ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

অনলাইনে ‘রোমান্স স্ক্যাম’

যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার প্রলোভনে প্রতারিত ৫০ নারী

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:১১ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০২৩

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে প্রায় অর্ধশত নারীর সঙ্গে ‘রোমান্স স্ক্যাম’ ও সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে সিটিটিসি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। গ্রেফতারকৃতের নাম মো. বেনজির হোসেন (৪০)।

সোমবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, প্রতারক বেনজিরের ফেসবুকে ভুয়া জৌলুসপূর্ণ প্রোফাইল তৈরি করে এই প্রতারক নিঃসঙ্গ নারী ভিকটিমদের টার্গেট করে প্রথমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করতেন। পরে বিয়ের প্রলোভন ও সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে বছরের পর বছর ধরে। প্রথমে বিশ্বাস তৈরি করে সেই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে লাখ লাখ টাকা এমনকি কোটি টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটিয়েছেন এই প্রতারক।

বেনজিরের প্রতারণার কৌশল

সিটিটিসি প্রধান বলেন, বেনজির হোসেন শাহিদ হাসান নামে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বাংলাদেশি পাইলটের প্রোফাইল হুবহু কপি করে Shahid Hasan (Pilot Officer) নামে একটি ফেক ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করেন। ফেসবুক প্রোফাইলটিকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য এই প্রোফাইল থেকে বিমান চালানোর ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতেন। প্রতারক বেনজির হোসেন ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজে নিঃসঙ্গ নারী ভিকটিমদের টার্গেট করে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে প্রথমে প্রেমের ফাঁদ ফেলে, পরে বিয়ের প্রলোভন ও সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাতেন। তিনি অডিও কলে ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বললেও নানান অজুহাতে কখনোই ভিডিও কলে কথা বলতেন না। এরপর অনলাইন প্রণয়ের একপর্যায়ে বিভিন্ন সময় বিপদে পড়ার কথা বলে তার দেওয়া বিভিন্ন নগদ নাম্বারে (প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা ১৯টি নগদ নাম্বারের বিষয়ে জানা গেছে) ধাপে ধাপে লাখ লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। প্রতারক বেনজির হোসেনের প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১৩টি নগদ নাম্বারে গত ৪ মাসে ১ কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।

প্রতারক বেনজির হোসেন নড়াইল জেলায় নিজের বাড়িতে থেকে প্রতারণার কাজ করলেও ক্যাশ আউট করতেন তার বাড়ি থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে যশোর ও খুলনা জেলায় বিভিন্ন নগদ ক্যাশ আউট পয়েন্টে। তার প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিম এবং নগদ নাম্বারের রেজিস্ট্রেশনে ব্যবহৃত এনআইডি অন্য ব্যক্তির নামে।

ক্যাশ আউট করার সময় প্রতারক বেনজির হোসেন পরিচয় ও চেহারা গোপন করার জন্য ক্যাপ, সানগ্লাস ও মুখে মাস্ক পড়ে থাকতেন।

তিনি আরও জানান, এমনই একজন ভিকটিম স্বপ্না (ছদ্মনাম), একজন সিঙ্গেল মাদার। প্রতারক বেনজির হোসেনের প্রতারণার শিকার হয়ে গত সাত মাসে বিভিন্ন নগদ নাম্বারে প্রতি মাসে ১৪-১৫ লাখ করে টাকা দিয়ে প্রায় এক কোটি টাকা খুইয়েছেন। একই সময়ে অপর একজন ভিকটিম জান্নাত (ছদ্মনাম) প্রতারক বেনজিরের কাছে খুইয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ টাকা। প্রতারক বেনজির হোসেনের স্মার্ট ফোনে ৫০ জনেরও অধিক ভিকটিমের সন্ধান পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন>> ডিপফেকের শিকার এবার পশ্চিমবঙ্গের তরুণী

স্বপ্না এবং জান্নাত গত এক সপ্তাহের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে অভিযোগ নিয়ে সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে প্রতিকারের জন্য এলে সাইবার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন টিম তাদের মামলা করার পরামর্শ দেয় এবং ছায়া তদন্ত শুরু করে। ভিকটিম স্বপ্না রাজধানীর ওয়ারী থানায় প্রতারণার বিষয়ে ২১ নভেম্বর মামলা দায়ের করেন। পরে ২২ নভেম্বর ছায়া তদন্তে নেমে বিশদ প্রযুক্তিগত অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে বেনজির হোসেনকে শনাক্ত করে খুলনার ফুলতলায় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত নগদ নাম্বার থেকে ক্যাশ আউটের সময় সন্ধ্যায় হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়।

বেনজির হোসেনের সম্পদের পাহাড়

দৃশ্যমান কোনো আয়ের উৎস না থাকা সত্ত্বেও বেনজির হোসেন গত কয়েক বছরে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা অর্থ দিয়ে বিপুল অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।

তিনি গত কয়েক বছরে প্রতারণার অর্থে ৫ বিঘা জমির ওপর বাগান বাড়িতে (দুই তলা ডুপ্লেক্স ভবন), অনুমানিক ৩ বিঘা জমির ওপর সম্প্রতি কেনা বিলাসবহুল ভবন, নড়াইলে বিভিন্ন জায়গায় অনুমানিক ২০ বিঘা মাছের খামার, নড়াইলে বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ভবন, যশোর ও সাভারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবনসহ বিপুল ব্যাংক ব্যালান্স গড়েছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, বেনজির এইচএসসি পাস করে একটা চাকরিতে যোগ দেন। চুরির দায়ে সেই চাকরি চলে যায় তার। তিনি খুবই নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার পিতা সেই অঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারে তালের শাস বিক্রি করতেন। তবে বেনজির খুব মেধাবী ছিলেন। তার বৈধ কোনো পেশা নেই। তার মূল পেশাই প্রতারণা করা। এলাকার সাধারণ মানুষ সন্দেহ করলেও নানা অপরাধের জড়িত থাকায় কেউ কিছু বলতেন না।

তিনি বলেন, একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি। তার প্রতারণার শিকার অসংখ্য নারী। আমরা এরই মধ্যে ৫০ জনকে পেয়েছি যারা বেনজিরের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তার প্রতারণার শিকার হয়ে এক নারী আত্মহত্যাও করেছেন। ভিকটিমদের কাছ থেকে আপত্তিকর ছবিও সংগ্রহ করতেন। অনেক ভিকটিম মানসম্মানের ভয়ে প্রকাশও করতে চান না।

আরএসএম/ইএ/এএসএম