ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

আশঙ্কা কিশোরীর

প্রভাব খাটিয়ে বড় মনি ডিএনএ রিপোর্ট পরিবর্তন করতে পারেন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০২:১৫ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০২৩

টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য ছোট মনি’র বড় ভাই গোলাম কিবরিয়া বড় মনি-এর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে এক কিশোরী বলেছে, ধর্ষণের মামলা করার পর থেকেই তাকে নানান ভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এখন সন্তানের পরিচয় নিশ্চিত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু বড় মনি প্রভাব খাটিয়ে এই ডিএনএ রিপোর্ট পরিবর্তন করে ফেলতে পারেন বলে আশঙ্কা করছি।

এই কিশোরী বলেন, তারা (বড় মনি, ছোট মনি) আমাকে বিভিন্ন প্রলোভন ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। আমাকে ফ্ল্যাট, টাকা দিতে চাচ্ছেন। এখন বড় মনির যদি আমাকে বিয়ে করতে চায়, আমি তাতেও রাজি না। আমি শুধু আমার সন্তানের অধিকার চাই এবং তারা যাতে প্রভাব খাটিয়ে ডিএনএ রিপোর্ট পরিবর্তন করতে না পারেন সেটি চাই।

সোমবার (২৮ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তার পাশে তার এক ফুপু এবং কিশোরীর শিশু সন্তান ছিল।

সে বলে, আমার বাবা-মা কেউ না থাকায় আমি অসহায়ের মতো জীবনযাপন করেছি। আমার মামলার বিবাদী বড় মনির আমার আত্মীয় হওয়ায় পূর্বপরিচিত। বিবাদী বড় মনিকে আমার ও আমার ভাইয়ের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা বললে বড় মনি আমাকে সমস্যা সমাধান করে দেবে বলে তার বাসায় ডেকে নিয়ে সুকৌশলে ধর্ষণ করে এবং আমার বিভিন্ন রকমের ছবি তোলে। ধর্ষণ শেষে আসামি আমাকে ঘটনার বিষয় কারও কাছে প্রকাশ করতে নিষেধ করে এবং প্রকাশ করলে আমাকে জানে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়।

আরও পড়ুন: টাঙ্গাইলের বড় মনির ও তার স্ত্রীর জামিন আপিলেও স্থগিত

সে আরও বলে, দু-একদিন পরপর বড় মনি আমাকে একই কায়দায় ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। আমার ছবি দেখিয়ে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করে। প্রতিনিয়ত ধর্ষণের ফলে আমি গর্ভবতী হই। এ ঘটনা বিবাদীকে বললে আমাকে গর্ভের বাচ্চা নষ্ট করার জন্য চাপ ও হুমকি দিতে থাকে। পরবর্তী সময়ে বড় মনি গর্ভের বাচ্চার বিষয়ে অস্বীকার করে জোরপূর্বক তার শ্বশুরের বাসায় আমাকে উঠিয়ে নিয়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে।

কিশোরী আরও বলে, আমি মামলা করার জন্য টাঙ্গাইল সদর থানায় গেলে থানা পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে রাজি হয়নি। আমি দুপুর ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বসে থাকার পরেও মামলা নেয়নি। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যেমে প্রচার হওয়ার পরে থানা পুলিশ মামলা নিতে বাধ্য হয়।

সে অভিযোগ করে জানায়, পুলিশ আসামিকে গ্রেফতার করেনি। মামলা রেকর্ড হওয়ার পরও আসামি প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করেছে। এমনকি তিনি থানা পুলিশের সঙ্গেও প্রকাশ্যে ঘুরেছেন। পুলিশ আমাকে সহযোগিতার বদলে বিভিন্ন সময় হয়রানি করেছে। আসামি আদালতে হাজিরা দিতে গেলে আদালত আসামিকে জেল হাজতে পাঠান।

সে বলে, বড় মনি জেলহাজতে যাওয়ার পর থেকে অসুস্থতা দেখিয়ে টাঙ্গাইলের একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আসামির ডিএনএ পরীক্ষার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন তিনি ডিএনএ স্যাম্পল দিতে গড়িমসি করেন। গত ২১ আগস্ট হাইকোর্টের আদেশে আসামি ডিএনএ স্যাম্পল দিতে বাধ্য হন।

সে আরও বলে, আসামি ও আমার প্রায় দুই মাস বয়সের বাচ্চার ডিএনএ পরীক্ষার সময় সিআইডির কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা দ্বারা অসৌজন্যমূলক আচরণের শিকার হই। আমি ভিকটিম হয়েও তাদের আচরণে মনে হয়েছে আমি একজন আসামি।

কিশোরী বলে, দীর্ঘদিন আগে আমি ও আমার ভাইয়ের সম্পত্তির বিষয়ে ঝামেলা হওয়ার কারণে গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরের শরণাপন্ন হই। বড় মনি প্রথম অবস্থায় আমাকে তৎকালীন টাঙ্গাইলের নারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী নুসরাত এদীব লুনার কাছে পাঠান। তখনই আমি দেখেছিলাম ছোট মনি ও বড় মনি’র সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

