ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

পোশাক কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের ঝুঁকি রয়েই গেছে: সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:২২ এএম, ৩১ আগস্ট ২০২৩

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানিয়েছে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর গত দশ বছরে পোশাক কারখানায় সক্ষমতা এসেছে। কারখানাগুলো কমপ্লায়েন্সে জোর দিয়েছে, দুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কারখানায় দুর্ঘটনা বেড়েছে, যা উদ্বেগ বাড়িয়েছে। কারখানায় নানা সেফটি নেওয়া হলেও বয়লার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ আসেনি। যেসব পোশাক কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণ হয়েছে সেখানে কোনো সংস্থা দিয়ে ইন্সপেকশন করা হয়নি। এতে রানা প্লাজার মতো বড় দুর্ঘটনারও শঙ্কা রয়েছে।

বুধবার (৩০ আগস্ট) রাজধানীতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা: অর্জন ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি এ তথ্য জানায়। সংবাদ সম্মেলনে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিষয়ক দুটি মনিটরিং প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকর্ড সম্প্রতি তিন বছরের জন্য পাকিস্তানের টেক্সটাইল কারখানায় ইন্সপেকশন শুরু করেছে। দেশটিতে ৮ হাজার টেক্সটাইল কারখানা রয়েছে। অ্যাকর্ড সেখানে বয়লার ইন্সপেকশন দিয়েই তাদের ইন্সপেকশন শুরু করেছে। এক্ষেত্রে পাকিস্তান আমাদের চেয়ে বয়লারে এগিয়ে থাকবে। যেখানে আমাদের দেশে কোনো সংস্থায়ই বয়লারে রিপোর্ট করেনি। আবার আমাদের এখানে ছোট-খাট অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। বয়লার বিস্ফোরণে রানা প্লাজার মতো বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও রয়েছে।

তিনি বলেন, যেকোনো অ্যাসোসিয়েশনের মেম্বার না হয়ে কোনো পোশাক কারখানা যেন অপারেশনে না থাকে এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, কোনো কারখানায় যখন কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তখন বিজিএমইএ বা অন্য কোনো সংগঠনের কাছে গেলে তারা এর দায়ভার নিতে চায় না। তারা জানায়, দুর্ঘটনা কবলিত কারখানা আমাদের মেম্বার না। এজন্য অপারেশনে থাকা কারখানাকে অবশ্যই যেকোনো অ্যাসোসিয়েশনের মেম্বার হওয়া উচিৎ। এটা না হলে দুর্ঘটনায় কেউ দায় নেবে না, আবার দুর্ঘটনার শিকার বক্তির ক্ষতিপূরণও আসবে না। কেউ অ্যাসোসিয়েশনের মেম্বার না হলে একটা সময় দিয়ে হলেও তাদের একটা গাইডলাইনে আনতে হবে।

আরও পড়ুন>> ‘টেকসই উন্নয়নে নিরাপদ কর্মপরিবেশের বিকল্প নেই’

তিনি বলেন, অ্যাকর্ড যেভাবে সুনামের সঙ্গে কাজ করেছিল সেভাবেই আবারও ইন্সপেকশন করা জরুরি। অনেক কারখানা ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু অন্যদের চাপে তারা উৎপাদনে রয়েছে। আবার তারা কোনো অ্যাসোসিয়েশনের মেম্বারও না। তারা সাব-কন্ডাক্টসহ রপ্তানিতে সরাসরি আছেন। হয়তো প্রচলিত বাজারে তারা নেই, অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি করছে। এতে অপ্রচলিত বাজারের রপ্তানি সাইজ বড় হচ্ছে। তার মানে রপ্তানি বাড়লেই শুধু হবে না, কারখানার সেফটিও রাখতে হবে। তাদের সেফটি না আসা পর্যন্ত বন্ধ করা দরকার। তবে আপাতত রপ্তানি থাকলেও সেফটি না থাকলে তাদের ধীরে ধীরে বন্ধ করতে হবে।

সিপিড জানায়, ২০২৩ সালে রানা প্লাজা ধসের ১০ বছর পূর্ণ হয়েছে। এই বিপর্যয়পরবর্তী এক দশকে বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্স গঠন এবং তাদের পরিচালিত কার্যক্রম কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা তদারকির ক্ষেত্রে শক্তিশালী দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। এর মধ্যে, বাংলাদেশে পরিচালিত কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অ্যাকর্ড আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাকিস্তানসহ অন্যান্য পোশাক সরবরাহকারী দেশগুলোতে প্রোগ্রামটি পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা তদারকিতে এই বিশেষ অগ্রগতির পরও অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ থেকে চলে যাওয়ার পরে নতুন উদ্যোগগুলোর অর্জন ধরে রাখার ক্ষেত্রে অনিশ্চিয়তা রয়ে গেছে। এই দুই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত দিকনির্দেশনাগুলো তদারকির দায়িত্বে থাকা দেশীয় সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তা ধারাবাহিকভাবে পালন করছে কি না? বিশেষত, সম্প্রতি দেশে পোশাক শিল্পের কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা কিছুটা বেড়ে যাওয়ার পর নিরাপত্তা তদারকির বর্তমান প্রক্রিয়াকে নতুন করে পর্যালোচনা করা বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে।

এ প্রেক্ষাপটে সিপিডি ২০২৩ সালে ‘সিভিল সোসাইটি মনিটরিং অন অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ’ কার্যক্রম চালু করে, যা ২০১৪ সালে রানা প্লাজার ঘটনার পর গৃহীত কার্যক্রমের ধারাবাহিক উদ্যোগ। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটানা তদারকির দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা সম্পর্কে উন্মুক্ত এবং স্বাধীন পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করা। এ পর্যন্ত এ উদ্যোগের আওতায় দুটি প্রতিবেদন প্রস্তুত ও প্রকাশ করা হয়েছে। আজ (বুধবার) তৃতীয় প্রতিবেদন করা হচ্ছে।

ইএআর/ইএ/এএসএম