এক বছরে ৫৩ হাজার পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ দিয়েছে ডিএমপি
‘সেবা ও সদাচার, ডিএমপির অঙ্গীকার’- এই প্রতিপাদ্যকে উপজীব্য করে নানান আনুষ্ঠানিকতায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) উদযাপিত হতে যাচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এই গৌরবময় পথচলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ মহানগরীর সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে নগরবাসীর আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে। নগরবাসীর নিরাপত্তা ও সেবা দিতে নানান উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে ডিএমপি। একই সঙ্গে মানুষ যেন সহজেই পুলিশি সেবা নিতে পারে এ জন্য চালু করা হয়েছে ডিজিটাল সেবা ব্যবস্থা। এমনই এক ব্যবস্থা ডিএমপি রেনোভেটেড ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ডিআরআইএমএস)। এর মাধ্যমে সিঙ্গেল ক্লিকে কোনো ব্যক্তির সব তথ্য বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে সংগ্রহ করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল তৈরি করা সম্ভব। ডিএমপির এই ওয়ানস্টপ প্লাটফর্মের মাধ্যমে সহজেই যেকোনো কারও সব তথ্য পাওয়া সম্ভব।
এছাড়াও ডিএমপির পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্ভিস সেল থেকে ২০২৩ সালে মোট ৫৩ হাজার ২৮৯টি আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। যার মধ্যে ৭২ ঘণ্টায় (স্বল্পকালীন) ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হয়েছে ২৬ হাজার ৪৭৫টি আবেদনের।
১৯৭৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৬ হাজার পুলিশ সদস্য এবং ১২টি থানা নিয়ে যাত্রা শুরু করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ঢাকা মহানগরীর প্রায় ২ কোটি ২৫ লাখ নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৫০টি থানায় বিস্তৃত হয়েছে ডিএমপির কার্যক্রম। বর্তমান ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে কাজ করছেন ৬ জন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিআইজি), ১২ জন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি), ৫৭ জন উপ-পুলিশ কমিশনারসহ (এসপি) ৩৪ হাজার অফিসার ও ফোর্স।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প ২০৪১ অনুযায়ী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে সার্ভিসগুলো আরও সহজ এবং দ্রুত স্মার্ট পুলিশিং সেবা দিতে চায় ডিএমপি। এ লক্ষ্যে বর্তমান কমিশনারের সৃষ্টিশীল ও উদ্ভাবনী চিন্তার ফসল মেসেজ টু কমিশনার (এমটুসি)। যার মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীর নাগরিকরা আইনি সেবা, পরামর্শ এবং অপরাধ বিষয়ক তথ্য ০১৩২০-১০১০১০ অথবা ০১৩২০-২০২০২০ নম্বরে সরাসরি দিতে পারেন।
এক বছরে ৫০ থানায় ২৬ হাজার মামলা
মহানগরীর সব নাগরিকের জন্য নিরাপদ, নির্ভয় ও নির্বিঘ্ন ঢাকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করেছে ৮টি ক্রাইম বিভাগ এবং ৫০টি থানা। ২০২৩ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন থানায় অপরাধ দমন ও উদঘাটনে মোট ২৫ হাজার ৯০২টি মামলা রুজু করা হয়েছে। বর্তমান কমিশনারের উদ্যোগে ছিনতাই প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে ‘ছিনতাই প্রতিরোধ টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়। ডিএমপি ক্রাইম বিভাগের মামলা মনিটরিং সেল ৫০টি থানা ৪৭৯টি জনগুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর মামলা আলোচনার পর নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয় নিদের্শনা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: পুলিশের চাকরি শুধু চাকরি নয়, ইবাদতও
ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এক হাজার ৯৩৪টি পাবলিক পিটিশন পেয়ে সেগুলোর বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ দমন ও উদঘাটন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ২৫ হাজার ৯০২টি মামলার সব তথ্য সিডিএমএস (ক্রাইম ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম)- এ সন্নিবেশ করা হয়েছে।
৪০ হাজার মানুষকে হেল্প ডেস্কে সেবা
