দুজনের ডিএনএ পেলেও খুনি অধরা
র্যাব না পারলে অন্য সংস্থাকে তদন্তের দাবি সাগর-রুনির পরিবারের
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার এক যুগ পূর্ণ হলো আজ রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি)। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন এই সাংবাদিক দম্পতি। এক যুগ পার হলেও এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১০৫ বার সময় নিয়েছে বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা। কবে নাগাদ মামলার তদন্ত শেষ হবে বলতে পারছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশের হাত ঘুরে বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত সংস্থা ডিএনএ টেস্টের অপেক্ষায় ছিল ১১ বছর।
অনেক প্রতীক্ষার পর যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগার থেকে ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) পরীক্ষার রিপোর্টগুলো হাতে পায় এলিট ফোর্স র্যাব।
রিপোর্ট ও অপরাধচিত্রের প্রতিবেদন (ক্রাইম সিন রিপোর্ট) পর্যালোচনায় দুজনের ডিএনএর পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল পেলেও সন্দেহভাজন খুনি শনাক্ত হয়নি।
ফলে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত বা গ্রেফতারের আশা প্রায় ক্ষীণ। ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়ার পরও সন্দেহভাজন খুনিদের শনাক্ত করতে না পারায় খোদ হতাশ র্যাব কর্মকর্তারা।
নিহতের পরিবার বলছে, র্যাব যদি তদন্ত করতে না পারে তবে অন্য কোনো সংস্থাকে তদন্ত দেওয়া হোক। এক যুগ তো হয়ে গেলো। আর কত অপেক্ষা।
সবশেষ গত ২৩ জানুয়ারি মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিনও তদন্ত সংস্থা র্যাব প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালত আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী দিন ধার্য করেন। এ নিয়ে ১০৫ মতো পেছানো হয়েছে এ মামলার প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ।
মামলার তদন্ত যেভাবে র্যাবের হাতে
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনিকে হত্যা করা হয়। এরপর নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই)। চারদিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আরও পড়ুন>> সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে, হতাশার কিছু নেই: আইনমন্ত্রী
দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয় ডিবি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে একই বছরের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পরিবারের বক্তব্য
নিহত সাংবাদিক সাগরের মা সালেহা মুনির জাগো নিউজকে বলেন, ‘র্যাব না পারলে অন্য কোনো সংস্থার হাছে হস্তান্তর করুক। মৃত্যুর এক যুগ হয়ে গেলো, কিন্তু এখন পর্যন্ত খুনিরা শনাক্ত হলো না। আমি আর কতদিন বাঁচবো? জীবন থাকা অবস্থায় দেখে যেতে পারবো কি না তাও জানি না।’
তিনি বলেন, ‘র্যাব পারে না এমন কিছু নেই। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এখন অনেক সক্ষম। যে দুজনের ডিএনএ নমুনা পাওয়া গেছে তাদের এখনো কেন শনাক্ত করতে পারেনি র্যাব। সবকিছু তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন হলেও সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে বাধা কোথায়? কার হাতের ইশারায় বাধা। র্যাব না পারলে ছেড়ে দিক, অন্য কোনো সংস্থা তদন্ত করুক।
র্যাবের বক্তব্য
র্যাবের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘বাংলাদেশে যখন ডিএনএ পরীক্ষা করা যেতো না তখন আমেরিকার একটি কোম্পানি থেকে ডিএনএ টেস্ট করা হয়। হত্যাকাণ্ডের মোটিভ ও হত্যাকারী কারা এটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত নেই। সেজন্য আদালতে র্যাবের নিয়মিত আপডেট উপস্থাপন করা হয়।’
মামলাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ মামলা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত চলছে। এর জন্য বিদেশে বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে। বিদেশে ডিএনএ টেস্টের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করছি।’
আরও পড়ুন>> ৪৮ ঘণ্টার কথা বলে ১২ বছরেও বিচার পায়নি পরিবার
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘প্রকৃত হত্যাকারী ও শতভাগ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ নিশ্চিত করে প্রতিবেদন দিতে চায় র্যাব। এজন্য একটু সময় লাগছে। র্যাবের যে তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করছেন তিনি অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।’
সেই ৪৮ ঘণ্টা শেষ হয়নি এখনো
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তারা বলেছিলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হবে। অথচ এরই মধ্যে ১১ বছর পেরিয়ে গেছে। এত সময় পার হলেও এখনো মামলার বিচারই শুরু করা যায়নি। যদিও এ সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে বিভিন্ন সময় রাজপথে আন্দোলন করেছেন তাদের সহকর্মীরা।’
সাগর-রুনি হত্যাকারীদের ধরা হবে: আইনমন্ত্রী
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে, হতাশ হওয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, সাগর-রুনির হত্যাকারীদের ধরা হবে। এ হত্যার বিচার হারিয়ে যাবে না। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে যে যে পদক্ষেপ সরকারের নেওয়া উচিত, সেটা সরকার নেবে।’
টিটি/ইএ/জিকেএস