ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষতিকর প্রভাব খতিয়ে দেখছে ইউনেস্কো

প্রকাশিত: ১০:২৪ এএম, ০২ এপ্রিল ২০১৬

কিছুদিন আগে ১ হাজার ২শ ৩৫ মেট্রিক টন কয়লা বহনকারী একটি জাহাজ সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে উল্টে যায়। এতে ওই জাহাজে থাকা কয়লা পানিতে মিশে গেছে। এধরনের ঘটনা বার বার ঘটলে তা সুন্দরবনের জন্য একসময় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের জন্য তেল, কয়লা  বোঝাই জাহাজ শ্যালা নদী, মংলা বন্দর, করমজল দিয়ে যাতায়াত করে। অনেক সময় দুর্ঘটনায় মালবাহী এসব জাহাজ উল্টে যায়। এসব কারণে সুন্দরবনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। এই ক্ষতির বিষয়টি খতিয়ে দেখছে ইউনেস্কোর একটি প্রতিনিধি দল।

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। বিশ্বের ঐতিহাসিক এই স্থানটি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিনা সেবিষয়টি নিশ্চিত করতেই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে ইউনেস্কো। যতদূর জানা যায়, পরিবেশবাদীদের সমালোচনা স্বত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার ১ হাজার ৩শ ২০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ চালু রেখেছে।

দ্য বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশীপ পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেডের ( বিআইএফপিসিএল) যৌথ উদ্যোগে ভারতের ন্যাশনাল থেরমাল পাওয়ার কোম্পানী এবং বাংলাদেশের পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড মার্চের ২৯ তারিখে একটি যৌথ বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির বিষয়ে চুক্তিতে সই করেছে।

২০১৭ সালের মধ্যেই ওই প্রজেক্টের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরিবেশবাদীদের চাপের মুখে দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সন্তুষ্ট করতে না পারায় এই প্রজেক্টের কাজ এত দীর্ঘায়িত হয়েছে।

পেনসন ফান্ড নরওয়ে এই প্রজেক্টের জন্য ৪ হাজার ৩শ মিলিয়ন অর্থ বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল। কিন্তু এই প্রজেক্টের কারণে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে পরবর্তীতে নরওয়ে সরকার ওই ফান্ড বাতিল করে। ভারত বাংলাদেশকে এই প্রজেক্টের বিষয়ে সহায়তা দেবে। আর আশা করা যায় ২০১৯ সালের মধ্যেই এই প্রজেক্টের কাজ শেষ হবে। নির্মাণকারি প্রতিষ্ঠান ভেল ইন্ডিয়ার এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে এই প্রজেক্টের কাজে ৭০ ভাগ অর্থ সহায়তা দেবে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিরাট চাপের মুখে আছে। এ দেশে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ নেই। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের মাত্র ৬০ ভাগ লোক পরিমিত বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। বিদ্যুৎ ঘাটতি কমানোর জন্যই রামপালে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। কিন্তু এই প্রজেক্টের কারণে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবিষয়ে সরকারের কোনো মাথা ব্যাথা নেই।

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের ক্ষতির কথা চিন্তা না করেই  সুন্দরবনের ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে- এমন দাবি করে তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ এবং বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন এ প্রকল্প বন্ধের জন্য আন্দোলন চালিয়ে আসছে। ওই কমিটি এ মাসে ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। বিশ্বের অন্যতম সুন্দর এই স্থানটির ক্ষতির বিষয়টি মূল্যায়নের ব্যাপারে অনুরোধ জানানো হয়।

ওই কমিটির আহ্বায়ক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. সুলতানা কামাল  বলেন, সুন্দরবন আমাদের একটি জাতীয় সম্পদ। এটা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মূখীন হয়েছে। এ ধরনের প্রকল্প আমাদের জাতীয় সম্পদকে নষ্ট করে দেবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বিএপিএ) সাধারণ সম্পাদক ড. আব্দুল মতিন বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র যে কোনো স্থানেই তৈরি করা যাবে। কিন্তু আমাদের সুন্দরবনের তো আর কোনো বিকল্প নেই।

তবে রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি করবে না এমন দাবি করে সরকার এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ দ্রুতই এগিয়ে নিচ্ছে।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা- ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যে তালিকাভুক্ত করে। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে ইউনেস্কোর বার্ষিক সাধারণ সভায় সুন্দরবনের পাশে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, বনের ভেতর নৌ-চলাচল, আশপাশে শিল্প কারখানা ও শ্যালা নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে উদ্বেগ জানানো হয়।

টিটিএন/এবিএস