সবার জন্য সমান আইনি সেবা নিশ্চিত করতে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী হেল্প ডেস্ক থেকে ৪০ হাজার ১৮২ জনকে সেবা দেওয়া ও তদারকি করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে মামলার রায় প্রদান এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে সাজার হার বাড়াতে প্রসিকিউশন বিভাগ আদালত সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রম সিডিএমএসে অর্ন্তভুক্ত করার যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে গত এক বছর প্রসিকিউশন বিভাগের তত্ত্বাবধানে আদালত কর্তৃক বিচারাধীন মামলার মধ্যে ১৫ হাজার ৫৩৭টি মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে, যেখানে ৪ হাজার ৭৫৬ জন অপরাধীর সাজা হয়েছে। আর্থিক ক্ষতি, পরিবেশ দূষণ এবং স্থান স্বল্পতার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ডিএমপি প্রসিকিউশন বিভাগের উদ্যোগে আদালতের সঙ্গে সমন্বয় করে ৭৮টি মামলার বিপরীতে ১৪৪টি আলামত নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তর ও প্রশাসন বিভাগের অধীনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, প্রবাসী লিগ্যাল সার্ভিস, কেন্দ্রীয় সংরক্ষণ দপ্তর, ইন্টারনাল ওভারসাইট, মেসেজ টু কমিশনার (এমটুসি) ও কেন্দ্রীয় রিসিভ ডেসপাস শাখা।
সাড়ে ২৬ হাজার পুলিশ ক্লিয়ারেন্স (৭২ ঘণ্টায়) যাচাই
ডিএমপির পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্ভিস সেল থেকে ২০২৩ সালে মোট ৫৩ হাজার ২৮৯টি আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। যার মধ্যে ৭২ ঘণ্টায় (স্বল্পকালীন) ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হয়েছে ২৬ হাজার ৪৭৫টি আবেদনের। প্রবাসী লিগ্যাল সার্ভিস সেলে প্রবাসীদের কাছ থেকে ২০২৩ সালে পাওয়া ১৪৫টি অভিযোগের মধ্য থেকে নিষ্পত্তি করা হয়েছে ১১৪টি এবং ৩১টি অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে।
ওয়ানস্টপ পেনশন সার্ভিস
কেন্দ্রীয় সংরক্ষণ দপ্তর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রায় ৩২ হাজার অফিসার ও ফোর্সের পদায়ন, পদোন্নতি, ছুটি, পেনশনসহ সার্ভিস বই সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে। ওয়ানস্টপ পেনশন সার্ভিস সেল থেকে নন-গেজেটেড পুলিশ সদস্যদের পিআরএলের আগের মাসেই ২৩৩ পুলিশ সদস্যের লাম্পগ্রান্ট বিলের চেক প্রদান এবং মৃত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের অনুকূলে লাম্পগ্রান্ট বিল মঞ্জুর করা হয়েছে। ২৬৩ জন পুলিশ সদস্যের পিআরএল ভোগ শেষে হাজির হওয়ার ৩ কার্যদিবসের মধ্যে নিয়মিত পেনশন প্রস্তাব করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পরীক্ষামূলকভাবে ‘মেসেজ টু কমিশনার’ সেবা চালু
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির জনসভার দিনে হামলায় নিহত কনস্টেবল মো. আমিরুল ইসলামের পরিবারকে মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পেনশন প্রদান করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ওয়ানস্টপ পেনশন সার্ভিস সেল। ২০২৩ সালে কেন্দ্রীয় রিসিভ অ্যান্ড ডেসপাস শাখা থেকে গৃহীত ও বিতরণ করা পত্রের সংখ্যা এক লাখ ৭ হাজার ৮৯০টি। ডিএমপির পুলিশ ব্লাড ব্যাংকের গত এক বছরে নিবন্ধনকৃত মোট ব্লাড ডোনারের সংখ্যা ৬ হাজার ৩৬৮ জন। যার মধ্যে পুলিশ সদস্য এক হাজার ২৩২ জন এবং সাধারণ নাগরিক ৫ হাজার ১৩৬ জন। ইন্টারনাল ওভারসাইট উইং গত এক বছরে হওয়া মামলা ও জিডির বাদী এবং পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের আবেদনকারীর মধ্যে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭৩ জন সেবাপ্রার্থীর সঙ্গে ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্স থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ও ফোর্স সরাসরি ফোনে যোগাযোগ করে তাদের মতামত লিপিবদ্ধ করেছেন।
এক ক্লিকে সব তথ্য দিতে ওয়ানস্টপ প্লাটফর্ম চালু
