ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

আইন অমান্য করে আতশবাজি-ফানুসে নতুন বছর উদযাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১২:০৪ এএম, ০১ জানুয়ারি ২০২৪

পুলিশের নিষেধাজ্ঞার পরও বিকট শব্দে পটকা-আতশবাজি ফোটানোর আওয়াজ আর ফানুস উড়িয়ে উদযাপিত হচ্ছে নতুন বছর ২০২৪। রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে আতশবাজি ও ফানুস উড়িয়ে ২০২৪ সালকে স্বাগত জানায় ঢাকাবাসী। আতশবাজির ঝলকে রঙিন হয়ে ওঠে ঢাকার আকাশ। এর সঙ্গে রয়েছে পটকার শব্দ, ফানুস। অথচ নিষেধাজ্ঞা ছিল এসব আয়োজনে। কিন্তু সব নিষেধাজ্ঞা ভেঙে বরাবরের মতো এবারও খ্রিষ্টীয় নতুন বছরকে উদযাপনে ছিল সবকিছুই।

রোববার (৩১ ডিসেম্বর) দিনগত মধ্যরাতে (সময় অনুযায়ী ১ জানুয়ারি প্রথম প্রহরে) রাজধানীর প্রায় সব এলাকায় আতশবাজি ও ফানুস ওড়াতে দেখা গেছে।

যদিও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান ক্ষমতাবলে থার্টি ফার্স্ট নাইট উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বেশকিছু নির্দেশনা দেন। এর মধ্যে রয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের আতশবাজি, পটকা ফুটানো, ফানুস ওড়ানো এবং মশাল মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।

আরও পড়ুন: অনির্দিষ্টকালের জন্য আতশবাজি-ফানুস-মশাল মিছিল নিষিদ্ধ করলো ডিএমপি

ডিএমপি কমিশনারের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং- III/৭৬) এর ২৮ ও ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে (১৮ ডিসেম্বর) রাত ১২টা থেকে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের আতশবাজি, পটকা ফুটানো, ফানুস ওড়ানো ও মশাল মিছিল ইত্যাদি নিষিদ্ধ ঘোষণা করছি।’

ঢাকায় থার্টি ফার্স্ট নাইটে উন্মুক্ত স্থানে কোনো ধরনের আয়োজন করার সুযোগ ছিল না। কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছিল মানুষের বাসা-বাড়ির ছাদকেও। কিন্তু তাতে থামিয়ে রাখা যায়নি উদযাপন। আতশবাজি আর ফানুসে ভরপুর ঢাকার আকাশ। রাজধানীর পুরান ঢাকাসহ প্রায় অধিকাংশ ভবনের ছাদেই রয়েছে আতশবাজি আর ফানুস ওড়ানোর আয়োজন। অনেকে আবার ছাদে বারবিকিউ পার্টিসহ পারিবারিক নানা আয়োজন করেছেন।

jagonews24.com

ফানুস-আতশবাজি-গুলি ফোটালে বিস্ফোরক আইনে মামলা
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ৩১ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার পরও যদি কেউ ফানুস ওড়ায়, আতশবাজি ফোটায় বা অস্ত্র দিয়ে গুলি ছোড়ে, তাহলে নির্দেশনা অনুযায়ী অ্যাকশন নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। তাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করা হবে।’

আরও পড়ুন: ৫ বছরে আতশবাজি ও ফানুসে কোটি টাকার ক্ষতি, সতর্ক ফায়ার সার্ভিস 

প্রতি বছরই থার্টি ফার্স্ট নাইটের আগে বলা হয়, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু প্রায় প্রতিটি বাসার ছাদেই আতশবাজি ফোটানো হয়। তাহলে নিরাপত্তার বিষয়টি কেমন থাকছে? জানতে চাইলে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ঢাকা শহরে পুলিশের সদস্য সংখ্যা হলো ৩৩ হাজার। আর ঢাকায় বসবাসকারী নাগরিকের সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। আমরা মনে করি, পুলিশের পক্ষ থেকে, ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে নগরবাসীকে সতর্ক করা হয়। কিন্তু কিছু মানুষ যদি না মানে, আইন তোয়াক্কা না করে... তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তো অ্যাকশন নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় দেখি না।’

মেট্রোরেলের এক কিলোমিটারের মধ্যে ফানুস না ওড়ানোর অনুরোধ
মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৬ এর উভয় পাশে এক কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারীদের থার্টি ফার্স্ট নাইট এবং  খ্রিষ্টীয় নতুন বছর উদযাপন উপলক্ষে ঘুড়ি, ফানুসসহ যেকোনো বিনোদন সামগ্রী ওড়ানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

গত বছর ফানুসের কারণে মেট্রোরেল বন্ধ ছিল দুই ঘণ্টা
মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক তারের ওপরে ফানুস পড়ায় দুর্ঘটনা রোধে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল। এ সময় মেট্রোরেলের ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পথজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফানুস অপসারণ করা হয়।

থার্টি ফার্স্ট নাইটে ৫ বছরে আতশবাজি-ফানুসে কোটি টাকার ক্ষতি
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে আতশবাজি ও ফানুসে সারাদেশে এক কোটি আট লাখ ৬৮ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি না ফোটানো এবং ফানুস না ওড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে বাহিনীটি।

আরও পড়ুন: থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি-ফানুস ওড়ালেই ব্যবস্থা

ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, ২০২২ সালের থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি ফোটানো ও ফানুস ওড়ানোর কারণে শতাধিক অগ্নিকাণ্ড ঘটে। যাতে প্রায় ১৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়। আতশবাজি ফোটানো ও ফানুস ওড়ানো থেকে ২০২১ সালে ১৬টি অগ্নিকাণ্ডে প্রায় চার লাখ পাঁচ হাজার টাকার ক্ষতি হয়। ওই বছর আতশবাজির উচ্চশব্দে তানজিম উমায়ের ওরফে মাহমুদুল হাসান নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়।

২০২০ সালে ৫০টি অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, ২০১৯ সালে ৭২টি অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা এবং ২০১৮ সালে ৪২টি অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৫৬ লাখ ছয় হাজার টাকার ক্ষতি হয়। এসব অগ্নিকাণ্ড নির্বাপণের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিস তিন কোটি ৬৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকার সম্পদ উদ্ধার করে।

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে সচেতনতা বাড়াতে এরই মধ্যে অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে লিফলেট ও ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিশেষ করে ঢাকার ফায়ার স্টেশনগুলোকে সতর্ক রাখা হয়েছে; যাতে করে এ সংক্রান্ত যেকোনো দুর্ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

টিটি/কেএসআর