শহীদদের শ্রদ্ধা জানালেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী
১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে বিশ্বের বুকে নতুন এক স্বাধীন রাষ্ট্রের মানচিত্র সৃষ্টি হয়েছিল। তাই ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির গৌরবের দিন, বিজয়ের দিন। যাকে আমরা বলে থাকি বিজয় দিবস। ৩০ লাখ শহীদের রক্তে ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে দেশকে মুক্ত করেছিল বাংলার দামাল ছেলেরা। অভ্যুদয় হয়েছিল এক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের।
আজ মঙ্গলবার প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান বিজয় দিবসের সূচনা হয়। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬টা ৩৪ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে মহান বিজয় দিবসের সূচনা করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী সকাল ৬টা ২২ মিনিটে ও রাষ্ট্রপতি ৬টা ৩০ মিনিটে স্মৃতিসৌধে পৌঁছান।
এরপর ক্রমান্বয়ে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, প্রাক্তন মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার দলবদ্ধভাবে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা শহীদদের প্রতি সম্মান জানানো শুরু করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘তিনি ও তার দল যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে। এ দেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধের বিচার তারা চান। জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনের। দেশের জনগণ যদি জামায়াতকে নিষিদ্ধ চায়, আমরাও সেটাটে সমর্থন দেব।’
সকাল থেকেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে ঢল নামে জনতার। দীর্ঘ লাইনে ছোট, বড় ছেলেমেয়ে সব বয়সির মানুষ ফুল হাতে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে হাজির হন। সারা দিনই বিনম্র চিত্তে বীর শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন তারা।
স্বজন হারানোর ব্যথা বুকে ধরেই শিশু, যুব-যুবা, বৃদ্ধ সব বয়সি মানুষ শিশিরভেজা ভোরে চলে আসেন এখানে। মহান ত্যাগের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে শহীদদের স্মরণ করতেই তারা এখানে হাজির হয়েছেন বলে তাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধটি।
স্মৃতিসৌধ এলাকার পুরোটাজুড়ে লাল-সবুজের আলপনা আর পতাকায় ঢাকা। থেকে থেকে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, জাতীয় সংগীত আর দেশাত্মবোধক গানের মূর্ছনায় হৃদয়ের গহিনে জেগে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশের।
সেদিন রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল। আর এই বিজয়ের মহানায়ক হিসেবে যিনি ইতিহাসে চির অম্লান ও ভাস্বর হয়ে আছেন, তিনি হলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আনন্দ অনেকভাবেই আসতে পারে জীবনে। কিন্তু মাতৃভূমির পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির জন্য প্রাণ উৎসর্গ করা যুদ্ধজয়ের আনন্দের কোনো তুলনা হয় না!
৫৫ হাজার বর্গমাইলের এই সবুজ দেশে ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে উদিত হয়েছিল বিজয়ের লাল সূর্য। মুক্তিপাগল বাঙালি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার সূর্য। যে সূর্যকিরণে লেগে ছিল রক্ত দিয়ে অর্জিত বিজয়ের রং। সেই রক্তের রং সবুজ বাংলায় মিশে তৈরি করেছিল লাল-সবুজ পতাকা। সেদিনের সেই সূর্যের আলোয় ছিল নতুন দিনের স্বপ্ন, যে স্বপ্ন অর্জনে অকাতরে প্রাণ দিয়েছিল এ দেশের ৩০ লাখ মানুষ। নয় মাসের জঠর-যন্ত্রণা শেষে এদিন জন্ম নেয় একটি নতুন দেশ, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
এই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে মুক্তিযুদ্ধে চেতনা নিয়ে, শ্রেষ্ঠ জাতি গঠনের শপথ নিয়ে।