ভোটের প্রচারণায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা, মন্থর সচিবালয়
নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে চলছে দেশের কার্যক্রম। আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা এখন নিজ নিজ এলাকায় প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সব সময় সরগরম থাকা সচিবালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের দপ্তরগুলো তাই এখন সুনসান। দর্শনার্থীদের ভিড় নেই। আনাগোনা কম তদবিরকারীদের। সচিবরা চালিয়ে নিচ্ছেন অল্পবিস্তর কাজ। কোনো কোনো দপ্তরে গল্প-আড্ডাও চলছে কাজের ফাঁকে।
নির্বাচনকালীন সরকার হওয়ায় সচিবালয়ের কাজের পরিধি আগেই কিছুটা কমেছে। এখন চলছে রুটিন কাজ। এর মধ্যে আবার মন্ত্রীরা অফিস না করায় সচিবালয়ের কাজে এসেছে শিথিলতা। কোনো কোনো কর্মকর্তা দেরি করে আসছেন। কাজের চেয়ে বেশি সময় মশগুল থাকছেন সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা-গল্পে।
আরও পড়ুন>> ‘নীরব’ সচিবালয় এলাকায় শব্দ দূষণ বেড়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ
তবে নির্বাচনের কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়গুলোতে রয়েছে ব্যস্ততা। সেই মন্ত্রণালয়গুলোর মন্ত্রীরাও অফিস করছেন বেশি। প্রচারণার ফাঁকে অফিসেও সময় দিচ্ছেন তারা।
আমরা রুটিন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। নতুন কোনো প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে না। আগের প্রকল্পগুলোই চলছে।- খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান হোছাইনী
সব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী অফিস না করায় সচিবালয়ে তদবিরকারীদের সংখ্যাও কমে গেছে। আগের চেয়ে এখন অনেক কম পাস ইস্যু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সচিবালয়ের নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
টেকনোক্র্যাট দুজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগের পর এখন মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া মোট সদস্য ৪৪ জন। এর মধ্যে ২৩ জন মন্ত্রী, ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী। গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি।
তফসলি ঘোষণার পর গত ১৬ নভেম্বর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘সরকার রুটিন কাজগুলো করে যাবে। এটাই গণতন্ত্রের মূল বক্তব্য যখন নির্বাচন আসে। পলিসি ডিসিশন (নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত) নেওয়া হবে না, কারণ একটা নির্বাচন আছে। জনগণের কাছে আমাদের ম্যান্ডেট দেবো।’
আরও পড়ুন>> সচিবালয়ে বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাত, তাড়া খাচ্ছেন অনেকে
মঙ্গল ও বুধবার সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ঘুরে দেখা যায়, কাজ-কর্ম চলছে কম। দপ্তর ঘিরে নেই দর্শনার্থীদের কোলাহল। মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের একান্ত সচিবদের কর্মতৎপরতাও কম। সহকারী একান্ত সচিবদের (এপিএস) কক্ষগুলো পড়ে আছে খালি, কারণ তারা মন্ত্রীদের সঙ্গেই রয়েছেন।
আমরা স্বাভাবিকভাবে কাজ করছি। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিষয় যেগুলো আছে, সেগুলো নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা নিয়ে কাজ করছি। আমাদের অন্য কাজও চলমান। গতি কমেনি।- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে সচিবালয়ের চার নম্বর ভবনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন অতিরিক্ত সচিবের দপ্তরে গিয়ে দেখা যায়, তারা আসেননি। কেউ কেউ আসেন সকাল সাড়ে ১০টার পরে।
দুপুর ১২টার দিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, সহকর্মীদের নিয়ে গল্প করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কিছুটা রিল্যাক্সে আছি। আপনি এসেছেন, সময় নিয়ে কথা বলতে পারছি। অন্য সময় হলে পারতাম কি না সন্দেহ। এমপি মহোদয়রা সব সময় আমাদের কাছে তাদের কাজের জন্য আসেন। এখন সেই অবস্থা নেই।’
ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম-সচিব জানান, এখন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থায় বদলি, পদোন্নতি কার্যক্রম বন্ধ। তাই বদলি, পদোন্নতি ঘিরে মানুষের যে আনাগোনা থাকে সেটা নেই।
আরও পড়ুন>> সচিবালয় এলাকায় হর্ন বাজানোয় ১০ চালকের জরিমানা
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খায়রুল আলম সেখ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা রুটিন কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এজন্য প্রয়োজনীয় মিটিং ও অন্য যা লাগছে আমরা করছি।’
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান হোছাইনী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা রুটিন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। নতুন কোনো প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে না। আগের প্রকল্পগুলোই চলছে।’
অন্য সময়ে সচিবালয়ের লিফটগুলোর সামনে ভিড় লেগে থাকলে এখন বেশিরভাগ সময় ফাঁকাই থাকছে। লিফটম্যানরা জানিয়েছেন, সচিবালয়ে দর্শনার্থী অনেক কমে গেছে।
নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মধ্যে অন্যতম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, কর্মকর্তাদের বদলি, পদায়নের কাজ করছে মন্ত্রণালয়টি। একই সঙ্গে মাঠ প্রশাসনের বাইরে নিয়মিত বদলি, পদায়ন, পদোন্নতির কাজও করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা স্বাভাবিকভাবে কাজ করছি। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিষয় যেগুলো আছে, সেগুলো নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা নিয়ে করছি। আমাদের অন্য কাজও চলমান। গতি কমেনি।’
একই সঙ্গে নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্বাচনের নানা কাজে তৎপর থাকতে হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নির্বাচনী এলাকা ঢাকায় হওয়ায় তিনি নিয়মিতই অফিস করছেন।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমানের দপ্তরে গিয়ে দেখা যায়, কোনো কোলাহল নেই। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী থাকলে চার নম্বর ভবনের তৃতীয় তলায় প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের সামনের করিডোর দর্শনার্থীদের আনাগোনায় মুখর থাকে।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, তফসিল ঘোষণার পর এনামুর রহমান আর সচিবালয়ে আসেননি।
বর্তমান মন্ত্রিসভার শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এবং সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ছাড়া বাকিরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন।
আরএমএম/এএসএ/এএসএম