দুয়ারে শীত, জমে উঠছে কম্বলের বাজার
ভোরবেলার হালকা কুয়াশা আর হিম বাতাস জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তা। ঠান্ডা বাতাস বইছে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে। রাজধানীতে খানিকটা দেরিতেই শীতের আমেজ টের পাওয়া যায়। কিন্তু পুরো মৌসুমে শীত নিবারণের বাড়তি প্রস্তুতি শুরু হয়েছে দেশজুড়ে।
লেপ-কাঁথা কিংবা সোয়েটার, চাদর জড়িয়ে যে যেভাবে পারে শীত নিবারণ করে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। গ্রামে কাঠ-খড় পুড়িয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা থাকলেও শহুরে জীবনে তা চলে না। বাড়ির বাইরে, ছাদ কিংবা বারান্দায় কিছুটা রোদের দেখা মিললেও ঘরের ভেতরে বেশ ঠান্ডা লাগে। ঘরে আরামদায়ক উষ্ণতা পেতে অনেকে কম্বল আর কমফোর্টারই বেছে নেন শীত নিবারণের জন্য।
আরও পড়ুন> হেমন্তের প্রকৃতিতে অন্যরকম শীতলতা
এবার আগেভাগেই গরম কাপড় ব্যবসায়ীরা অর্থ লগ্নি করেছেন এই মৌসুমি ব্যবসায়। এরই মধ্যে কম্বলের বাজারে জমে উঠতে শুরু করেছে বেচাকেনা। শুধু তাই নয়, শীত নিবারণের জন্য ব্লেজার, গরম টি-শার্ট, হুডি, টুপিসহ নানান ধরনের পোশাক আসতে শুরু করেছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে।
রাজধানীর গুলিস্তান-বায়তুল মোকাররম এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা থরে থরে সাজিয়ে রেখেছেন কম্বল, কটি ও ব্লেজার। রয়েছে দেশি-বিদেশি নানান রঙের বিভিন্ন দামের শীত পোশাক। খুচরা ও পাইকারি দরে চলছে বেচাবিক্রি। তবে ক্রেতাদের বড় অংশই এখন ঢাকার বাইরে থেকে আসা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীত মৌসুমে কম্বলের বেচাবিক্রি বেশ ভালোই হয়। কম্বলের মধ্যে রয়েছে হেমার, ক্যাঙ্গারু, ডায়মন্ড কিং, চায়না, কোরিয়ান ও দেশি ডাবল এবং সিঙ্গেল কম্বল। মার্কেটে ডাবল হেমার কম্বল বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকায়। ক্যাঙ্গারু ডাবল পার্ট কম্বলের দাম চাওয়া হচ্ছে সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার, এক পার্টের কম্বল সাড়ে ৪ হাজার টাকা। কোরিয়ান ডাবল ভালো মানের কম্বলের দাম চাওয়া হচ্ছে ১০ হাজার টাকা।
তবে কম দামের কম্বলও এসেছে বাজারে। চায়না ও দেশি সিঙ্গেল কম্বল ৭০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের ক্রেতার সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে বলছেন বিক্রেতারা। মূলত কোয়ালিটি ও ওজনের ওপরে নির্ভর করছে দাম।
এছাড়া রয়েছে কমফোর্টার। সাধারণ কমফোর্টার কিনতে ক্রেতার কাছে চাওয়া হচ্ছে এক হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। যদিও ব্র্যান্ডের কমফোর্টারের দাম ভিন্ন।
বিক্রেতারা বলছেন, আগের দামের চেয়ে এবার শীত পোশাকের দাম অনেক কম। কম দামেই ক্রেতা পাচ্ছেন কম্বল-কমফোর্টার।তবে ক্রেতারা বলছেন, দাম কম নয়। গতবারের চেয়ে কিছুটা কম হলেও একেবারেই কম নয়।
কম্বল কিনতে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন চান মিয়া। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এলাকায় শীতের উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে। যদিও খুব বেশি শীত এখনও আসেনি। ঢাকায় কাজে এসেছিলাম তাই কম্বল কিনে নিলাম।
আরেক ক্রেতা শফিকুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে আগের মতোই দাম রয়েছে কম্বলের। তবে নতুন কিছু কালেকশন নেই।
আরও পড়ুন> লালমনিরহাট/ভোরের শিশির ছড়িয়ে দিচ্ছে মৃদু শীতলতা
কম্বল বিক্রেতা রাকিবুল জাগো নিউজকে বলেন, এখন কম্বলের দাম কম। এরই মধ্যে বিক্রিও শুরু হয়েছে। ঢাকার বাইরের লোকরাই বেশি কিনছেন। ঢাকার মানুষ হয়তো আরও ২০ থেকে ২৫ দিন পর কিনবেন। কারণ ঢাকায় দেরিতে শীত শুরু হয়।
অন্যদিকে, বাজারে এসেছে ব্লেজার ও কটি। কম্বলের মতো ব্লেজারের বিক্রি জমে না উঠলেও বাজারে উঠেছে পুরোদমে। দেশি ও কাশমিরি ব্লেজার বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। কটি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে। বাচ্চাদের ব্লেজার এক থেকে দেড় হাজার টাকা, বাচ্চাদের কটি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে হাজার টাকার মধ্যে।
আরটি ফ্যাশনের সেলস এক্সিকিউটিভ হৃদয় জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের সব ধরনের পণ্যই এসেছে। তবে বিক্রি এখনও জমে ওঠেনি। অন্যবার এ সময় দিনে ৫০ থেকে ৬০ পিস বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে চার পিস। আশা করছি, ১৫ থেকে ২০ দিন পর বিক্রি জমে উঠবে।
আরেক ব্যবসায়ী মো. শাহীন জাগো নিউজকে বলেন, এখন মানুষের হাতে তেমন টাকা নেই। অন্য বছর আগেই ব্লেজার-কটি কিনে রাখতো এবার সব কিছুর দাম বাড়ায় বিক্রি বোঝা যাচ্ছে না কেমন হবে। তবে দাম যেহেতু কম আশা করছি, এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে বিক্রি জমে উঠবে।
ইএআর/এসএনআর/জিকেএস