ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ইসরায়েলের অহমিকা মাটিতে মিশে গেছে

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০৯:৪৩ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২৩

অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডার কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয় ও অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জাপানের ইয়োকোহামা সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন অধ্যাপনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন পরিস্থিতি নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে শেষটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

জাগো নিউজ: যুক্তরাষ্ট্র ফের সরাসরি ইসরায়েলের পক্ষ নিলো। রণতরী পাঠালো। বলা হচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুদ্ধ গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে, অন্তত ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান প্রশ্নে। এবারে কী ঘটাতে পারে?

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও অর্থনীতি ওতপ্রোতভাবে যুক্ত এই যুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে। অপরদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা এখন ব্যাপক। এটিকে থামাতে চাইছেন বাইডেন। ইউক্রেনে ব্যর্থ হয়েছে অনেকটা যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণে তাকে আরেকটি যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন>> আজ না হয় কাল ইসরায়েলকে পিছু হটতেই হবে

তবে এটিও মনে রাখতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক দলের মধ্যেই প্রো-প্যালেস্টাইনের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে তরুণরা প্যালেস্টাইনদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে। ডেমোক্রেটিক দলের অনেকেই নির্বাচিত হয়েছেন যারা মুসলিম, অ্যারাবিক। তারা অনেকেই সরাসরি ইসরায়েল বিরোধী। এ কারণে বাইডেন সরকারকে আবারও চেষ্টা করতে হচ্ছে একটি যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করে নিজের অবস্থান শক্ত করতে।

জাগো নিউজ: এই চেষ্টা বুমেরাং হতে পারে কি না, যেমনটি ইরাকে হলো?

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: হতেই পারে। আমেরিকাকে মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রি কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। এই কমপ্লেক্সে থাকলে তাকে হয় যুদ্ধের মধ্যে থাকতে হবে, না হয় যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। কারণ তাকে তো অস্ত্র বিক্রি করতে হবে। ইসরায়েল তো বড় ধরনের সাপোর্ট পায় ইসরায়েল থেকে। সম্ভবত, প্রতি বছর চারশ মিলিয়ন ডলার পায় ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য। এর মধ্যে বড় অংশ থাকে অস্ত্র বিক্রি।

জাগো নিউজ: শুধু ইসরায়েলকেন্দ্রিক এই ব্যবসা…

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: ঠিক তা নয়। টেনশনে রাখতে পারলে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকেই অস্ত্র কিনবে। ইউক্রেনে তো খুব সুবিধা করে উঠতে পারেনি। আমেরিকার মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। অনেকেই মনে করেন ইউরোপের প্রচুর অর্থ আছে। তাহলে আমেরিকা ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য অর্থ ব্যয় করবে কেন? তবে ইসরায়েলের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র একপক্ষ অবস্থান নিচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই সুযোগ নিতে চায়।

জাগো নিউজ: হামাস এবারও সে সুযোগ করে দিলো কি না?

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: হতে পারে। তবে হামাসও সুযোগ নিতে পারে। কারণ তাকে তো দেখাতে হবে যে একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। হামাস এই হামলা করার মধ্য দিয়ে জেগে উঠেছে এবং নতুন করে শক্তি জানান দিতে পেরেছে বলে মনে করি। ফিলিস্তিনিদের প্রতি বিশ্বব্যাপী জনমত বাড়ছে। এটি হামাসের বদৌলতে বলে প্রমাণ হচ্ছে। হামাসের জনপ্রিয়তা, শক্তি আরও বাড়বে। হামাসকে অনেকেই সমর্থন করবে এবং সেখান থেকে তারা অস্ত্র পাবেই।

আরও পড়ুন>> ইসরায়েলে কী কী অস্ত্র পাঠালো যুক্তরাষ্ট্র?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির নাৎসিরা লন্ডনে ব্যাপক বোম্বিং শুরু করলো। যত বেশি বোম্বিং করলো তত বেশি জেগে উঠলো ব্রিটিশরা। এর আগে অনেকটাই চুপচাপ ছিল তারা। জুলুম করলে মজলুমরা শক্তিশালী হয়।

হামাস ইসরায়েলের মধ্যে যেভাবে প্রবেশ করে যুদ্ধ করছে তাতে ইসরায়েলের জনগণও যে পরোক্ষভাবে যুক্ত না তা বলা মুশকিল। এভাবে ঢুকে পড়া ছোট কোনো বিষয় নয়। স্থানীয়দের একেবারে সমর্থন ছাড়া এভাবে সাধারণত সম্ভব হয় না। ফিলিস্তিনকে টুকরো টুকরো করার ইসরায়েলের যে অহমিকা তা মাটিতে মিশে গেছে।

জাগো নিউজ: ইরানের ভূমিকা এখন কী হতে পারে? বলা হচ্ছে ইরানের অস্ত্র হামাসের হাতে। রাশিয়া-চীনও এখন মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। কী ঘটতে যাচ্ছে আসলে?

