ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

জ্বালানি সম্ভার এখনো অনাবিষ্কৃত, আশা জাগাচ্ছে শিপিং

আবু আজাদ | প্রকাশিত: ০৮:২৬ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

বঙ্গোপসাগরের সীমানা নিষ্পত্তির পর গভীর সমুদ্রে জ্বালানি অনুসন্ধানে মনোযোগ বাড়িয়েছে প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও মিয়ানমার। উভয় দেশ এ খাতে বিনিয়োগ করেছে বিভিন্ন পর্যায়ে। প্রয়োজন মতো পাচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগও।

অন্যদিকে বাংলাদেশ করছে সময়ক্ষেপণ। গভীর সাগরে নিজেদের জলসীমানায় তেল-গ্যাসের মহাসম্পদ অনুসন্ধানে বিভিন্ন সময়ে বিদেশি বিনিয়োগের মৌখিক প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হলেও এ নিয়ে দেখা যায়নি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। ফলে দেশের বিশাল সমুদ্র এলাকার জ্বালানি সম্ভার এখনো অনাবিষ্কৃতই থেকে গেছে।

বঙ্গোপসাগর ঘিরে সুনীল অর্থনীতির নানা সম্ভাবনা নিয়ে তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের তৃতীয় তথা শেষ পর্ব থাকছে আজ।

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় মোট ২৬টি তেল-গ্যাস ব্লক রয়েছে। তার মধ্যে অগভীর অংশে ১১টি ও গভীর সাগরে ১৫টি। এসব ব্লকের মধ্যে কয়েকটিতে গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এসব কোম্পানি নিজেদের বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে এলেও পরে ব্লক ছেড়ে চলে গেছে। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে দেশে গ্যাসের সংকট বিরাজমান থাকলেও তা মোকাবিলায় আমদানিনির্ভরতাকেই বেছে নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।

সমুদ্রসীমায় মোট ২৬টি তেল-গ্যাস ব্লক রয়েছে। তার মধ্যে অগভীর অংশে ১১টি ও গভীর সাগরে ১৫টি। এসব ব্লকের মধ্যে কয়েকটিতে গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এসব কোম্পানি নিজেদের বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে এলেও পরে ব্লক ছেড়ে চলে গেছে। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে দেশে গ্যাসের সংকট বিরাজমান থাকলেও তা মোকাবিলায় আমদানিনির্ভরতাকেই বেছে নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ

দেশে গভীর ও অগভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে ‘বাংলাদেশ অফশোর মডেল প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট’ (পিএসসি) গত বছরের জুলাইয়ে অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। অনুমোদনের সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত দরপত্র আহ্বান করা যায়নি।

jagonews24

আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরের অপার সম্ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে ব্যর্থতার বৃত্তে

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সাগরে খনিজ সম্পদের কোনো জরিপ করতে পারিনি। এ অবস্থায় চুক্তি হলে তা বাংলাদেশ ও বিদেশি কোম্পানি কারও জন্যই সুবিধার হবে না।

বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার জাগো নিউজকে বলেন, বঙ্গোপসাগরের ১৩টি স্থানে ভারী খনিজ বালু আছে। এই বালু ইলমেনাইট, গার্নেট, সিলিমানাইট, জিরকন, রুটাইল ও ম্যাগনেটাইটসমৃদ্ধ। বাংলাদেশ ও জার্মানির যৌথ জরিপে সাগরের ৮০ থেকে ১১০ মিটার গভীরতায় এই মূল্যবান সম্পদের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

এছাড়া অগভীর সমুদ্রের তলদেশে কোবাল্ট, ভানাডিয়াম, মলিবডেনাম ও প্লাটিনামে গঠিত ম্যাঙ্গানিজ ক্রাস্ট এবং তামা, সিসা, জিংক, কিছু পরিমাণ সোনা ও রুপা দিয়ে গঠিত সালফাইডের অস্তিত্ব আছে। এসব অতি মূল্যবান সম্পদ সমুদ্রের ১৪০০ থেকে ৩৭০০ মিটার গভীরে রয়েছে বলে জানান তিনি।

jagonews24

তিনি আরও বলেন, বঙ্গোপসাগরে শুধু খনিজ সম্পদই নয়, ৩০ থেকে ৮০ মিটার গভীরতায় এক ধরনের ক্লে’র সন্ধান পাওয়া গেছে। অগভীর সমুদ্রের এই ক্লে উত্তোলন করা গেলে বাংলাদেশের সিমেন্ট শিল্পে বিপ্লব ঘটবে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে সামুদ্রিক শক্তির ব্যবহার
সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানির উৎস হিসেবে এনার্জি মেটেরিয়াল নিয়ে বিশ্বজুড়ে গবেষণার কাজ চলছে। বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি চালু হলেও বাংলাদেশে সমুদ্রের ঢেউ ও জোয়ার বা টাইডাল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি সেভাবে ভাবা হচ্ছে না।

