ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

‘এআই প্রযুক্তিতে’ আগুন শনাক্ত হলে পুড়তো না বঙ্গবাজার-কৃষি মার্কেট

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৪:২৫ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

‘বঙ্গবাজার মার্কেটে প্রায় তিন ঘণ্টা মিট মিট করে আগুন জ্বলেছে। কৃষি মার্কেটেও দেরিতে খবর পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। দুই মার্কেটেই যদি সূত্রপাতের শুরুতেই আগুন শনাক্ত করে নির্বাপণ করা যেতো, তাহলে এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না, পুড়তো না দুটি মার্কেট।’

বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বনানীতে এক হোটেলে দুর্যোগে সহনশীলতা বাড়াতে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ভিত্তিক মডেল প্রদর্শনের জন্য, বেসরকারি খাতের সঙ্গে ‘টেকনোলজি ইন ডিআরএম টুওয়ার্ডস স্মার্ট বাংলাদেশ: অপর্চুনিটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস অব এআইবিএস সলুশন ইন হ্যাজার্ড এনটিসিপেশন’ শীর্ষক একটি অ্যাডভোকেসি ওয়ার্কশপে এ কথা বলেন বক্তারা।

অনুষ্ঠনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন, এআই সিস্টেমে ডিটেক্টর সিস্টেম অবশ্যই উপকারি ও প্রযুক্তিবান্ধব। আমরা কমিউনিটি বান্ধব অনেক কিছুই করি না। কমিউনিটিকে আমাদের উন্নত করতে হবে।

অগ্নিঝুঁকি কমাতে কমিউনিটি বান্ধব ব্যবস্থারের গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ঢাকার প্রত্যেক ভবনে পানির ট্যাংক আছে। সেটার সঙ্গে যদি ফায়ার হাইড্রেন্ট সংযুক্ত করে সড়কে স্থাপন করা হয়, তাহলে অনেক বেশি কার্যকর হবে প্রয়োজন মুহূর্তে।

তিনি বলেন, ম্যানুয়াল দিন শেষ, এখন অটোমেটিক সিস্টেমের যুগ। ড্রোনই এখন অনেক কিছু করতে পারছে। আমাদের দেশে প্রচুর মেধাবী ছেলে-মেয়ে আছে। তাদের আমরা ব্যবহার করতে পারি। নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা-পরিকল্পনা কাজে লাগানো সম্ভব।

এআইকে ইথিক্যালি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, এটা সত্য যে, এআই ভবিষ্যতে বড় ঝুঁকিও তৈরি করছে। অনেকের চাকরি খেয়ে ফেলতে পারে, সাইবার ঝুঁকি তৈরি করছে। আবার এআই'কে যদি সঠিকভাবে আমরা ব্যবহার করতে না পারি, তাহলে এটি আরও ব্যাঘাত করতে পারে। এজন্য সিটি করপোরেশনকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের জাতীয় সমস্যা কিনা! জানি না, যে যার মতো চলছি, সমন্বয় নেই। ভালো আইডিয়া আমরা স্বাগতম জানাই। ইনোভেটিভ আইডিয়া আমরা উৎসাহিত করি।

jagonews24

তিনি কর্মশালায় সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে আগুন শনাক্ত করতে ব্যবহৃত উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির প্রশংসা করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইলেকট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএসএসএবি) যুগ্ম মহাসচিব জাকির উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা চেষ্টা স্বত্ত্বেও সব প্রতিষ্ঠানকে এক ছাতার নিচে আনতে পারিনি। এআই ডিটেক্ট সিস্টেম কোনো রকেট সিস্টেম নয়। চাইলেই সম্ভব এআই পদ্ধতিতে ভূমিকম্প ও অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ বার্তা নিশ্চিত করা।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, তাইওয়ানে এটা চালু হয়েছে। ঢাকায় চীনা সহযোগিতায় বাণিজ্যমেলার যে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, সেটা কিন্তু বিশ্ব সেরা আপডেট টেকনোলজিতে তৈরি করা। এটাও এখন বাংলাদেশে চালু হয়েছে।