ডিএমপির ডিবি (ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ) জনগুরুত্বপূর্ণ, চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস মামলার তদন্তে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে আসছে। মামলা তদন্তের পাশাপাশি মাদকদ্রব্য, চোরাইগাড়ি, জাল টাকা, চোরাই মোবাইল ফোন উদ্ধারে মাইলফলক অর্জন করেছে। এছাড়াও সাইবার অপরাধী ও সংঘবদ্ধ অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করে যাচ্ছে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। ডিবির নিরলস প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য অনলাইন প্রতারক, অনলাইন জুয়া, ব্লাকমেইলকারী অবৈধ বেটার, হ্যাকার এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্র শনাক্ত এবং গ্রেফতার করা হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া এবং সাইবার স্পেসে ক্রমবর্ধমান অপরাধ প্রতিরোধ এবং সংঘটিত অপরাধ তদন্ত ডিএমপির ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চে গঠন করা হয়েছে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব। এসআইভিএস প্লাস প্লাস ডেটাবেজের মাধ্যমে সন্দিগ্ধ অপরাধীদের বায়োমেট্রিকসহ যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। সিঙ্গেল ক্লিকে কোনো ব্যক্তির সব তথ্য বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে সংগ্রহ করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল তৈরির জন্য ডিআরআইএমএস (ডিএমপি রেনোভেটেড ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) নামে ওয়ানস্টপ প্লাটফর্ম চালু করা হয়েছে।
অটোমেটিক নম্বর প্লেট রিকগনাইজেশন প্রযুক্তি সংযোজন
উন্নত মেগাসিটিগুলোর আদলে আধুনিক সার্ভেইল্যান্স ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পুরো ঢাকা মহানগরীর ২২১টি স্থানে ৬৮০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এলওসিসি প্রকল্পের আওতায় গুলশান বিভাগে ২২১টি লোকেশনে এক হাজার ২০০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরাগুলোর কার্যকারিতা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং ঢাকার প্রবেশস্থলে স্থাপিত ক্যামেরাগুলো এএনপিআর (অটোমেটিক নম্বর প্লেট রিকগনাইজেশন) প্রযুক্তি সংযোজন করা হয়েছে।
৫ বছরে ২৭ লাখ ২২ হাজার মামলা
বিশ্বের ৬ষ্ঠ ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা মহানগরীর যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে রোদ-বৃষ্টি-ঝড়-শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে কর্তব্য পালন করে যাচ্ছে ডিএমপির ট্রাফিক ইউনিট। গত পাঁচ বছরে সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় আধুনিক ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন ব্যবস্থায় পিওএস ডিভাইসের মাধ্যমে ২৭ লাখ ২২ হাজার ২৯৫টি মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও ট্রাফিক সচেতনতা বাড়াতে ২০২৩ সালে প্রতি মাসে গড়ে ২০০টি সভা ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
জঙ্গিবিরোধী ২৭টি হাইরিস্ক অপারেশন করেছে সিটিটিসি
ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বর্তমানে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে আজ বিশ্বের রোল মডেল। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সিটিটিসি ২৭টি হাইরিস্ক অপারেশন পরিচালনা করেছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৬১৯টি মামলায় ২ হাজার ২৪৭ জন উগ্রবাদী সন্ত্রাসী এবং জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। ২০২৩ সালে সিটিটিসি জঙ্গিবাদে জড়িত ৩৮ জন সদস্যের ডি-রেডিক্যালাইজেশন কাউন্সেলিং কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে এবং ১৭ জন উগ্রবাদীকে পুনর্বাসনে সহায়তা দিয়েছে। সিটিটিসি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে ৯টি গবেষণাকর্ম সম্পন্ন করেছে।
নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স
ডিএমপির অপারশেনস বিভাগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এলাকার ১৬টি সংসদীয় আসনের জন্য নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সাধন, নিরাপত্তা ঝুঁকি পর্যালোচনা করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। দুই হাজার ১৪৬টি ভোটকেন্দ্রের জন্য স্ট্যাটিক, মোবাইল, স্ট্রাইকিং, স্ট্যান্ডবাই এবং তদারকি ভিত্তিক অফিসার ও ফোর্স মোতায়েন করা হয়। সর্বোপরি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কার্যক্রম সুচারুরূপে সম্পাদন করেছে।
এছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক কর্মসূচি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খেলাধুলা এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন করে থাকে।
