তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করতে বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী
রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করতে উদ্বোধনস্থলে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (৭ অক্টোবর) সকাল ১০টা ১০ মিনিটে উদ্বোধনস্থলে আসেন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই এই প্রকল্পের আংশিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধনস্থলে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী শিশুদের সঙ্গে ছবি তোলেন এবং কথা বলেন। পরে টার্মিনালের করিডোর ঘুরে দেখেন। বিমানন্দরের প্রক্রিয়া অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী লাগেজ চেকিং করান, বোর্ডিং পাস নেন এবং যথারীতি বিমান্দরের ইমিগ্রেশনের কাজ শেষে কাউন্টার পার হন। পরে তিনি প্রি বোর্ডিং সিকিউরিটি স্ক্যান করান এবং বোর্ডিং ব্রিজে যান।
এই প্রক্রিয়ার পর তিনি নামফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিমান প্রতিমন্ত্রী, বেবিচক চেয়ারম্যান ও সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত আছেন।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র জানায়, এরই মধ্যে প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ (যন্ত্রপাতি স্থাপন, জনবল নিয়োগ, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং) করা হবে উদ্বোধনের পর। পরে আগামী বছরের ডিসেম্বরের দিকে টার্মিনাল ব্যবহারের সুযোগ পাবেন যাত্রীরা।
আরও পড়ুন: যোগাযোগের সব মাধ্যমে যুক্ত থাকবে শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল
২০১৭ সালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। তবে নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। টার্মিনালটির নির্মাণকাজ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং।
বেবিচক সূত্র জানান, এখন শাহজালাল বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ ও টার্মিনাল-২ এর অ্যাপ্রোনে ২৯টি বিমান রাখা যায়। ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার আয়তনের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে অ্যাপ্রোনে আরও ৮ থেকে ১০টি উড়োজাহাজ রাখা যাবে। ফলে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে। নতুন টার্মিনালে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজের ব্যবস্থা থাকবে। এর মধ্যে আগামী অক্টোবরে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ চালু হবে। বহির্গমনের জন্য মোট চেক-ইন কাউন্টার থাকবে (১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টারসহ) ১১৫টি।
এছাড়া ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ কাউন্টারসহ বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে ৬৬টি। আগমনীর ক্ষেত্রে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি কাউন্টার থাকবে। তৃতীয় টার্মিনালে আগমনী যাত্রীদের জন্য ১৬টি লাগেজ বেল্ট থাকবে। অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য থাকবে চারটি আলাদা বেল্ট।
আরও পড়ুন: তৃতীয় টার্মিনালে পরীক্ষামূলক ফ্লাইট উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
বেবিচক জানায়, থার্ড টার্মিনালের নিচতলায় থাকবে ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম। দ্বিতীয় তলায় থাকবে বহির্গমন লাউঞ্জ, ক্যানটিন ও বোর্ডিং ব্রিজ। থাকবে সুপরিসর ডিউটিফ্রি শপ এবং বহির্গমন লাউঞ্জ। দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের তৃতীয় টার্মিনাল ভবনে বছরে যাত্রী ধারণক্ষমতা প্রায় এক কোটি ২০ লাখ।
শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, এখন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালে দিনে ৩০টির বেশি উড়োজাহাজ সংস্থার ১২০-১৩০টি প্লেন উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। প্রতিদিন এসব উড়োজাহাজের প্রায় ২০ হাজার যাত্রী বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল ব্যবহার করেন। এ হিসাবে বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীর সেবা দেওয়ার সুযোগ আছে। আর তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে আরও এক কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প সূত্র জানায়, নতুন টার্মিনাল ভবনের বহির্গমন পথে ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল বা ই-গেইট থাকবে। যেখানে যাত্রীরা নিজেরাই ইমিগ্রেশন করাতে পারবেন। তাদের আর ইমিগ্রেশন পুলিশের মুখোমুখি হতে হবে না। তবে নিজেরা করতে না চাইলে তাকে সহযোগিতা করতে ৫৬টি বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টারও প্রস্তুত থাকবে। সেখানে ইমিগ্রেশন করবে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এ ছাড়া যেসব যাত্রী অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশে ঢুকবেন তাদের জন্য ৫টি ই-গেট থাকবে। পাশাপাশি থাকবে ৫৪টি অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন কাউন্টার।
এসইউজে/আরএসএম/কেএসআর/এমএস