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: চীনের মধ্যস্থতায় ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। এটি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির বিশাল পরিবর্তন। এটি আমেরিকা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার কথা নয়। ইরান-সৌদির সম্পর্কে তারা বাধা দেবেই। ইসরায়েল নিজেও ভাবতে পারেনি ইরান-সৌদির মধ্যে এমন সম্পর্ক তৈরি হবে।

আমাদের বুঝতে হবে আজ থেকে ২০ বছর আগের যে মধ্যপ্রাচ্য, এখন তা নেই। চীন হামাস ও ইসরায়েল উভয়কেই শান্ত থাকতে বলেছে। রাশিয়াও পরোক্ষভাবে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে থাকবে। মধ্যপ্রাচ্যে আরও শক্তিধর দেশ তৈরি হয়েছে। তুরস্ক আগের অবস্থানে নেই। সৌদি নীতির পরিবর্তন আনছে। ইরান বড় একটি শক্তি। সুতরাং, ইউরোপ-আমেরিকা আগের মতো ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে ভূমিকা রাখা মুশকিল হবে। তবে ইউরোপ-আমেরিকার জনগণের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।

আরও পড়ুন>> ইসরায়েল-হামাস সংঘাতে রাশিয়ার লাভ, দুশ্চিন্তায় ইউক্রেন

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের সমাধান করতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। হামাসের এ হামলা সমাধানের পথ প্রশস্তও করতে পারে।

জাগো নিউজ: সমাধানের জন্য অসলো চুক্তি হয়েছিল। শান্তি ফেরেনি…

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: সমাধানের পথ নিয়ে রীতিমতো হোমওয়ার্ক করা আছে। ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তো অসলো চুক্তি মেনেই নিয়েছিল। যদিও তাকে হত্যা করা হয়। ইসরায়েলের জনগণ না জাগলে সমাধান হবে না। তারা যদি মনে করে তাদের বেঁচে থাকার জন্য অন্য এক পক্ষকে শেষ করে দিতে হবে তাহলে তো নাৎসিদের কাঠামোই পক্ষান্তরে টিকে থাকলো। যেভাবে নাৎসিরা ইহুদিদের শেষ করে দিতে চাইছিল। জার্মানরাও এক সময় মনে করেছিল ইহুদিদের একেবারে শেষ করতে না পারলে আমরা টিকে থাকতে পারবো না। ইসরায়েলও ঠিক তাই করছে। তবে আমি এখনো বিশ্বাস করি ইসরায়েলের জনগণই শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধ থামানোর জন্য রাস্তায় নামবে।

মনে রাখা দরকার আমার বন্ধুর বন্ধু যেন কোনো প্রভাব ফেলতে না পারে। ঠিক শত্রুর বেলায়ও। আমার বন্ধু আমার হয়ে থাকুক। তার বন্ধু বা শত্রু আমার কাছে মুখ্য নয়। বাংলাদেশ শান্তি চায়। আর শান্তি চায় বলেই ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষের পক্ষে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ।

জাগো নিউজ: হামাস আর কী করার ক্ষমতা রাখে?

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: আপাতত বলা মুশকিল। যদিও হামাস ক্রেডিট নিচ্ছে। হামাসের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। তবে এটিও মনে রাখার দরকার, হামাস ইসরায়েলের মধ্যে যেভাবে প্রবেশ করে যুদ্ধ করছে তাতে ইসরায়েলের জনগণও যে পরোক্ষভাবে যুক্ত না তা বলা মুশকিল। এভাবে ঢুকে পড়া ছোট কোনো বিষয় নয়। স্থানীয়দের একেবারে সমর্থন ছাড়া এভাবে সাধারণত সম্ভব হয় না। ফিলিস্তিনকে টুকরো টুকরো করার ইসরায়েলের যে অহমিকা তা মাটিতে মিশে গেছে।

জাগো নিউজ: ভারত সরাসরি ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান কী হতে পারে?

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: আমরা ঐতিহাসিকভাবে স্বাধীন ছিলাম। পৃথিবী যখন স্নায়ুযুদ্ধের মধ্যে ছিল তখনও বঙ্গবন্ধু ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখেছেন এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন। বাংলাদেশের সংবিধানে আছে আমরা নিপীড়িত জনগণের সঙ্গে আছি।

তবে মনে রাখা দরকার আমার বন্ধুর বন্ধু যেন কোনো প্রভাব ফেলতে না পারে। ঠিক শত্রুর বেলায়ও। আমার বন্ধু আমার হয়ে থাকুক। তার বন্ধু বা শত্রু আমার কাছে মুখ্য নয়। বাংলাদেশ শান্তি চায়। আর শান্তি চায় বলেই ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষের পক্ষে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ।

এএসএস/এএসএ/জেআইএম