পুলিশ সর্ম্পকে নেতিবাচক ধারণার অবসান ঘটিয়ে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি এবং জনমত গঠনে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অধীন ডিএমপি নিউজ (www.dmpnews.org) নামে অনলাইন পত্রিকা চালু করা হয় ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি। ২০২৩ সাল পর্যন্ত দৈনিক গড়ে ২১টি খবর পত্রিকাটিতে প্রকাশ করা হয়েছে এবং মোট ৭১ কোটি ৫৯ লাখ ১৩ হাজার ২৩৩ জন পাঠক অনলাইন পত্রিকাটি পাঠ করেছেন। পুলিশের ইতিবাচক উদ্যোগ জনগণের সামনে তুলে ধরা এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে গত এক বছরে ১৪টি ডকুমেন্টারি ও ৭৯টি টিভিসি নির্মাণ ও প্রচার করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অর্থ বিভাগ, লজিস্টিকস বিভাগ, ট্রান্সপোর্ট বিভাগ, প্রকিউরমেন্ট ও ওয়ার্কশপ বিভাগ এবং ডেভেলপমেন্ট বিভাগ অবকাঠামো ও ‘সাপোর্ট সার্ভিস’ প্রদানের মাধ্যমে ডিএমপির অন্য সব বিভাগে প্রাণসঞ্চার করে থাকে। অর্থবিভাগ থেকে ডিএমপি ৩৩ হাজার অফিসার ও ফোর্সের বেতন ভাতা আইবিএএস প্লাস প্লাস সন্নিবেশ করা হয়েছে। অর্থ বিভাগের তত্ত্বাবধানে ডিএমপির বাজেট বরাদ্দ পিপিএ এবং পিপিআরের বিধিবিধান পালনপূর্বক ব্যয় নির্বাহ এবং অডিট কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সন্তোষজনকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ডিএমপির ডেভেলপমেন্ট বিভাগ থেকে ডিএমপি ভবনগুলো মেরামত এবং আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডেভেলপমেন্ট বিভাগ গণপূর্ত বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে উত্তরখান ও দক্ষিণখান থানার নতুন ভবনের নির্মাণকাজ গ্রহণ করেছে।
আরও পড়ুন: যতটুকু অপরাধ ততটুকু শাস্তি পাবে
ডিএমপি ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ফোর্স বিভাগ এবং পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ফোর্সের ব্যবস্থাপনা, শৃঙ্খলা, কল্যাণ এবং শারীরিক ও মানসিক উৎকর্ষ সাধনে কাজ করেছে। ডিএমপির ফোর্সদের আরও দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে লাইন্সগুলোতে নিয়মিত ফায়ার আর্মস প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে। ফোর্সদের চিত্তবিনোদন এবং শারীরিক সক্ষমতা বাড়াতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সসহ চারটি আঞ্চলিক পুলিশ লাইন্সে নতুন খেলার সরঞ্জাম সংযোজন করা হয়েছে।
এক বছরে ৮৪ বিদেশি ভিভিআইপির নিরাপত্তা
ডিএমপি প্রটেকশন বিভাগ স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের সঙ্গে সমন্বয় করে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং সরকার ঘোষিত বিদেশি ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। ২০২৩ সালে প্রটেকশন বিভাগ ৮৪ জন বিদেশি ভিভিআইপি ডেলিগেটের নিরাপত্তা দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও আলোচ্য সময়ে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে দেশে অনুষ্ঠিত ৯টি সম্মেলন এবং ২১টি আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশগ্রহণকারীদের আবাসিক হোটেলকেন্দ্রিক নিরাপত্তা এবং গমানাগমনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক এস্কর্ট প্রদানের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
ডিএমপির ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগ অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে মহানগরীতে অবস্থিত বিশ্বের ৫০টি দেশের দূতাবাস, হাইকমিশন, অ্যাম্বাসেডর, হাইকমিশনারদের বাসভবন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান করে আসছে। ডিএমপির সচিবালয় নিরাপত্তা বিভাগ বাংলাদেশের নীতি নির্ধারণী কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ের অভ্যন্তরে এবং বহিঃবেষ্টনীর নিরাপত্তা প্রদান করে আসছে।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় সুপ্রিম কোর্টের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব ডিএমপির সুপ্রিম কোর্ট অ্যান্ড স্পেশাল কোর্ট সিকিউরিটি বিভাগ পালন করে আসছে।
৩২৫ ভুক্তভোগীকে ভিকটিম সার্পোট সেন্টারে সেবা
ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুদের সংবেদনশীলতা ও অধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় উইমেন সার্পোট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন। ২০২০ সালে এই ডিভিশনে কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি) এবং হট লাইন (০১৩২০০৪২০৫৫) সেবা চালু করা হয়েছে। যার মাধ্যমে সংবাদ পাওয়ার পর দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে আইনি সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত নারী ও শিশু বিষয়ক ১২১টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ৭৬টি পারিবারিক বিরোধ মীমাংসা করা হয়েছে এবং ৩২৫ জন ভুক্তভোগীকে ভিকটিম সার্পোট সেন্টারে রেখে সেবা দিয়েছে। নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় এবং এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের ছাদে গড়ে তোলা হয়েছে মনোরম ছাদবাগান, যা ২০২৩ সালে বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরষ্কার অর্জন করেছে।
একটি শক্তিশালী সফল সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠতে হলে দক্ষ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিটি সদস্যের দক্ষতা ও পেশাদারত্বের উন্নয়নে কাজ করছে পিআর অ্যান্ড এইচআরডি বিভাগ। ২০২৩ সালে পিআর অ্যান্ড এইচআরডি বিভাগ থেকে ৪৭টি কোর্সে ১৭৯টি ব্যাচে মোট ৩৩ হাজার ৮৩৫ জন পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকায় ৩০৬ বিটে কর্মরত বিট অফিসার
অপরাধ প্রতিরোধ ও নিবারণে পুলিশ ও জনতার সমন্বিত উদ্যোগে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ‘পুলিশ-জনতা ঐক্য করি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি’ প্রতিপাদ্যকে উপজীব্য করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করেছে। বিট পুলিশিংয়ের আওতায় ৩০৬টি বিটে কর্মরত বিট অফিসাররা ঢাকা মহানগরীতে বসবাসরত সব নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করে সিআইএমএসে (সিটিজেন ইনফরমশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সিআইএমএসে ৪ কোটি ১৪ লাখ ৮২ হাজার ৩১৪ জন নাগরিকের তথ্য সন্নিবেশ করা হয়েছে। কিশোর অপরাধ, নারী নির্যাতন, জঙ্গিবাদ বিভিন্ন বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা এবং স্থানীয় পর্যায়ে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বিট অফিসাররা ২৮ হাজার ৯৭৮টি উঠান বৈঠক করেছেন।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেসন) বিপ্লব কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন’ এই নীতিকে ধারণ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তার প্রতিটি সদস্যকে উত্তম কাজের জন্য পুরষ্কৃত করে থাকে। অপরপক্ষে ডিএমপির কোনো সদস্য যদি আইন ও বিধি পরিপন্থি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে দ্রুত তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সেবা প্রদানে সরকারের যে কয়েকটি সংস্থা রয়েছে, তার মধ্যে পুলিশ সবচেয়ে দৃশ্যমান। মানুষের প্রত্যাশার কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা সবসময় করে আসছি আমরা। প্রতিটি থানায় যে মামলা বা জিডি হচ্ছে, তার বাদীর সঙ্গে কথা বলে সেখানে তারা কী ধরনের সেবা পেয়েছেন, তা জানতে আমার অফিস থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। যখনই মনে করছি থানার একটি বিষয়ে আলাদা নজর দেওয়া দরকার, তখনই তাদের ডেকে আনা হচ্ছে।’
যানজট নিরসনে কার্যক্রম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডিএমপিতে যোগদানের পর থেকে যে বিষয়টির দিকে জোর দিয়েছি তা হলো, সড়কে মামলা করার চেয়ে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। একজন ট্রাফিক অফিসার সারাদিন দাঁড়িয়ে একটি গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষার করার চেয়ে ওই পরিবহনের চালক বা সংশ্নিষ্টরা কী কী অপরাধ করেছেন, সেদিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। চালকদের এ ধরনের আচরণগত সমস্যার দিকে জোর দিচ্ছি। প্রথমত সবাইকে অনুরোধ করবো নিজে আইন মেনে চলুন। যদি কখনো সমস্যায় পড়েন, নির্ভয়ে পুলিশের কাছে যান। আমরা আপনাদের সহায়তা করতে সবসময় প্রস্তুত। শান্তি শপথে বলীয়ান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিটি সদস্য নিরাপদ ঢাকা মহানগরী গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন।’
টিটি/কেএসআর