ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি-ফানুস ওড়ালেই ব্যবস্থা

তৌহিদুজ্জামান তন্ময় | প্রকাশিত: ০৫:৫৭ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩

গত কয়েক বছর ধরে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের আনন্দ রাত না গড়াতেই পরিণত হচ্ছে বিষাদে। থার্টি ফার্স্ট নাইটে ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি ফোটানোকে কেন্দ্র করে ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা। ফানুস থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে দুই শতাধিক আগুন ও আতশবাজির শব্দে হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে। মেট্রোরেলের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনও ক্ষতিগ্রস্ত হয় গত বছর। এবার কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ফানুস ও আতশবাজি বিক্রি কিংবা ওড়ানো/ফোটানোর সময় হাতেনাতে ধরা পড়লেই ব্যবস্থা নেবে তারা।

২০২২ সালে থার্টি ফার্স্ট নাইটের অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছিল মানুষের বাসাবাড়ির ছাদও। কিন্তু তাতেও থামিয়ে রাখা যায়নি উদযাপন। আতশবাজি আর ফানুসে ভরপুর ছিল ঢাকার আকাশ। একযোগে পটকা বা আতশবাজি ফোটানোও থেমে ছিল না। বিকট শব্দে কেঁপে উঠেছিল গোটা মহানগরী। অনেক শিশু ও বয়স্করা সে শব্দে অসুস্থ পর্যন্ত হওয়ার খবর মেলে। ফানুসের আগুন ছিটকে পড়ে বিভিন্ন এলাকায় আগুন লেগে ক্ষয়ক্ষতি হয়। অনেক ফানুস মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক তারের ওপর গিয়ে পড়ে। দুর্ঘটনা রোধে দুই ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখা হয় মেট্রোরেল চলাচল।

আরও পড়ুন>> ২০ কেজি ভারতীয় আতশবাজিসহ কারবারি গ্রেফতার 

এবারও থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন নিরাপদ পরিবেশে সম্পন্ন করতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের ফানুস ওড়ানো, আতশবাজি, পটকা ফোটানো ও মশাল মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ডিএমপি। তবুও পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গোপনে বিক্রি হচ্ছে ফানুস ও আতশবাজি। অনলাইনেও মিলছে এসব সামগ্রী।

ডিএমপি বলছে, ফানুস ওড়ানো অবস্থায় অথবা আতশবাজি ফোটানো অবস্থায় কেউ যদি হাতেনাতে ধরা পড়ে তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 jagonews24

‘ফানুস বাংলাদেশ’, ‘ফানুশ ঘর’সহ বিভিন্ন নামের ফেসবুক পেজে দেখা যায়, যে কোনো ফানুস ও আতশবাজি অনলাইনে হোম ডেলিভারিতে বিক্রি করছে তারা। এতে দোকানে না গিয়েও অনেকে ফানুস কিনছেন। তাই প্রতি বছরের মতো দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

গত বছর থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে ফানুস ওড়াতে গিয়ে রাজধানীর অন্তত ১০টি স্থানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে মাতুয়াইল স্কুল রোডের একটি বাড়িতে ফানুস থেকে বড় ধরনের আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। একই রাতে ঢাকার বাইরে এ সংখ্যা ছিল প্রায় ১৯০টি। এসব ঘটনায় একদিকে যেমন মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়, অন্যদিকে আগুন আতঙ্কে ম্লান হয় নববর্ষ উদযাপন।

এসব দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের কয়েক দিন আগে থেকেই কাজ শুরু করেছে বাহিনীটি। বিশেষ এ রাতে সব ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য, আতশবাজি, পটকা ফোটানো বা ফানুস ওড়ানো বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাও এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন>> যেভাবে গোপনে আতশবাজি বিক্রি হয় শাঁখারিবাজারে 

সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান একটি আদেশ দেন। সেই আদেশে বলা হয়েছে- ‘আগামী ২৫ ডিসেম্বর খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন এবং ইংরেজি নববর্ষের প্রাক্কালে ৩১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় নগরবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন আনন্দ উৎসবে অংশ নেবেন। এ আনন্দ উৎসব উদযাপনের নামে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি নিজস্ব সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়।

‘আমি ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং- III/৭৬) এর ২৮ ও ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে (১৮ ডিসেম্বর) রাত ১২টা থেকে শুভ বড়দিন এবং ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের আতশবাজি, পটকা ফোটানো, ফানুস ওড়ানো, মশাল মিছিল ইত্যাদি নিষিদ্ধ ঘোষণা করছি। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে।’

ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন ধরে রাজধানীর যেসব এলাকায় ফানুস বিক্রি হয় সেসব জায়গায় অভিযান পরিচালনা করেছে ডিএমপির বিভিন্ন থানা পুলিশ। স্থানীয় ফানুস বিক্রেতাদের গতবারের অগ্নিদুর্ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ফানুস বিক্রি না করতে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া ডিএমপির প্রতিটি থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নির্দিষ্ট থানাধীন এলাকায় যেন কোনোভাবে থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে ফানুস বিক্রি ও ওড়ানো না হয়। এছাড়া কেউ যদি ফানুস ওড়ায় বা আতশবাজি ফোটায় তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পটকা, আতশবাজি ও ফানুস বিক্রি বন্ধে দোকানিদের সঙ্গে পুলিশের সভা

চকবাজারের জরি ব্যবসায়ী সমিতি এবং খুচরা জন্মদিনের আইটেম বিক্রেতাদের সঙ্গে সম্প্রতি মতবিনিময় সভা করেছে ডিএমপির লালবাগ বিভাগ। সভায় ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে চকবাজারে পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী সব ধরনের পটকা, আতশবাজি এবং ফানুস বিক্রি বন্ধ। অবৈধ বিস্ফোরকদ্রব্য ভারত থেকে বিভিন্ন পথে কুমিল্লা, বগুড়া চুড়িপট্টি হয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে ঢাকায় আসে এবং সেগুলো ঢাকার কেরানীগঞ্জসহ মোহাম্মদপুর, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, ওয়ারী, পল্লবীসহ বিভিন্ন এলাকায় খুচরা বিক্রি হতো। ব্যবসায়ীরা পুলিশকে আরও জানিয়েছেন, কিছু বিক্রেতা অনলাইনের মাধ্যমে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব আতশবাজি বিক্রি বন্ধে লালবাগ বিভাগের কঠোর নজরদারি রয়েছে।

আরও পড়ুন>> বাড়ির ছাদে গান-বাজনা, আতশবাজি ও ডিজে পার্টি নিষিদ্ধ 

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের থানা এলাকায় নিয়মিত অভিযান চলমান। একজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তার কাছে ২০ কেজি ভারতীয় আতশবাজি পাওয়া গেছে।’

jagonews24

লালবাগ বিভাগের চকবাজার জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) শফিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘কমিশনারের নির্দেশনা ও আদেশে থার্টি ফার্স্ট নাইট এবং নির্বাচনী সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ফানুস-আতশবাজি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের কজ চলমান।’

ফানুস ওড়াতে গিয়ে কেউ যদি ধরা পড়ে সেক্ষেত্রে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কমিশনার মহোদয় যেহেতু নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন সেক্ষেত্রে ফানুস ওড়ানো অবস্থায় অথবা আতশবাজি ফোটানো অবস্থায় হাতেনাতে ধরা পড়লে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের নামে কেউ যদি অপ্রীতিকর পরিস্থিতি কিংবা আতশবাজি, পটকা কিংবা ফানুস বিক্রি করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। থার্টি ফার্স্ট নাইটে ফানুস কিংবা আতশবাজি না ফুটিয়ে সামাজিকভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা যেতে পারে। অনলাইন অথবা সরাসরি যারাই আতশবাজি, পটকা কিংবা ফানুস বিক্রি করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চলমান। আগামীতেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। কয়েকজনকে হাতেনাতে গ্রেফতারও করা হয়েছে।’

নগরবাসীকে নিজ উদ্যোগে সচেতন হওয়ার পরামর্শ জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। কারও আনন্দের ফল যেন কারও কান্নার কারণ না হয়। কারণ ফানুস উড়ে গিয়ে কোনো বস্তি অথবা কারও বাসাবাড়িতে পড়লে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। এছাড়া অভিভাকদের উচিত তাদের সন্তানকে এ ব্যাপারে সচেতন করা। ফানুস-আতশবাজির পরিবর্তে ঘরোয়া কোনো অনুষ্ঠান করা যেতে পারে।’

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা যে নির্দেশনা দিয়েছি সেই অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। যারাই আতশবাজি, পটকা অথবা ফানুস ওড়ানো, বিক্রির সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। নগরবাসীকে অনুরোধ করবো- আপনারা থার্টি ফার্স্ট কেন্দ্র করে এসব আতশবাজি, ফানুস ওড়ানো থেকে বিরত থাকবেন।’

টিটি/এএসএ/জিকেএস