দায়িত্ব নিয়েই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা পরিকল্পনামন্ত্রীর
নতুন পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম বলেন, দুর্নীতির বিষয়ে কোনো ছাড় নয়। যদিও এটি জাতীয় ইস্যু। এটি রাষ্ট্রীয় ও বৈশ্বিক বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত মনে করি। আমি ১৫ বছর এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু একটি লোকও বলতে পারবেন না আমি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম।
তিনি বলেন, এটি জাতীয় বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে যুক্ত। এখানে হাত দেওয়া কঠিন। এটি শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দুর্নীতি নিরসনে সংগ্রাম চলছে, যুদ্ধ চলছে এবং জিহাদ চলছে। এই যুদ্ধকে এগিয়ে নেব। দুর্নীতির প্রশ্নে কোনো আপস নেই।
মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনই তার দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিং এ তিনি এসব কথা বলেন। রোববার (১৪ জানুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের মন্ত্রীর দপ্তরে এ ব্রিফিং অনুষ্ঠিত। এ সময় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব সত্যজিত কর্মকার উপস্থিত ছিলেন।
সকাল সাড়ে ১০টা দিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এসেই প্রথমে তিনি এনইসি সম্মেলন কক্ষে উপসচিব পর্যায় থেকে ওপরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এরপরই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
উন্নয়ন প্রকল্পের অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি নেই এ কথা বলবো না। এটা ঠিক হুট করে ঠিক করাও যাবে না। দেখা যায় প্রাইমারির শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়। এমন হলে বাচ্চারা কী শিখবে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই বাচ্চাদের দুর্নীতিমুক্ত থাকার শিক্ষা দিতে হবে। তাহলে তারা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিক থাকবে। আমি আমার এলাকায় নির্দেশনা দিয়েছি যেন কেউ নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি করতে না পারে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের প্রকল্পগুলোর দিকে নজর দিতে চাই। সেই সঙ্গে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে থাকবে বিশেষ নজর। গ্রামের রাস্তা-ঘাট যদি ঠিক থাকে। মানুষ যদি সহজেই শহরে যাতায়াত করতে পারে তাহলেই উন্নয়ন টেকসই হবে। আমি যে এলাকায় নির্বাচিত হয়েছি আমার উপজেলায় পায়ে হেঁটে বেড়িয়েছি। আমি মনে করি দেশের অন্যান্য উপজেলারও একই চিত্র। তাই গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন বিশেষ গুরুত্ব থাকবে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাত নিয়ে নানা অভাব ও অভিযোগ আছে। সেগুলো কমানোর চেষ্টা থাকবে। গ্রামে যদি স্বাস্থ্য সেবা ভালো থাকে তাহলে মানুষ সেখানেই অন্তত্ব কিছুটা স্বাস্থ্য সেবা পাবেন। আমরা এলাকায় একটি ছেলের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এখানেও সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমি জানতে পেরে সিএমএইচ এ পাঠিয়েছি। যদি গ্রামেই সেই স্বাস্থ্য সেবা ভালো থাকত তাহলে অন্তত্ব সেখানেই কিছু সেবা পেত। প্রধানমন্ত্রী কমিউনিটি চিকিৎসা সেবা দেওয়াসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। সেসব এগিয়ে নিয়ে আমি কাজ করবো।
মন্ত্রী বলেন, বিদেশি ঋণের ওপর জোর দেওয়া হবে। দেশে টাকা প্রয়োজন। গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট, অবকাঠামো সংযোগসহসহ গ্রাম নির্ভর প্রকল্পগুলোতে মনোযোগ দেওয়া হবে। যেন অর্থনৈতিক চাঞ্চল্য থাকে। এদিকে প্রথম অগ্রাধিকার। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়া হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন যেন ধীরগতিতে না হয়। স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অনেক অব্যবস্থাপনা আছে।
সাধারণ মানুষ এখানে উপকৃত হয় না। পরিকল্পনামন্ত্রী মানুষ যদি নিজ এলাকায় স্থিতিশীল হয়, কাজ পায় তাহলে শহরে অভিগমন হবে না। সে বিষয়ে বিশেষ পরিকল্পনা নেবেন পরিকল্পনামন্ত্রী। প্রকল্প বাস্তবায়নে ছাড় নিয়ে জটিলতায় কোনো ছাড় নয়, করতেই হবে। দুনীতি নিরসনে কাজ চলবে।
কোথায় কোথায় বাধা আছে তা দেখা হবে বিশেষভাবে। দুনীতি এখন জাতীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হয়ে গেছে। এটার বৈশিষ্ট্যের ওপর হাত দেওয়া যাবে না। তবে জিহাদ অবাহত থাকবে। শতভাগ নিশ্চিত থাকেন, কোথাও ছাড় দেওয়া হবে না। পরিকল্পনামন্ত্রী হিসাবে আমি শতভাগ দায়িত্ব পালন করবো।
প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। কাজ সময়মতো শেষ করতে হবে। নতুন মন্ত্রী বলেন, বিদেশি ঋণের ওপর জোর দেওয়া হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সত্যজিৎ কর্মকার। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন উপস্থিত ছিলেন।
এমওএস/এমআরএম/এমএস