আরও পড়ুন: সরকার ‘সুনীল অর্থনীতি’র ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে

ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, পশ্চিম সুইডেনের লাইসেকিলে সমুদ্রের মধ্যে বয়া কনভার্টার ও পর্তুগালে সি বিচে পেলামিস ওয়েভ জেনারেটর ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন দেশে ১৫-২০ ধরনের বিভিন্ন টেকনোলজি ব্যবহার করে ওয়েভ এনার্জি ব্যবহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাংলাদেশকেও এ সুযোগ নিতে হবে। এটি যদি সম্ভব হয়, তবে টাইডাল ও ওয়েভ এনার্জির মাধ্যমে আমাদের দেশ বিদ্যুতে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে সক্ষম হবে।

২০২০-২১ অর্থবছরে জাহাজ ভাড়া বাবদ বাংলাদেশের আয় হয় প্রায় সাড়ে ৩৬ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন হাজার ১১০ কোটি টাকা। তবে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর মন্দার প্রভাবে মুনাফার সেই হার কমেছে। করোনা মহামারির শুরুতে বিশ্বের সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালন ব্যবসায় চরম দুর্দিন নামে। অনেকেই জাহাজ স্ক্র্যাপ করে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগটি লুফে নিয়ে একে একে ৩২টি জাহাজ নিবন্ধন করেন। তার মধ্যে ২০২১ সালে সর্বোচ্চ ১৮টি জাহাজ নিবন্ধন হয়

এনার্জি ট্র্যাকার এশিয়া’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট ৭১১ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় অঞ্চল বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র। এখানে দূষণমুক্ত শক্তিটি উৎপাদনের উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় ২০২৫ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস থেকে দেশের মোট বিদ্যুৎ সরববরাহের ১০ শতাংশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।

jagonews24

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, এ লক্ষ্য পূরণে চলতি বছরই কক্সবাজারে নির্মাণাধীন ৬০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে উৎপাদন শুরু করা হবে। এটি ছাড়া সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাট ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় মোট ১০২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন আরও তিনটি বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে, যা আগামী বছর শেষ হবে। পাইপলাইনে রয়েছে চাঁদপুর সদরে ৫০ মেগাওয়াট এবং ফেনীর সোনাগাজীতে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ। উপকূলীয় এলাকায় মূল্যবান ভারী খনিজ খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের।

শিপিংয়ে সম্ভাবনা
পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে জাহাজ ভাড়ার পেছনে বাংলাদেশকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়। তবে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে শিপিং সেক্টর দ্রুত বিকাশ লাভ করছে। ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন বিনিয়োগ। অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় শতভাগ দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পূরণ করছে। বাংলাদেশের ড্রাইডকগুলোতে বছরে প্রায় ১৫টি জাহাজ মেরামতের কাজ হয়।

২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা ছিল ৯৮টি। তার মধ্যে ৯৭টি জাহাজ বিশ্বের বিভিন্ন বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন করছে। কার্যক্রম চলছে আরও একাধিক জাহাজ নিবন্ধনের।

jagonews24

২০২০-২১ অর্থবছরে জাহাজ ভাড়া বাবদ বাংলাদেশের আয় হয় প্রায় সাড়ে ৩৬ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন হাজার ১১০ কোটি টাকা। তবে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর মন্দার প্রভাবে মুনাফার সেই হার কমেছে।

জানা গেছে, করোনা মহামারির শুরুতে বিশ্বের সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালন ব্যবসায় চরম দুর্দিন নামে। অনেকেই জাহাজ স্ক্র্যাপ করে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আর বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগটি লুফে নিয়ে একে একে ৩২টি জাহাজ নিবন্ধন করেন। তার মধ্যে ২০২১ সালে সর্বোচ্চ ১৮টি জাহাজ নিবন্ধন হয়।

আরও পড়ুন: সমুদ্রের ২২ ব্লকে মিলতে পারে ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস

জাহাজের পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়ছে সমুদ্র পরিবহনেও। সরকারি-বেসরকারি মেরিটাইম একাডেমি, ইনস্টিটিউট এবং ফিশারিজ একাডেমিতে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার ক্যাডেট এবং দক্ষ নাবিক তৈরি হয়েছে। তাদের মধ্যে ১২ হাজার মেরিন অফিসার ও ক্রু বর্তমানে দেশি-বিদেশি জাহাজ ও সিলাইনারে কাজ করছেন। বিদেশি মালিকানার জাহাজে কর্মরত প্রায় আট হাজার ৬০০ জন সমুদ্রচারী। তারা প্রতি বছর দেশে প্রায় ৫২ কোটি মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসছেন।

বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির কমাড্যান্ট নৌ-প্রকৌশলী সাজিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, মেরিন ফিশারিজ একাডেমি থেকে পাস করা ক্যাডেটদের ৮৫ শতাংশ আন্তর্জাতিক শিপিং লাইনগুলোয় শীর্ষ পর্যায়ে কাজ করছেন। বাকি ১৫ শতাংশ বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার নৌযান এবং উপকূলভিত্তিক মাছ প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্ট পরিচালনায় নিয়োজিত। একজন ক্যাপ্টেন প্রতি মাসে জাহাজভেদে ১০-১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করেন।

jagonews24

জাহাজ নির্মাণ শিল্প
আন্তর্জাতিক মান সনদধারী জাহাজ নির্মাণ করার মধ্য দিয়ে জাহাজশিল্পে আবারও মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ। জাহাজ নির্মাণ শিল্পে পাঁচ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ ১৩ ধাপ এগিয়ে ১৪ নম্বরে উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, সিঙ্গাপুর, স্পেন, রোমানিয়া, মালয়েশিয়া, নরওয়ে ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ পেছনে ফেলে এগিয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশের এ সাফল্য এনেছে বৃহৎ শিল্পগ্রুপগুলো।

১৯৮০ সাল থেকে আইএফএডি চরে ভূমি উদ্ধার প্রকল্প, চর উন্নয়ন ও বসতি স্থাপন প্রকল্পের আওতায় ভূমি উন্নয়নের কাজ করছে। তবে অনুকূল পরিবেশে যেভাবে চরগুলো গড়ে উঠছে, তেমনই সামান্য পরিবর্তনজনিত কারণে এগুলো বিলীনও হয়ে যেতে পারে। গত কয়েক দশকে জেগে ওঠা চরগুলো সংরক্ষণে সেখানে ব্যাপক বনায়ন করতে হবে। নেদারল্যান্ডস বা সিঙ্গাপুরের মতো ক্রসড্যাম আর প্রযুক্তিগত উদ্যোগ নেওয়া হলে উপকূলে জেগে ওঠা ভূমির আয়তন প্রায় ১৫ হাজার বর্গমাইলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব

সম্প্রতি ১৫৮ কোটি ডলার বিনিয়োগে পায়রা বন্দরের পাশে একটি আন্তর্জাতিক মানের শিপইয়ার্ড তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক জেন্টিয়াম সলিউশন ও ডাচ প্রতিষ্ঠান ডামেন শিপইয়ার্ড গ্রুপ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে এটিই হবে সর্বোচ্চ সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই)।

জাহাজ ভাঙা শিল্প
ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (UNCTAD) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে জাহাজ ভাঙার কার্যক্রম ৬৫ শতাংশ কমে যাওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ শীর্ষস্থানীয় জাহাজ পুনর্ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে বিশ্বে শীর্ষ অবস্থান বজায় রেখেছে। দেশের শীর্ষ উদ্যোক্তারা এ শিল্পে বিনিয়োগ করছেন। জাহাজ ভাঙা শিল্পে প্রায় ৬০-৭০ হাজার লোক সরাসরি কর্মরত। আরও ৩০ লাখ মানুষ পরোক্ষভাবে এ ব্যবসায় জড়িত।

এ শিল্প থেকে পাওয়া পুনর্ব্যবহারযোগ্য কিছু উপজাত সামগ্রী রপ্তানি করা হয় এবং বাকিগুলো বাংলাদেশে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় পুনর্ব্যবহার করা হয়। জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে প্রতি বছর ৩০-৩৫ লাখ টন স্ক্র্যাপ পাওয়া যায়, যা বর্তমানে স্থানীয় ইস্পাত শিল্পের ৭০ শতাংশের বেশি কাঁচামাল সরবরাহ করছে। এছাড়া পুরনো জাহাজের আসবাবপত্রের চাহিদাও রয়েছে সারাদেশে।

আরও পড়ুন: গভীর সমুদ্রে খনন শত শত প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটাতে পারে

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইকেলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে প্রায় ১৫৮টি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড রয়েছে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের মাদাম বিবির হাট, কুমিরা, ভাটিয়ারি, সোনাইছড়ি, জাহানাবাদ, কদমরসুল, বাঁশবাড়িয়া উপকূলজুড়ে এসব শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের অবস্থান। এর মধ্যে ৮০টি প্রতিষ্ঠান বর্তমানে সচল।

