দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন
পরিমিত রাজনৈতিক বক্তৃতা-সংলাপসহ ৫ সুপারিশ মার্কিন প্রতিনিধিদলের
রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িতদের জবাবদিহির মধ্যে নিয়ে আসাসহ পাঁচ দফা সুপারিশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। একই সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে পরিমিত রাজনৈতিক বক্তৃতা, সংলাপ আয়োজনের সুপারিশ করেছেন তারা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব পরিস্থিতি যাচাই করতে ঢাকায় আসা যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল রোববার (১৫ অক্টোবর) এ সুপারিশ করেছে। ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) যৌথ বিবৃতিতে এ সুপারিশ তুলে ধরে।
আরও পড়ুন: সমঝোতার সুযোগ আছে কি না, জানতে চায় মার্কিন প্রতিনিধিদল
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৮ থেকে থেকে ১১ অক্টোবর ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগাম নির্বাচনী প্রস্তুতি বিষয়ে জানতে ঢাকায় অবস্থান করে। প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষকদল বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে কিছু সুপারিশ করেছে, যা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য সাহায্য করতে পারে।
এতে বলা হয়, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের জন্য বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যার মধ্যে আপসহীন রাজনীতি, একপেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কঠোর রাজনৈতিক বক্তব্য, রাজনৈতিক সহিংসতা, অনিশ্চয়তা ও ভয়ের ব্যাপক পরিবেশ, নাগরিকদের অবস্থান, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং নাগরিকদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি রয়েছে। রাজনৈতিক নেতা এবং অন্য অংশীজন, নারী, তরুণ এবং প্রান্তিক গোষ্ঠীর মধ্যেও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। বাংলাদেশ একটি নির্বাচনের সন্ধিক্ষণে রয়েছে এবং আসন্ন নির্বাচন গণতান্ত্রিক, অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিযোগিতামূলক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি দেশের অঙ্গীকারের একটি পরীক্ষা।
প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে পারে এমন বিশ্বাসযোগ্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক এবং অহিংস নির্বাচনের জন্য পাঁচ দফা সুপারিশ করেছে।
আরও পড়ুন: ‘ভারত-চীনের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন জানতে চেয়েছে মার্কিন প্রতিনিধিদল’
সুপারিশগুলো হলো- পরিমিত রাজনৈতিক বক্তৃতা এবং নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে প্রকাশ্য সংলাপে বসা। বাকস্বাধীনতার সুরক্ষা এবং নাগরিকদের জন্য এমন একটি জায়গা তৈরি করা, যেখানে ভিন্নমতকে সম্মান করা হয়। সহিংসতামুক্ত নির্বাচনের অঙ্গীকার, যারা রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িত তাদের জবাবদিহির মধ্যে নিয়ে আসা। স্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থাপনাসহ সব দলের অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার পরিস্থিতি তৈরি করা। নাগরিকদের মধ্যে সক্রিয় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনে অংশগ্রহণের সংস্কৃতি তৈরি করা ও তা এগিয়ে নেওয়া।
বিবৃতিতে বলা হয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, দরিদ্র হ্রাস ও পরিবেশগত অগ্রগতি সত্ত্বেও রাজনৈতিক অচলাবস্থা, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা কমে গেছে। যা এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর কালো ছায়া ফেলছে এবং অর্থনৈতিক ও উন্নয়নের ধারাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
আরও পড়ুন: পরিবর্তিত আইনের পার্থক্য জানতে চাইলো মার্কিন পর্যবেক্ষক দল
এতে আরও বলা হয়, যদি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ না করেন এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা না হয়, তবে দেশের প্রধান বিরোধীদল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কটের পরিকল্পনা করছে। যদিও এসব দাবি মেনে নিতে অস্বীকার করেছে সরকার। ফলে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের নাগরিকরা তাদের রাজনৈতিক পছন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ওপর থেকেও তাদের আস্থা উঠে যাচ্ছে। ব্যাপক অনাস্থা, রাজনৈতিক সংলাপের অভাবের কারণে উত্তেজনা ও সহিংসতা বাড়ছে।
আইএইচআর/কেএসআর/এএসএম