ফুরালো ৬২ বছরের অপেক্ষা
ইউরেনিয়াম জ্বালানির যুগে প্রবেশের পথে বাংলাদেশ
বাংলাদেশে পারমাণবিক মর্যাদার শুরুটা ১৯৬১ সালে। সেসময় পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে পদ্মা নদী তীরবর্তী পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। পরে নানা সীমাবদ্ধতায় সেটি বন্ধ হয়ে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। ধীরে ধীরে প্রকল্পের কাজ এগোতে শুরু করলেও পঁচাত্তর-পরবর্তীকালে তা আবারও স্থবির হয়ে পড়ে। এভাবেই নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে ছয় দশকের অপেক্ষার অবসান হচ্ছে। রাশিয়ার ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে ইউরেনিয়াম জ্বালানির যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প দেশের রাজনৈতিক বিভিন্ন কালপর্বে বারবার বাধার মুখে পড়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার দুই দশক পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে আবারও প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নিউক্লিয়ার অ্যাকশন প্ল্যান নেয়। এর এক যুগ পর ২০০৮ সালে নতুন করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ শুরু হয়। এরপর বর্তমান সরকারের টানা তিন মেয়াদে প্রায় ১৫ বছরে প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পারমাণবিক শক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আরও পড়ুন: রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প জিডিপিতে দুই শতাংশ অবদান রাখবে
জানা গেছে, পাকিস্তান আমলে ১৯৬১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরের বছর ১৯৬২ সালে বর্তমান বাংলাদেশের পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানার রূপপুরে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের স্থান নির্ধারিত হয়। এরপর নানা সমীক্ষার মাধ্যমে সম্ভাব্যতা যাচাই করে ২৯২ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। এরমধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের জন্য ২৬০ একর এবং আবাসিক এলাকার জন্য বরাদ্দ ছিল ৩২ একর জমি। সাত বছরে ভূমি উন্নয়ন, অফিস, রেস্ট হাউজ, বৈদ্যুতিক উপ-কেন্দ্র ও কিছু আবাসিক ইউনিটের নির্মাণকাজ আংশিক সম্পন্ন হলেও ১৯৬৯ সালে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত বাতিল করে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার।
স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালে পুনরায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে বঙ্গবন্ধুর সরকার। তবে ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তা আবারও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯৭৭-১৯৮৬ সালে ‘মেসার্স সোফরাটম’ কর্তৃক সম্ভাব্যতা যাচাই করে রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে ১২৫ মেগাওয়াটের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদিত হয়। তবে সেবারও প্রকল্প বাস্তবায়ন মুখ থুবড়ে পড়ে।
১৯৮৭-৮৮ সালে জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডের দুটি কোম্পানি দ্বিতীয়বার সম্ভাব্যতা যাচাই করে। ওই স্টাডির মাধ্যমে প্রকল্পের আর্থিক ও কারিগরি যৌক্তিকতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। এ স্টাডিতে ৩০০-৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সুপারিশ করা হয়। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রথমবার ক্ষমতায় এলে গতি পায় প্রকল্পের কাজ। ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগ সরকার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। সেসময় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া মানবসম্পদ উন্নয়নসহ কিছু প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার পাওয়ার অ্যাকশন প্ল্যান-২০০০ অনুমোদিত হয়।
আরও পড়ুন: রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান দেশে পৌঁছেছে
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ও প্রকল্পের বাস্তবায়ন
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ছিল। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এসে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে অপরিহার্য কার্যাবলি সম্পাদন’ শীর্ষক উদ্যোগ নেয়। উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রাথমিক কার্যাবলি ও পারমাণবিক অবকাঠামো উন্নয়নের কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৯ সালের ১৩ মে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এবং রাশান ফেডারেশনের স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি করপোরেশনের (রোসাটোম) মধ্যে ‘পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার’ বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এর এক বছর পর তারা একটি ‘ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি’ সই করেন।
ওই বছরই প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সভাপতিত্বে কারিগরি কমিটি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং আটটি সাব-গ্রুপ গঠন করে সরকার। একই বছরের ১০ নভেম্বর জাতীয় সংসদে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক মি. ইউকিআ আমানো বাংলাদেশ সফর করেন এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নে আইএইএ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন। ২০১১ সালের ২ নভেম্বর বাংলাদেশ সরকার এবং রাশান ফেডারেশন সরকারের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহযোগিতা চুক্তি সই হয়। বাংলাদেশের পারমাণবিক অবকাঠামোর সার্বিক অবস্থা মূল্যায়নের জন্য ২০১১ সালের ৯ থেকে ১৫ নভেম্বর সময়ে আইএইএ ইন্টেগ্রেটেড নিউক্লিয়ার ইনফ্রাস্ট্রাকচার রিভিউ (আইএনআইআর) মিশন পরিচালিত হয়।
আরও পড়ুন: রাশিয়া থেকে মোংলায় এলো রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল
২০১২ সালের ১৯ জুন জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২ পাস হয়। ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরকালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পাদনের জন্য স্টেট এক্সপোর্ট ক্রেডিট চুক্তি সই হয়। স্বাক্ষরিত আন্তরাষ্ট্রীয় চুক্তি (আইজিএ) এবং স্টেট এক্সপোর্ট ক্রেডিট এগ্রিমেন্টের ভিত্তিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
