নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসী অধিকারের বিষয় অন্তর্ভুক্তির দাবি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসী অধিকারের ইস্যুগুলো অন্তর্ভুক্তির দাবি জানানো হয়েছে। বৃহত্তর ময়মনসিংহের আদিবাসী সংগঠনসমূহের ঐক্য পরিষদ (ইউসিজিএম) ব্যানারে এই দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিভিন্ন সংগঠন।
শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় ১১টি দাবি উপস্থাপন করা হয়।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক কলামিস্ট ও আদিবাসী নেতা সঞ্জীব দ্রং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, বৃহত্তর ময়মনসিংহের আদিবাসী সংগঠনসমূহের ঐক্য পরিষদের (ইউসিজিএম) সভাপতি অজয় এ. মৃ ও মহাসচিব লেখক ও গবেষক অরণ্য ই. চিরান, টাঙ্গাইল মধুপুরের জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক, বাংলাদেশ আদিবাসী লইয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীনেশ দারু, আচিক মিচিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সুলেখা ম্রং, বাংলাদেশ কোচ জাতীয় সংগঠক সন্যাসী রমেশ কুমার কোচ প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের মহাসচিব লেখক ও গবেষক অরণ্য ই. চিরান বলেন, সারা বিশ্বে ৭০টি দেশে প্রায় ৩০ কোটি আদিবাসী রয়েছেন। বাংলাদেশেও কমপক্ষে ৫০টিরও অধিক সম্প্রদায়ের ৫০ লক্ষাধিক আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করেন। যাদের ৭৫ শতাংশ মানুষ সমতল এলাকার বাসিন্দা এবং বাকি ২৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী তিনটি পার্বত্য জেলার অধিবাসী। সমতল এলাকার আদিবাসীরা দেশের মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের কতিপয় জেলা ছাড়া প্রায় সবকয়টি জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করে আসছেন। তবে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা, উত্তরবঙ্গের বরেন্দ্র অঞ্চল, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার প্রভৃতি জেলায় বেশি সংখ্যক আদিবাসীর বাস দেখা যায়।
তিনি বলেন, এ দেশে আমরা যারা নিজেদের আদিবাসী হিসেবে দাবি করি, আমাদের নিজস্ব ভাষা আছে, পোশাক আছে, সংস্কৃতি আছে, ঐতিহ্য আছে। নিজস্ব বাদ্যযন্ত্র আছে, স্বতন্ত্র কিছু খাবার-দাবার আছে, যার ওপর আমরা নির্ভরশীল। যা অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে থাকলেও আলাদা বৈশিষ্ট্য বহন করে।
অরণ্য ই. চিরান আরও বলেন, বর্তমান সরকার এ দেশের আদিবাসীদের জন্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী আইন ২০১০ প্রণয়ন করে পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সংবিধানের ২৩ (ক) ধারায় সংযোজন করেছে। আদিবাসীদের জন্য এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা ছিল। ওই পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এ দেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, তাতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। যার মাধ্যমে তাদের অধিকার ও অস্তিত্ব অস্বীকার করা হয়েছে। তাই আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার ও অস্তিত্ব রক্ষায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসী অধিকার বিষয়ক ইস্যু অন্তর্ভুক্তির দাবি জানাই।
আরও যেসব দাবি জানানো হয়
১. বাংলাদেশ সংবিধানে আদিবাসীদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া।
২. আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনসহ একজন আদিবাসীকে পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া।
৩. আদিবাসীদের জন্য জাতীয় সংসদে ৫ শতাংশ সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ দেওয়া।
৪. সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করার জন্য একটি পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা।
৫. সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে সমতল আদিবাসী নারীদের মনোনয়ন দেওয়া।
৬. আইএলও কনভেশনের ১০৭ অনুচ্ছেদের আলোকে আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করা।
৭. শিক্ষা ও সরকারি চাকরির সব স্তরে আদিবাসীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা বরাদ্দ বহাল রাখা।
৮. আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে) ও প্রশাসনের বিভিন্ন কমিটিতে আদিবাসী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।
৯. আদিবাসীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বন মামলাসহ ও অন্যান্য হয়রানিমূলক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা।
১০. আদিবাসী এলাকায় সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প তৈরির আগে আদিবাসীদের সঙ্গে সুস্পষ্ট আলোচনা করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা।
১১. আদিবাসীদের নিয়ে পুনরায় পৃথক জনশুমারি পরিচালনা করে প্রকৃত জনসংখ্যা জানানোর দাবি করেন তারা।
আরএএস/কেএসআর/এমএম