তবে ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোতে একের পর এক দুর্ঘটনা এ শিল্পের ভাবমূর্তি ভয়াবহ সংকটে ফেলছে। এছাড়া কর্মপরিবেশ নিরীক্ষণ করার মতো কোনো কর্তৃপক্ষ না থাকায়ও সংকট থেকে বের হতে পারছে না অপার সম্ভাবনার এ শিল্প খাতটি।

বন্দর সুবিধা বাড়ানোর সুযোগ
জাতীয় বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে বন্দর একটি কৌশলগত ভূমিকা পালন করে। বিশ্ব বাণিজ্যের আয়তন বিবেচনায় ৮০ শতাংশ ও অর্থ বিবেচনায় ৭০ শতাংশ পরিচালিত হয় সমুদ্রপথে। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৮ শতাংশ হারে বাড়ছে সমুদ্রপথে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন। বাণিজ্য প্রতি বছর প্রায় তিন হাজার বিদেশি জাহাজ বাংলাদেশের বন্দরে পণ্য পরিবহনের জন্য ভিড়ছে। বিশাল এ চাপ কার্যত এককভাবেই সামলাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। পোশাকশিল্পসহ দেশের রপ্তানি আয়ের সারথি হয়ে ভূমিকা রাখছে চট্টগ্রাম বন্দর।

অর্থনীতিবিদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মইনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের বন্দরগুলোর ট্রাফিক তিনগুণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে উপকূলীয় দেশগুলোর মধ্যে বৈশ্বিক সমুদ্রবাণিজ্যের মাধ্যমে সমুদ্র অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটাতে হলে, চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, মোংলা এবং পায়রা বন্দরকে শক্তিশালী ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের পাশাপাশি সোনাদিয়ায় প্রাকৃতিকভাবে আমরা যে গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির সুযোগ পেয়েছি তা কাজে লাগাতে হবে।

ভূমি বাড়ছে সাগরে, চর সংরক্ষণ সময়ের দাবি
আয়তন বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৯৪তম হলেও জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে অষ্টম বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশ। তাই বিপুল জনসংখ্যার চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে দেশের শহরগুলো। তবে প্রতি বছর ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ও পদ্মা নদী দিয়ে ১০০ কোটি টন পলি বঙ্গোপসাগরে পড়ছে। এই পলির কারণে মাটিতে জেগে উঠছে ৫২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের নতুন চর। বাংলাদেশ সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসের (সিইজিআইএস) বরাতে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

তথ্যানুসারে, ১৯১৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১০০ বছরে বঙ্গোপসাগরের নোয়াখালী উপকূল ৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণে প্রসারিত হয়েছে। মেঘনা নদীর মোহনায় জাগছে নতুন নতুন দ্বীপ।

ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর অ্যাগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্টের (আইএফএডি) জমি বন্দোবস্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, গত ১০০ বছরে এক হাজার বর্গকিলোমিটার নতুন ভূমি পেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া একটু পানির নিচে থাকা নতুন করে জেগে উঠছে এমন ৩০-৪০টি ডুবোচর রয়েছে। যেগুলো আগামী পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে রয়েছে জেগে ওঠার অপেক্ষায়।

আরও পড়ুন: প্রতি বছর আড়াই লাখ কোটি ডলার আয়ের সম্ভাবনা

তিনি বলেন, ১৯৮০ সাল থেকে নেদারল্যান্ডস সরকারের আর্থিক সহায়তায় আইএফএডি এসব চরে ভূমি উদ্ধার প্রকল্প, চর উন্নয়ন ও বসতি স্থাপন প্রকল্পের আওতায় ভূমি উন্নয়নের কাজ করছে। এ প্রকল্পের অধীনে বঙ্গোপসাগরের বুকে নদীর বালুকণা ও পলিতে গড়া দ্বীপগুলো বর্তমানে সবুজ খামার বাড়িতে পরিণত হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজের অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, অনুকূল পরিবেশে যেভাবে চরগুলো গড়ে উঠছে, তেমনই সামান্য পরিবর্তনজনিত কারণে এগুলো বিলীনও হয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, গত কয়েক দশকে জেগে ওঠা চরগুলোকে সংরক্ষণে সেখানে ব্যাপক বনায়ন করতে হবে। নেদারল্যান্ডস বা সিঙ্গাপুরের মতো ক্রসড্যাম আর প্রযুক্তিগত উদ্যোগ নেওয়া হলে উপকূলে জেগে ওঠা ভূমির আয়তন প্রায় ১৫ হাজার বর্গমাইলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

এএজেড/এমকেআর/এমএস