২০১৩ সালের ২ অক্টোবর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে প্রথম পর্যায়ের কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অপারেটিং অর্গানাইজেশন প্রতিষ্ঠা ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির বিধান সম্বলিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আইন, ২০১৫ জারি করা হয়। ওই বছরের ১৮ আগস্ট রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অন্যান্য পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনার জন্য নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (এনপিসিবিএল) গঠন করা হয়। এর চার মাস পর ২৫ ডিসেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মূল পর্যায়ের কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য জেনারেল কন্ট্রাক্ট ফর রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কনস্ট্রাকশন নামে আরেকটি চুক্তি সই হয়।
২০১৬ সালের ১০-১৪ মে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পারমাণবিক অবকাঠামো প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আইএইএ’র সুপারিশ বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য আইএনআইআর ফলো-আপ মিশন পরিচালনা করে।
আরও পড়ুন: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি হস্তান্তর ৫ অক্টোবর
২০১৬ সালের ২১ জুন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাইট লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন বিষয়ে রাশান ফেডারেশন ও বাংলাদেশ পক্ষের সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট কোঅর্ডিনেটিং কমিটির (জেসিসি) একটি সভা ওই বছরের ২২ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট জ্বালানি সরবরাহ, জ্বালানির ব্যবস্থাপনা, অপারেশন ও মেনটেইন্যান্স সংক্রান্ত চুক্তির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নানা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরের মাসের ২৬ জুলাই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মূল পর্যায়ের কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং রাশান ফেডারেশন সরকারের মধ্যে স্টেট ক্রেডিট চুক্তি সই হয়।
২০১৭ সালের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্পেন্ট ফুয়েল রাশিয়ায় ফিরিয়ে নিতে পারস্পরিক সহায়তা’ সংক্রান্ত একটি সহযোগিতা চুক্তি সই হয়। ওই বছরের এপ্রিল মাসে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার এবং গ্লোবাল সেন্টার ফর নিউক্লিয়ার এনার্জি পার্টনারশিপ (জিসিএনইপি), ভারতের পরমাণু শক্তি সংস্থা, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সহযোগিতা চুক্তি সই করে।
২০১৭ সালের ৩ জুলাই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক ইউকিয়া আমানো। তিনি এ কেন্দ্র স্থাপনে সব আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। ওই বছরের ৪ নভেম্বর একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের অনুকূলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডিজাইন ও কন্সট্রাকশন লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। ৩০ নভেম্বর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ১ নম্বর ইউনিটের প্রথম কংক্রিট ঢালাইয়ের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হতে থাকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের নির্মাণকাজ।
২০২১ সালের ১০ অক্টোবর এবং ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লিপাত্র বা রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উভয় অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঈশ্বরদীতে যুক্ত হন তিনি। রূপপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রুশ আণবিক শক্তি সংস্থা-রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সিই লিখাচেভ।
আরও পড়ুন: ২০২৫ সালের মধ্যে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু: প্রধানমন্ত্রী
চলতি বছরের গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাশিয়া থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জন্য ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান বাংলাদেশে আসে। পরদিন ২৯ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ে সড়কপথে এ চালান ঢাকা থেকে রূপপুরে নেওয়া হয়। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। ওইদিন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানে কাছে এ ইউরেনিয়ামের চালান আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করবেন রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সিই লিখাচেভ। এর মধ্য দিয়ে ইউরেনিয়াম জ্বালানির যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ।
ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠান উপলক্ষে মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্রিনসিটি আবাসন প্রকল্প পরিদর্শন করেন ইয়াফেস ওসমান। এসময় তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের জন্য এটিই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৩৩তম পারমাণবিক দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। একই সঙ্গে এ ধরনের টেকনোলজি নিয়ে কাজের সক্ষমতা অর্জন করেছি আমরা।
পাকিস্তান আমলে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরবর্তীকালে নানা কারণে বারবার তা হোঁচট খেয়েছে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করে। বর্তমান সরকারের টানা তিন মেয়াদে আলোর মুখ দেখে প্রকল্পটি। আর তাতে দীর্ঘ ৬২ বছরের অপেক্ষার অবসান হচ্ছে এবার।
১ হাজার ৬২ একর জমির ওপর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ২০২৪ সালের মার্চে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিটেও ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সমপরিমাণ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। এ প্রকল্পের উৎপাদিত বিদ্যুৎ যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে। তাতে দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতিও পূরণ হবে অনেকাংশে।
আরএসএম/এমকেআর/জিকেএস