তিনি বলেন, কৃষি মার্কেটে আগুন লাগলেও ডিটেক্ট করা সম্ভব হয়নি। কারণ সেখানে ডিটেক্টর ছিল না। এর ক'দিন পরই সেনা কল্যাণ ভবনে আগুন লেগেছিল। কিন্তু সেখানে আগুন খুব দ্রুত শনাক্ত ও নির্বাপণ সম্ভব হয়েছে। কারণ সেখানে প্রাথমিক পর্যায়েই ডিরেক্ট করা সম্ভব হয়েছিল ডিটেক্টর ব্যবস্থার কারণে।

এআই কীভাবে কাজ করে সেটা প্রদর্শন করে কর্মশালায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. খলিলুর রহমান বলেন, আগুন লাগলে এআই সিস্টেমে সংকেত আসবে। যাতে করে অগ্নিনির্বাপণে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

এআই অনেক সময় ফলস সংকেতও দেয়। তবে সেটা গুরুত্বহীন মনে করা যাবে না। সত্যি সত্যিই যদি আগুন লাগে তখন যদি গুরুত্ব না দেওয়া হয় তাহলে বাঘের গল্পের মতো ঘটনা ঘটে যাবে। এআই সিস্টেমকে আরও যুগোপযোগী ও কার্যকরী করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফগার মেশিনের ধোয়া, পাতা পোড়ানো, সিগারেটের আগুনকে এআই সিস্টেমে রিডিউস করা হয়েছে, যাতে ভুল সংকেত না দেয়।

একটা ম্যাপের মধ্যে সব মার্কার থাকবে, কোথায় হোটেল, আবাসিক ভবন, মার্কেট আছে। কোথায় কেমন রাস্তা, কোনো দিক দিয়ে আগুন লাগলে দ্রুত মুভ করা যায় সেটি ম্যাপ সংকেত দেবে। এটি প্রক্রিয়াধীন। কল্যাণপুর বস্তিতে এটার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এজন্য কিন্তু বড় সার্ভার দরকার হবে। পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট রিগ্রেড না থাকলে এআই সফল হবে না। কারণ বিদ্যুত না থাকলে সিসিটিভি, ইন্টারনেটও ভালো কাজ করবে না। সেজন্য ব্যাকআপ বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে অন্তত চার ঘণ্টার।

এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের সুপার প্রকল্পের কনসোর্টিয়াম ম্যানেজার আ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ঢাকা শহরের মতো পৃথিবীর কোথাও নেই। যেখানে ২৫ শতাংশ সড়ক নেই, পার স্কয়ার ফিটে মানুষ বসবাস করে ২০ হাজার মানুষ। ঢাকার জলাশয় কমছে। মাঠ কমছে। চারটা জলাশয় ভরাট করে ভবন করা হয়েছে। পানির সোর্স কমছে। এ শহর অবশ্যই ধ্বংস হবে যদি ৮ ভূমিকম্প হয়ে যায়। দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা তাই বলে। তখন কিন্তু ঢাকা আর ব্যবহারযোগ্য থাকবে না।

তিনি বলেন, এআই প্রযুক্তির বড় সুবিধা হচ্ছে দ্রুত আগুন বা ধোঁয়া শনাক্ত করে জানান দেওয়া। কিন্তু বঙ্গবাজারের আগুন ২-৩ ঘণ্টা ধরে মিট মিট করে জ্বলেছে। একইভাবে কৃষি মার্কেটেও আগুন লাগার অনেক পর খবর পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। আগুনের শুরুতেই যদি শনাক্ত করা যেত তাহলে এতো বড় ক্ষতির মুখোমুখি হতে হতো না। এক্ষেত্রে এআই হবে খুবই কার্যকরী।

কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মফিজুর রহমান। বিভাগীয় প্রধান, (ডিআরএম অ্যান্ড ইআর ইউনিট), ইউনাইটেড পারপাস মাসুদ রানা কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।

ব্যবসায়িক ও শহুরে সম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্যোগে সহনশীলতা গড়ে তোলার জন্য ইউরোপীয় সিভিল প্রোটেকশন অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান এইড অপারেশনসের (ইকো) অর্থায়নে স্ট্রেন্দেনিং আরবান পাবলিক প্রাইভেট প্রোগ্রামিং ফর আর্থকোয়েক অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান এইডের আর্থিক সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে একশন এইড বাংলাদেশ, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), ইউনাইটেড পারপাস এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ।

টিটি/এমএএইচ/জিকেএস