ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ভালোবাসার ফুলও কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে

আবু আজাদ | প্রকাশিত: ০১:২৭ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

‘প্রতিদিন যে গোলাপ ২০ টাকায় বিক্রি হয়, আজ সেটির দাম চাওয়া হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ৭০ টাকার চায়না গোলাপের দাম চাইছে ১৫০ টাকা! একটি বিশেষ দিবসকে কেন্দ্র করে ক্রেতাদের এভাবে ঠকানো কখনো ব্যবসা হতে পারে না।’

ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন নগরের চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রী সুইটি মজুমদার। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম নগরের চেরাগী পাহাড় এলাকায় কথা হচ্ছিল তার সঙ্গে।

আজ পহেলা ফাল্গুন, একই দিন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও সনাতন ধর্মালম্বীদের সরস্বতী পূজা। এ সুযোগে দাম বেড়েছে ভালোবাসা প্রকাশের প্রধান অনুষঙ্গ ফুলের। ক্রেতাদের অভিযোগ, ফুল বিক্রেতারা দাম হাঁকেন ইচ্ছেমতো। উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে কিনছেন তারা।

বুধবার সকালে নগরের ফুলের দোকানগুলো সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, একই দিনে তিনটি দিবস কেন্দ্র করে বিক্রি জমে উঠেছে। সেই সঙ্গে সব ফুলের দাম বেড়েছে। সাধারণ সময়ের চেয়ে প্রতিটি দোকানেই তোলা হয়েছে বেশি ফুল। গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, গ্ল্যাডিওলাস, জারবেরা, রজনীগন্ধা, লিলি, গাঁদা, জিপসি, মাম, ক্যালেন্ডোলাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। কেবল ফুলই না, ফুল দিয়ে তৈরি মালা, মাথার ফুলের রিং, গাজরাও পাওয়া যাচ্ছে দোকানগুলোতে।

মানভেদে প্রতিটি গোলাপ ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা্ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে যা কয়েকদিন আগেও ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় বিক্রি হতো। একই ভাবে বেড়েছে গ্ল্যাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা ও জিপসিসহ নানান ফুলের দাম।

আরও পড়ুন>> ১৫ টাকার এক গোলাপ আজ ৬০ টাকা

প্রতিটি রজনীগন্ধার স্টিক বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৫০ টাকায়, ১০ পিস সাদা চন্দ্রমল্লিকা ১০০, লাল-নীলসহ ভিন্ন রঙের চন্দ্রমল্লিকা ১৫০-২০০, গ্ল্যাডিওলাস ৭০-৯০ ও জারবেরা ৩০-৪০ টাকা। চায়না লিলি ফুল বিক্রি হয়েছে ৫০০-৬০০ টাকায়। ডালিয়া ৫০ টাকা। গোলাপি রঙের অর্কিড ১৬০ থেকে ২২০ টাকা। দেশে উৎপাদিত লিলিয়াম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আমদানি করা লিলিয়াম ৩৫০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মাথার ফুলের রিং এর দাম চাওয়া হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।

বিক্রেতারা জানান, এক সপ্তাহ আগে রজনীগন্ধার স্টিক বিক্রি হয়েছে ১০-১৫ টাকায়, চন্দ্রমল্লিকা ৩০-৫০, গ্লাডিওলাস ৩০-৫০ ও প্রতি পিস জারবেরা ১০ টাকায়।

নগরের কমার্স কলেছের শিক্ষার্থী শুভ দাস জাগো নিউজকে বলেন, ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে সব ফুলের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে গোলাপের। প্রতিটি গোলাপের দাম চাওয়া হচ্ছে ১৫০ ধেকে ২০০ টাকা। এটি অনেক বেশি মনে হচ্ছে।

‘ভালোবাসা প্রকাশের প্রধান অনুষঙ্গ ফুল। এছাড়া আজ বসন্ত উৎসব ও সরস্বতী পূজা থাকায় বিক্রেতারা সুযোগ নিচ্ছেন,’ বলেন শুভ দাস।

আবার বিক্রেতাদের এই বেশি নেওয়াকে সহজেই মেনে নিচ্ছেন অনেকে। ফুল কিনতে আসা মিলি চৌধুরী বলেন, বিশেষ দিন, একটু বেশি নেবে এটা মেনে নিয়েই ফুল কিনতে এসেছি। ভালোবাসা নিয়ে দামদর চলে না।

আরও পড়ুন>> ফাগুন হাওয়ায় জমজমাট বগুড়ার ফুল বাজার

ডিসি হিল এলাকার নিউ কানন এর স্বত্ত্বাধিকারী মো. রাসেদ বলেন, দামটা আমরা ইচ্ছে করে বেশি নিচ্ছি এমন নয়। চাষিরা যেমন দাম বাড়িয়েছে, তেমনি খরচ বড়েছে সবখানে। এছাড়া ১০০ পিস গোলাপ এলে তার অর্ধেক নষ্ট হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে বেশি দাম নিতে হচ্ছে।

চট্টগ্রামে এবার ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন, সরস্বতী পূজা ও আসন্ন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে পাঁচ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ফুল ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম ফুল ব্যবসায়ী সমিতি ঐক্য পরিষদের সভাপতি নাসির গণি চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, চট্টগ্রামে ফুলের আবাদ অনেকটাই কমে গেছে। এখন ফুল আসে যশোরসহ উত্তরবঙ্গ থেকে। তাই পরিবহন খরচ বেশি। পাশাপাশি গ্রাহকদের চাহিদা অনুসারে বিভিন্ন দেশ থেকে ফুলের আমদানি হয়। ডলারের প্রভাবে এসব ফুলের দাম বেড়েছে।

তিনি বলেন, দামের কারণে শুধু ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তা নয়। দাম বেশি থাকায় চাহিদা মতো ফুল কিনতে পারেননি ব্যবসায়ীরাও।

তবে এবার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো থাকায় গত বছরের তুলনায় এ বছর ফুল বিক্রি বাড়বে বলে আশা তার।

খুচরা ফুল বিক্রেতা মশিউর গোলাপ কিনতে এসেছিলেন চেরাগী এলাকায়। তিনি বলেন, গত বছর ২০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছি। দাম বেশি হওয়ায় এবার বেচা-বিক্রি কম। তাই এখন পর্যন্ত মাত্র ১০ হাজার টাকার ফুল ক্রয় করেছি।

এএজেড/এমএইচআর/এএসএম