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বুয়েটের এই অধ্যাপক বলেন, আমরা যদি পেট্রোবাংলার ২০০৯-১০ সালের পরিকল্পনা দেখি, সেখানে তিন হাজার ৭শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের একটা পরিকল্পনা ছিল, যার ১৭শ মিলিয়ন ঘনফুটই আসবে পেট্রোবাংলার উৎপাদন থেকে। তারা মোটামুটি সফল হয়েছিল। ২০১৪ সাল নাগাদ সর্বোচ্চ উৎপাদন ও চাহিদা তিন হাজার ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট হবে বলে সেসময় জানায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে উৎপাদন বাড়ানো হয়, কিন্তু বহুজাতিক তেল গ্যাস কোম্পানির (আইওসি) উৎপাদন বেশি ছিল।

‘আমদানিনির্ভরতায় গ্যাস সংকট আরও প্রকট হতে পারে’

‘২০১৭ সালে সর্বোচ্চ উৎপাদন ২৭শ মিলিয়ন ঘনফুট পেয়েছিলাম। সিংহভাগ উৎপাদন বৃদ্ধি ছিল আইওসির। কিন্তু তাদের প্রাক্কলনে ২০২৩-২৪ সালে গ্যাসের উৎপাদন কমে গিয়ে দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুটে চলে আসবে দেখানো হয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল বর্তমান গ্যাসক্ষেত্র থেকে অতিরিক্ত গ্যাস তুলে এ ঘাটতি তারা পূরণ করবে। পরে এ ঘাটতি পূরণের জন্য এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় পেট্রোবাংলা। ২০১১-১২ সাল থেকেই পেট্রোবাংলার ফোকাস নিজস্ব উৎপাদন না বাড়িয়ে এলএনজি আমদানির দিকে।’

ম তামিম বলেন, গ্যাস সরবরাহের দুটি মাত্র জায়গা আছে- একটি এলএনজি আমদানির মাধ্যমে আরেকটি নিজস্ব উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে। এলএনজির মাধ্যমে আমরা দেখেছি নতুন চুক্তি হচ্ছে। চুক্তিগুলো ছিল দীর্ঘমেয়াদি। কাতার ও ওমানের সঙ্গে। সেগুলো নবায়ন করা হয়েছে। ২০২৬ সাল থেকে আরও অতিরিক্ত গ্যাস আসবে। বর্তমানে আমাদের যে নিজস্ব উৎপাদন ক্ষমতা তাতে আমরা ১১শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানি করতে পারি। কিন্তু আরেকটি চুক্তি হয়েছে একটি বড় কোম্পানির মাধ্যমে। এতে বছরে আরও প্রায় দেড় মিলিয়ন টন এলএনজি ১৫ বছরের জন্য আমদানি করা হচ্ছে।

৪৬টি কূপ খনন করার জন্য প্রথমত আমাদের জায়গাগুলো অনুসন্ধান করতে হবে যে ডেভেলপমেন্ট কূপ নাকি অনুসন্ধান কূপ। সেগুলো আমাদের দেখতে হবে। বাপেক্সের পক্ষে বছরে দুই বা তিনটার বেশি কূপ খনন করা সম্ভব নয়। সেজন্য আমার মনে হয় না যে তারা ৪৬টি কূপ খনন করতে পারবে।

বুয়েটের এই অধ্যাপক বলেন, এখন ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে গ্যাসের আমদানিনির্ভরতাই থাকছে। আমদানির মাধ্যমে আরও অতিরিক্ত গ্যাস সরবরাহ করার চিন্তা করা হচ্ছে। উৎপাদন, অনুসন্ধানের বিষয়ে আমরা ডিক্লারেশন দেখেছি। যেমন বলা হয়েছে, ২০২৬ সাল নাগাদ ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। আমরা যদি অতীতে কূপ খননের ইতিহাস দেখি, মাত্র দুই-তিনদিন বছরের মধ্যে ৪৬টি কূপ খনন করা হবে এতখানি পারদর্শিতা আমরা দেখাতে পারিনি। গত দুই বছরে একবার বলা হয়েছিল সম্ভবত ৫৬টি কূপ খনন করা হবে। কিন্তু গত দুই বছরে মাত্র নয়টি কূপ খনন করা হয়েছে। ৪৬টি কূপ খনন করার জন্য প্রথমত আমাদের জায়গাগুলো অনুসন্ধান করতে হবে যে ডেভেলপমেন্ট কূপ নাকি অনুসন্ধান কূপ। সেগুলো আমাদের দেখতে হবে। বাপেক্সের পক্ষে বছরে দুই বা তিনটার বেশি কূপ খনন করা সম্ভব নয়। সেজন্য আমার মনে হয় না যে তারা ৪৬টি কূপ খনন করতে পারবে।

করোনা মহামারির সময় কুয়েতের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার কারণে আকামা নবায়ন নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল প্রবাসীদের।

‘আমরা যদি নিজেরা না পারি তাহলে তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে কন্ট্রাক্ট দিয়ে করতে পারি। আমি বলছি না এটা পিএসসির মাধ্যমে কাউকে দিয়ে দেওয়া হোক। আমরা যে বিনিয়োগ করবো তার বিনিময়ে যে গ্যাস উৎপাদন করতে পারবো সেটির দাম আমদানি করা এলএনজির চেয়ে অনেক কম হবে। তবে প্রথমে আমাদের বেশকিছু বিনিয়োগ করতে হবে।’

এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, আমাদের রেমিট্যান্স সেভাবে বাড়ছে না। রপ্তানিও মুখ থুবড়ে পড়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি মূল আমদানিকারক দেশগুলো শুধু যে বাংলাদেশ থেকে আমদানি কমিয়ে দিয়েছে তা নয়, অন্য দেশ থেকেও তারা আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। এসব পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যদি আরও বেশি আমদানিনির্ভরতার দিকে যাই তাহলে এখন যে সমস্যায় পড়ছি সেটি আরও প্রকট হতে পারে।

এনএস/এএসএ/এমএস