সে বলে, নারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী নুসরাত এদীব লুনার স্বামী তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মিনহাজুল ইসলাম। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মিনহাজুল ইসলামের আপন বড় ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের ক্যাডার থাকার কারণে মুহাম্মদ মিনহাজুল ইসলাম ও কাজী নুসরাত এদীব লুনার পদোন্নতি বন্ধ হয়েছিল। বড় মনি ও ছোট মনি’র এক পাওয়াফুল মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা থাকায় বড় মনি ও ছোট মনি’র সুপারিশে মুহাম্মদ মিনহাজুল ইসলাম ও কাজী নুসরাত এদীব লুনাকে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

সে আরও বলে, এ বিষয়কে কেন্দ্র করে গোলাম কিবরিয়া বড় মনি ও ছোট মনি’র সঙ্গে নারী পুলিশ সুপার কাজী নুসরাত এদীব লুনা ও মুহাম্মদ মিনহাজুল ইসলামের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম বর্তমানে সিআইডি, ঢাকায় কর্মরত। আমি লোকমুখে শুনি, এ মামলার ডিএনএ পরীক্ষার ফল পরিবর্তন করতে আসামিদের কোনো পেরেশানি হবে না। পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম ডিএনএ পরিবর্তন করতে আসামিদের পক্ষে সহযোগিতা করবেন। এমন কি ডিএনএ পরীক্ষা হলে পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলামকে ম্যানেজ করে ক্ষমতাবান, প্রভাবশালীদের দিয়ে ডিএনএ পরীক্ষার রেজাল্ট পরিবর্তন করাবেন।

কিশোরী বলে, আমি যাতে ডিএনএ স্যাম্পল দিতে না যাই, সে জন্য এক কোটি টাকা ও একটি ফ্ল্যাট দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় বড় মনি’র পক্ষ থেকে। আমি টাকা চাই না। আমি আমার বাচ্চার অধিকার চাই। ডিএনএ স্যাম্পল পরিবর্তন করার জন্য প্রভাবশালী মহলে যে পরিমাণ টাকা বড় মনি’র পক্ষ থেকে অফার করেছে তাতে আমি ডিএনএ পরীক্ষা ও মামলার সুষ্ঠু তদন্তের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করছি।

সে আরও বলে, টাঙ্গাইলে ছোট মনি ও বড় মনি’র পক্ষের কিছু আওয়ামী লীগের নেতা আমাকে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে বিদেশে স্থানান্তরসহ সারাজীবনের দায়িত্ব নিতে চেয়েছেন।

সে অভিযোগ করে জানায়, মামলা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য আমাকে এক ছাত্রলীগ নেতা হুমকি দিয়েছেন। বড় মনি’র স্ত্রী আমার মামলার দ্বিতীয় আসামি আমাকে ফোন করে নানান রকম হুমকি দেয়। আমাকে চারপাশে থেকে লোকজন নজরবন্দি করে রাখে, আমি আমার শিশুপুত্রকে নিয়ে কোথাও যেতে পারি না। আমি স্বাভাবিক জীবন থেকে বঞ্চিত। বড় মনি’র সঙ্গে রাজনীতি করে এমন কিছু লোকজন রাত ১২টার পর আমাকে মাঝে মধ্যে ফোন দিতে থাকে। আমার আত্মীয়স্বজন দ্বারা আমাকে এ মামলা মিমাংসায় আসার জন্য চাপ প্রয়োগ করে।

ওই কিশোরী আরও বলে, ধর্ষণ মামলা হওয়ার পর থেকে পুলিশের কোনো সহযোগিতা পাইনি। উল্টো অনেক সময় পুলিশ দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছি। আমি ডিএনএ স্যাম্পল দিয়ে আসার পর থেকে লক্ষ্য করি কিছু লোক আমাকে ফলো করে এবং আমার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থাকে। এ বিষয়ে আমি ৯৯৯ জাতীয় জরুরি সেবায় অভিযোগ দেই। সেখান থেকে পুলিশি সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে টাঙ্গাইল সদর থানায় যোগাযোগ করানো হয়। সেখানেও আমি থানা পুলিশের নিস্ক্রিয় ভূমিকার সম্মুখীন হই।

সে বলে, পরদিন নিজের জীবন হুমকির মুখে ফেলে থানায় যাই এবং তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সবকিছু জানাই। পিবিআইকে জানাই। কিন্তু আমাকে নানানভাবে বিভ্রান্ত করে কোনো অভিযোগ থানায় নেয়নি। আমাকে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং আমি আমার মামলার আইও-কে এ বিষয়ে জানাই, কিন্তু তাদের কোনো পদক্ষেপ বা ভূমিকা পাইনি।

এখন আপনি কী চান, বড় মনি আপনাকে বিয়ে করতে চাইলে আপনি রাজি কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, না, আমি বিয়ে করতে রাজি না। আমি আমার সন্তানের অধিকার চাই, স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চাই। আসামির শাস্তি চাই। টাকা দিয়ে যাতে ডিএনএ রিপোর্ট পরিবর্তন এবং মামলা ধাপাচাপা দিতে না পারে, সেটিই চাই। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।

এমএএস/এমএইচআর/জেআইএম