নিষেধাজ্ঞার পরও অলিগলিতে বিক্রি হচ্ছে আতশবাজি-ফানুস
প্রতি বছর ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজিসহ নানা আয়োজনে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করা হয়। তবে এসব উদযাপনের কারণে প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগাসহ নানা দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের আতশবাজি, পটকা ফুটানো, ফানুস ওড়ানো এবং মশাল মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
কিন্তু নিষিদ্ধ ঘোষণার পরও থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হরহামেশাই চলছে আতশবাজি, পটকা, স্পার্কলার, আকাশ-রকেট ও ফানুস বিক্রি। গোপনে রাজধানীর অলিগলিতে, রাস্তার মধ্যে দরদাম করে চুপিসারে বিকিকিনি চলছে এসব বস্তু।
রোববার (৩১ ডিসেম্বর) পুরান ঢাকার শাঁখারিবাজার, লক্ষ্মীবাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শাঁখারিবাজারের রাস্তার পাশেই চুপিসারে দাঁড়িয়ে থাকেন এসব বিক্রেতা। বাজার দিয়ে তরুণ বয়সী ছেলেরা প্রবেশ করলে তাদের চোখে চোখ পড়লেই জিজ্ঞেস করা হয় আতশবাজি, পটকা লাগবে কি না? হ্যাঁ সম্মতি দিলেই গলির ভেতর গিয়ে চলে দরদাম।
তেমনি একজন বিক্রেতা ছদ্ম নাম (রাশেদ)। তার কাছে এ প্রতিবেদক ক্রেতা পরিচয়ে দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফানুস ৮০ টাকা, আতশবাজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। কয়টি লাগবে? বেশি নিলে দাম কম রাখা হবে। দরদামে মিললেই সঙ্গে নিয়ে সব প্যাকিং করে দেবেন। এসময় তিনি সঙ্গে মোবাইল নম্বর ও নাম দিয়ে দেন।
শাঁখারিবাজারের কয়েকজন স্থানীয় ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানকার আতশবাজি ফানুস আসে মূলত চকবাজার থেকে। গত বছর থেকে বিক্রি একদম কমে গেছে। কোন দোকানে জিজ্ঞাস করে আপনি পাবেন না। কিন্তু এ শাঁখারিবাজার থেকেই প্রচুর আতশবাজি, পটকা ও ফানুশ বিক্রি হয়।
বাজারের পাশে রাখাল চন্দ্র বসাক লেনের এক দোকানি বলেন, এভাবে চাইলে কেউ দেবে না। কোনো একটা লোক ধরে নিতে হবে। কয়েকদিন আগে শাঁখারিবাজার থেকে অনেককে ধরে নিয়ে গেছে। তাই এখন সবাই গোপনে সুযোগ বুঝে বিক্রি করে।
বাজারের সুর বিতানের দোকানি বলেন, এগুলো দোকানে জিজ্ঞেস করবেন না। আমরা বিক্রি করি না। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকেন। বিক্রেতারাই জিজ্ঞেস করবে আপনাকে।
নারিন্দা থেকে তারাবাতি কিনতে এসেছেন সুমন ও তার বন্ধু রবিন। দুজন নারিন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তারা বলেন, আমরা তারাবাজি নিতে এসেছি। এটাও দেখি পাচ্ছি না। ফানুস নাকি কিনতেই দেয় না। ভয়ে জিজ্ঞেস ও করিনি।
সম্প্রতি পটকা, আতশবাজি ও ফানুস বিক্রি বন্ধে দোকানিদের সঙ্গে পুলিশের সভাও হয়েছে। চকবাজারের জরি ব্যবসায়ী সমিতি এবং খুচরা জন্মদিনের আইটেম বিক্রেতাদের সঙ্গে সম্প্রতি মতবিনিময় সভা করেছে ডিএমপির লালবাগ বিভাগ। অন্যদিকে ফানুস ওড়ানো অবস্থায় অথবা আতশবাজি ফোটানো অবস্থায় কেউ যদি হাতেনাতে ধরা পড়ে তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি। গত সোমবার ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এ সংক্রান্ত একটি আদেশও দিয়েছেন।
গোপনে ফানুস বিক্রির বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, আতশবাজি ফানুস বিক্রি বন্ধ হওয়ার জন্য আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে। গতকাল শাঁখারিবাজার থেকে আমরা ৩৫ কেজি আতশবাজি ও দুই ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করছি। আজও শাঁখারিবাজারে আমাদের টহল থাকবে।
জানা গেছে, গত বছর থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে ফানুস ওড়াতে গিয়ে রাজধানীর অন্তত ১০টি স্থানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে মাতুয়াইল স্কুল রোডের একটি বাড়িতে ফানুশ থেকে বড় ধরনের আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। একই রাতে ঢাকার বাইরে এ সংখ্যা ছিল প্রায় ১৯০টি।
আরএএস/এমআইএইচএস/জিকেএস