স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
নির্বাচন ঘিরে বিদেশিদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আশঙ্কা নেই
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং সংস্থার বিদেশিদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ কখনো বিদেশিদের ওপর কোনো ধরনের হামলা, অত্যাচার বা আক্রমণ করে না। নিরাপত্তা বাহিনীসহ প্রয়োজনে দেশের জনগণ বিদেশিদের নিরাপত্তা দেবে।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব উনাইসি লুতু ভুনিওয়াকার সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ তথ্য জনান।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কোনো দিন কোনো বিদেশির ওপর অত্যাচার বা আক্রমণ করে না। জাতিসংঘ ও অন্য বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর বহু লোক বাংলাদেশে কাজ করছেন। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পেও বহু বিদেশি আছেন। নির্বাচনকালীনও তারা নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারবেন। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী অবশ্যই তাদের নিরাপত্তা দেবে।
বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, এখানে জাতিসংঘসহ বিদেশি বিভিন্ন রাষ্ট্রের যারা থাকবেন তাদের যেন কোনো ধরনের নিরাপত্তায় সমস্যা না হয়, আমরা সেটি নিশ্চিত করবো। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী অবশ্যই তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। পাশাপাশি আমরা এটিও বলেছি, আমাদের বাঙালি সমাজে পরস্পরের মধ্যে ভাতৃপ্রতীম সম্পর্ক রয়েছে। আমরা কারও সঙ্গে কখনো ঝগড়া করি না। একে অপরের পাশে দাঁড়াই। আমাদের সেই সামাজিক অবস্থাটা রয়েছে।
বাংলাদেশের বিদেশিদের ওপর হামলা বা আক্রমণের আশঙ্কা বিষয়ে বৈঠকের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশ কোনো বিদেশির ওপর কখনো অত্যাচার করে না, কোনো বিদেশিকে আক্রমণ করে না। আমরা সেটা মনে করিয়ে দিয়েছি। কাজেই এ ধরনের আশঙ্কা করা উচিৎ হবে না। নিরাপত্তা বাহিনীসহ প্রয়োজনে দেশের জনগণ বিদেশিদের সুরক্ষা দেবে, এটি আমি স্পষ্ট বলেছি। আমাদের দেশে এমন কিছু ঘটবে না যার জন্য তাদের আতঙ্কিত হতে হয় বা অসুবিধায় পড়তে হয়।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সময় সবাই নির্বাচনে অংশ নেবে। সেখানে একটা আনন্দঘন আমেজ আসবে। একটা উৎসবের আমেজ আসবে। নির্বাচনে দু-এক জায়গায় সহিংসতা হয় না সেটি নয়। তবে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী অত্যন্ত দক্ষ, তারা যে কোনো সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের সময় আমাদের নির্বাচন কমিশনের আওতায় থাকবে নিরাপত্তা বাহিনী। এ বাহিনী এখন পর্যন্ত অনেকগুলো জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন করেছে। তাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কাজেই আমি মনে করি, নির্বাচন ঘিরে কোনো রকমের অসুবিধা বা অনিরাপত্তায় কেউ পড়বে না। আমরা সেটিই জানিয়ে দিয়েছি। এসব বিষয়েই কথাই হয়েছে।
নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়া নিয়ে বৈঠকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে কি না, কিংবা নির্বাচনী সংলাপ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না- এসব প্রশ্নে আসাদুজ্জামান খান বলেন, কোনো ধরনের আশঙ্কা বা এমন কোনো কিছু তারা প্রকাশ করেননি৷ তারা বলেছেন, জাতিসংঘের যেসব অফিসার বাংলাদেশে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করছেন, নির্বাচনকালীন তাদের নিরাপত্তায় কোনো অসুবিধা হবে কি না। তারা সেটা জানতে চেয়েছেন। আমি বলেছি, না, বিদেশিদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে জাতিসংঘকে কী আহ্বান জানানো হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কারণে আমাদের পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কক্সবাজারের স্থানীয়রা এখন মাইনরিটি হয়ে গেছে। সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় হয়ে গেছে। স্থানীয়রা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ মাদক কারবারের সঙ্গেও জড়াচ্ছে। তারা মিয়ানমার থেকে মাদক নিয়ে আসছে।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্ত নিরাপত্তা বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখানে আমাদের বিশাল বর্ডার, সেজন্য বিজিবিকে দুটি হেলিকপ্টার দিয়েছি। কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করেছি। তারপরও দেশে মাদক ঢুকে পড়ছে। যা আমাদের জন্য আতঙ্কের জায়গা। সেখান থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসতে চাই।
বৈঠকের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও সীমান্তকে আরও নিরাপদ করতে বলা হয়েছে। আমরা তাদের এ বিষয়ে তথ্য দিয়েছি। জানিয়েছি, আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করেছি৷ একই সঙ্গে তাদের সহযোগিতাও চেয়েছি। যেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ তারা নেয়।
এমএএস/এমকেআর/এমএস