রাজনৈতিক সংকট দারিদ্র্য-বৈষম্য আরও বাড়াবে
মহাখালী টার্মিনালে গত ২৯ অক্টোবর থেকে বাসেই দিনরাত কাটছে পরিবহন শ্রমিক (চালকের সহকারী) জয়নালের। ৩০ তারিখ হরতাল-অবরোধ না থাকলেও ভয়ে ওইদিন বাস নিয়ে ভৈরবে আর যাওয়া হয়নি। এরপর থেকে অবরোধে আটকা। খাওয়া হোটেলে, ঘুমানো বাসে। প্রয়োজনীয় অন্য কাজ সারছেন টার্মিনালেই। দৈনিক ৩০০ টাকা হারে খোরাকি পেলেও বেতন বন্ধ। গাড়ি না চললে বেতন পাবেন না। মূলত বাস পাহারার জন্যই জয়নালকে টার্মিনালে রাখা।
জয়নালের মতো বহু পরিবহন শ্রমিক টার্মিনালে অলস সময় কাটাচ্ছেন। গত দুদিন দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি এখান থেকে। সবার মধ্যেই হতাশা। এক অনিশ্চিত সময়ে প্রহর গুনছেন তারা।
আরও পড়ুন>> মার্কিন দূতাবাস/পুলিশ-রাজনৈতিক কর্মী হত্যা, হাসপাতালে আগুন অগ্রহণযোগ্য
কথা হয় জয়নালের সঙ্গে। মাসহ পরিবারে মোট পাঁচজন সদস্য। গাড়ি চললে দৈনিক ৮০০ টাকা বেতন পান। তাতে কোনোমতে সংসার চলে। বলেন, ‘চোখে সরষে ফুল দেখছি ভাই। আমাদের তো কোনো উপায় নেই। জমি-জায়গাও নেই। দিন আনি দিন খাই। বেতনও বন্ধ। কতদিন এভাবে চলবে জানি না।’
জয়নালের পাশে বসে থাকা আরেক শ্রমিক আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, ‘বাজারে গেলে দিশেহারা হই। মাছ-মাংস কেনার তো আর উপায় নেই। শাক-সবজি কেনারও সামর্থ্য নেই। এক কেজি বেগুন একশ টাকা। শিম দুইশ টাকা কেজি। মানুষ কী খেয়ে বাঁচবে!’
এক দুঃসহ জীবন অতিবাহিত করছে মানুষ। বিশ্বমন্দা, মহামারি, বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতি জনজীবনকে এক অনিশ্চিয়তায় ঠেলে দিয়েছে। এ সংকট গোটা বিশ্বেই।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট অর্থনৈতিক এ সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে। আসন্ন নির্বাচন ঘিরে বিরোধীদের আন্দোলন, বিদেশিদের অব্যাহত চাপ পরিস্থিতি বেসামাল করে তুলছে। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে অস্থিরতা বাড়ছে। পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন>> রাজনৈতিক উত্তাপের আঁচ পেতে চান না পোশাক রপ্তানিকারকরা
এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে দারিদ্র্যের হার এবং বৈষম্য বাড়বে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ।
তিনি বলেন, ‘মহামারি ও যুদ্ধের কারণে মানুষ এমনিতেই বিপদে আছে। বৈষম্য বাড়ছে। দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় খাবার পাচ্ছে না। পুষ্টি পাচ্ছে না। এক অসহায় অবস্থা বিরাজ করছিল আগে থেকেই।’
‘এর মধ্যে রাজনৈতিক সংকট পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে। আসন্ন নির্বাচন ঘিরে কী হতে যাচ্ছে কেউ জানেন না। আমাদের কাছে আগের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। দুই জোট আসলে সত্যিকার কোনো সমাধান চায় না। তারা ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়া নিয়ে কামড়া-কামড়ি করছে। জনগণ কী চায় তারা বুঝতে চাইবে না।’
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘সময় খুব খারাপ পর্যায়ে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে চাপ সৃষ্টি করছে তা একেবারে অবহেলা করলে চলবে না। নিষেধাজ্ঞা ছোট হলেও হেলাফেলা করার জো নেই। আর পশ্চিমারা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই এমন নিষেধাজ্ঞা দেয়। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা সেই সুযোগ করে দিচ্ছি কি না।’
‘আবার ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য উত্তপ্ত করে তুলছে। এই যুদ্ধে ইরান জড়ালে ভয়াবহ রূপ নেবে। যুক্তরাষ্ট্র তাই চাইছে। এতে ফের তেলের দাম বাড়বে। তেলের দাম বাড়লে বাংলাদেশের মতো দেশ আগে বিপদে পড়ে।’
‘সামনে সংকট আরও বাড়বে। কারণ ছাড় দেওয়ার কোনো মানসিকতা নেই আমাদের। খাদের কিনারে গেলেও আমরা জেদ বজায় রাখি। রাজনৈতিক সংকট দারিদ্র্য-বৈষম্য আরও বাড়াবে। দারিদ্র্য বেড়েই চলছে, এটি আরও বেগবান হবে। আমি আপাতত কোনো সমাধানের পথ দেখছি না।’
এএসএস/এএসএ/জিকেএস