প্রার্থীদের হলফনামা দেখে আয়কর আদায় করতে বললেন দেবপ্রিয়
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের অনেকের সম্পদ গত ৫ থেকে ১০ বছরে বেড়েছে কয়েকশ গুণ পর্যন্ত। নির্বাচন কমিশনে দেওয়া প্রার্থীদের হলফনামায় এমন তথ্য উঠে আসলেও তারা সে অনুযায়ী আয়কর দেন কি না এমন প্রশ্ন অনেকের। এ অবস্থায় কর আদায় বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রার্থীদের হলফনামা দেখে আয়কর আদায় করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
হলফনামায় যে হারে প্রার্থীদের সম্পদ বাড়ার তথ্য এসেছে, সেই অনুযায়ী প্রার্থীরা কর দেন কি না- এমন প্রশ্ন রেখে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘উনাদের যে ১০০ গুণ, ৫০০ গুণ সম্পদ বেড়েছে, তারা কি ৫০০ গুণ কর দেন? এইটা তো এখন দেখার বিষয়। আইএমএফের শর্ত পূরণে এনবিআরের জন্য এর চেয়ে বড় উৎস আর তো কিছু হতে পারে না। আমরা দেখতে চাই এনবিআর তাদের জন্য কী করে। আগামী চার মাসে তারা কি সব কর পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করে বলবে?’
শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে সিপিডির এই ফেলো বলেন, ‘ভোট আসবে-যাবে, নির্বাচন যদি আমার মৌলিক রাজনৈতিক সমাধান দিতে না পারে, বহু মানুষের মনোভাবকে অস্বীকার করে, সেই নির্বাচনের ফলাফল টিকিয়ে রাখা কষ্ট। বাংলাদেশের ইতিহাস এটাই বলে।’
তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন নিয়ে মতামত দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এটা বাংলার মানুষ খুব ভালোই জানে। প্রথাগত গণতান্ত্রিক ধারা দুর্বল হবে, সামাজিক শক্তির ভূমিকা এখানে আরও বাড়বে। ইতিহাসের কাছে নাগরিতদের দায় আরও বেড়ে গেলো। নিশ্চুপ থাকার সময় এটা না। কেউ যদি মনে করে আমি চুপচাপ, নিভৃতে থাকবো; নিরীহভাবে নিরাপদে থাকবো আর আটলান্টিকের পাশ থেকে এসে আমার দেশের সমাধান করে দিয়ে যাবে- এটা হবে না। আমার দেশের সমস্যা আমাকেই সমাধান করতে হবে। কেউ আমার জন্য কাজ করে যাবে- এর চেয়ে ভ্রান্ত ধারণা আর কিছু হতে পারে না।
প্রার্থীরা কর ফাঁকি দিতে মুরগির খামারি হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সবাই মুরগির খামারি হয়ে গেছে। সবাই মাছচাষি হয়ে গেছে। কারণ একটায়, কর সেই অর্থে দিতে হয় না। কর রেয়াত ছিল, ওইখান থেকে আয়-ব্যয় বেড়ে গেছে। এটা আগামী দিনে এনবিআরের কাছে চ্যালেঞ্জ। তাদের তো একটা প্রতিশ্রুতি (কর আদায়) দেওয়া আছে, সেটা পূরণ করার সব উৎস হিসেবেই।’
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘যে যতবার নির্বাচন করেছে তার আয় গাণিতিকভাবে তত বেশি বেড়েছে। আয় বাড়ার হারের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা নির্বাচিত হওয়ার একটা ইতিবাচক সম্পর্ক আছে। আপনারা বুঝেন তাহলে কেন সবাই নির্বাচিত হতে চায়, পাগল হয়ে গেছে কেন। কারণ রাষ্ট্রীয় সম্পদের অধিকার পাওয়া নাগরিক অধিকারের চেয়ে তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে ঢুকতে পারলে অ্যাকসেস টু স্টেট রিসোর্সেস, এটাই সবচেয়ে ভালো রাস্তা। এতে থাকতে পারলে আপনি ভাগবাটায়োরার কিছু অংশ পাবেন, নাগরিক হিসেবে কিছু পাবেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি যে জটিল থেকে জটিলতর অবস্থানে যাচ্ছে, যেখানে কেবল নিজের টাকা না, বিদেশের টাকা শোধ করতে পারছি না দেখে জ্বালানি নিয়ে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। মূল্যস্ফীতি আগামী দিনে কী দাঁড়াবে আমরা বুঝে উঠতে পারছি না। সেখানে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র সেটা কীভাবে মোকাবিলা করবে, সেই উৎকণ্ঠা আমাদের সবার মধ্যে আছে।
অনুষ্ঠানে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা, জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য এবং ‘নীরব জনগোষ্ঠী’র কণ্ঠ শক্তিশালী করার বিষয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। মিডিয়া ব্রিফিংয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, উন্নয়ন কর্মী ও জেন্ডার বিশ্লেষক এম বি আখতার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আসিফ মোহাম্মদ শাহান।
মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সভাপতিত্ব করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। মিডিয়া ব্রিফিংয়ের তাৎপর্য উপস্থাপন করেন সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।
এসএম/কেএসআর/এএসএম